২২ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:৩৫

তাপদাহে কাবু চিড়িয়াখানার প্রাণীরাও

টানা তাপদাহে প্রাণ রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টায় চিড়িয়াখানার প্রাণীরা। রোদের খরতাপে হাঁসফাঁস বেশির ভাগ প্রাণীর এখন সময় কাটছে পানিতেই। তীব্র খরতাপে পাখিদের মধ্যেও বেড়েছে চরম অস্বস্তি। টানা তাপদাহের কারণে অনেক প্রাণীরই দেখা দিচ্ছে পানিশূন্যতা। এতে স্বাভাবিক আচরণগত পরিবর্তনও দেখা দিচ্ছে। খাবার গ্রহণে দেখা দিচ্ছে অনীহাও। অনেক প্রাণী গরমে শুধু হাঁপাচ্ছে।

টানা সময় ধরে ভয়াবহ গরমের কারণে এসব প্রাণী নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ভাপসা গরমে প্রাণিকুলকে স্বস্তি দিতে প্রতিদিন প্রয়োজন হচ্ছে বাড়তি পানি সরবরাহের। প্রতিদিনের খাবার তালিকায়ও আনতে হচ্ছে ভিন্নতা। গরমে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে দেয়া হচ্ছে বাড়তি স্যালাইন ও ভিটামিন সি। অনেক প্রাণীকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করতে দেয়া হচ্ছে তরল খাবারও। কোনো প্রাণী আবার গরম সহ্য করতে না পেরে শারীরিকভাবে দুর্বল বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি না সেটি তদারক করতে বাড়ানো হয়েছে মনিটরিং ব্যবস্থা।

চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থীরা জানান, তীব্র গরমে অতিষ্ঠ বাঘসহ সব প্রাণী। ফলে কেউ ঝাঁপ দিচ্ছে পানিতে। কেউবা আশ্রয় নিচ্ছে গাছের ছায়ায়। তবুও যেন রক্ষা নেই। গরমে দিশেহারা জলহস্তী পানিতে ডুবে পড়ে আছে। একটু প্রশান্তির জন্য বাঘকে দেখা গেছে কিছুক্ষণ পরপর পানিতে নামতে। অস্থির হয়ে ছোটাছুটি করছে গুইসাপ। হরিণগুলো গাছের ছায়ায় জড়ো হয়েছে। পিপাসায় কাতর শালিক পানি পানে ব্যস্ত।

রোদ থেকে বাঁচতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়া চিত্রা হরিণগুলো কিছুক্ষণ পরপর পানির হাউজ থেকে পানি পান করছে। কিছু হরিণ পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নালায় চুমুক দিচ্ছে পানির জন্য। হাতি পড়েছে সবচেয়ে বিপাকে। তার বিশাল দেহটি ডুবিয়ে রাখারও উপায় নেই। তাই শুঁড় দিয়ে পানি নিয়ে নিজের শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছে। প্রাণ রক্ষায় এভাবেই ছোটোছুটি করছে চিড়িয়াখানায় থাকা বন্দী প্রাণীরা।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি প্রাণী আছে। গরমের তীব্রতা থেকে প্রাণীদের সুস্থ রাখতে রুটিন-মাফিক পরিচর্যা করা হচ্ছে। প্রাণীদের স্বস্তি দিতে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা। পানিশূন্যতায় ভুগতে থাকা প্রাণীদের দেয়া হচ্ছে তরল খাবার। বদলে দেয়া হয়েছে খাবারের তালিকাও।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পুষ্টি বিভাগের উপ পরিচালক জানান, গরমে হাঁসফাঁস করা চিড়িয়াখানার প্রাণীরা পাচ্ছে ইলেক্ট্রোলাইট বা স্যালাইন-যুক্ত তরল ও রসালো খাবার। আর পরিচালক ডা: রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, গরম থেকে বাঁচতে পাখির খাঁচার ছাদে দেয়া হয়েছে তালপাতার ছাউনি। ২৪ ঘণ্টা চৌবাচ্চায় পানিপ্রবাহ রাখা হয়েছে। রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাণীদের খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন করে যেসব ফলমূলে পানি থাকে যেমন তরমুজ, বাঙ্গি, শসা ও ক্ষীরা প্রাণীদের এ জাতীয় খাবার দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাঘ-সিংহ গরম সহ্য করতে পারে না। এই প্রাণীগুলোর জন্য আমরা প্রাকৃতিকভাবে পানির ব্যবস্থা করেছি। চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার সাথে একটি ন্যাচারাল ফোয়ারা আছে। বাঘ দু’টি এই ফোয়ারার পানিতে নেমে গোসল করে। অন্য শেডের ভেতরে বড় হাউজে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চিড়িয়াখানার কিউরেটর জানান, অতিরিক্ত গরমে মাংসাশী ও নানা প্রজাতির পশুপাখির বেশি সমস্যা হয়। তার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা আগে থেকেই রাখা হয়েছে। খাঁচার হাউজের পাশাপাশি বালতি ও গামলায় করে কিছুক্ষণ পরপর সাধারণ তাপমাত্রার পানি দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে দেয়া হচ্ছে ভিটামিন সি ও স্যালাইন। এখন পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় কোনো পশুপাখি অসুস্থ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো পশুপাখি মারাও যায়নি। অতিরিক্ত গরমে পশুপাখিদের যতেœর প্রতি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মাংসাশী প্রাণী ও পাখিদের বেশি সমস্যা হয়। এ সময় এসব প্রাণী ও পাখিদের বাড়তি যতœ নেয়া হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/829604