২২ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:৩৪

মরু হাওয়ার উত্তাপ

তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপর : ছড়াচ্ছে রোগব্যাধি

মরুভূমির হাওয়ার মতো তীব্র উত্তাপ দেশের সর্বত্র। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। তৃষ্ণার্ত মানুষ বারবার পানির কাছে ছুটে যাচ্ছে। অসহ্য খরায় পানি পানের চাহিদা যেমন বেড়ে গেছে, তেমনি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সময় কাটানোর প্রবণতাও বেড়েছে। সার্বিকভাবে আগের দিনের চেয়ে গতকাল রোববার তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গরমের অনুভূতি কমেনি। আবহাওয়া অফিস বলছে, গরমের অনুভূতি সেই ৪৪ থেকে ৪৬ ডিগ্রির মধ্যেই রয়ে গেছে। কয়েক দিন ধরে পরিবেশ অব্যাহতভাবে তাপ শোষণ করছে এবং সারা রাতেও ঠাণ্ডা হতে পারছে না বরং পরের দিন সকাল থেকে প্রকৃতি আবার নতুন করে গরম হয়ে যাচ্ছে। গ্রীষ্মের এই সময়ে সূর্য থেকে বাংলাদেশের বেশির ভাগ স্থান সর্বোচ্চ কিরণ পেয়ে থাকে। আবহাওয়া অফিস বলছে, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে। বড় ধরনের বৃষ্টিপাত না হলে শিগগিরই অসহনীয় এ গরম কমবে না। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ সময় আবার পশ্চিমবঙ্গের কাছে একটি স্থল লঘুচাপ গরমের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

পানিতে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা হতে শহরে এর সুযোগ সীমিত থাকলেও গ্রামের নদীনালাতে প্রচুর মানুষ বিশেষ করে শিশুরা দীর্ঘ সময় সাঁতরে বেড়াচ্ছে। একটু ঠাণ্ডায় শরীর জুড়াতে চিড়িয়াখানার প্রাণীদেরও খাঁচার সামনের ছোট চৌবাচ্চায় সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে। তবে আবহাওয়া অফিস আশার কথা শুনিয়েছে। তারা বলেছে, আজ সোমবার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের তাপমাত্রা কিছুটা কমবে কিন্তু অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। অতি তীব্র তাপমাত্রা বিরাজ করছে খুলনা বিভাগে কিছু অঞ্চলে। অন্যত্র মাঝারি থেকে তীব্র তাপমাত্রায় হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২ রেকর্ড করা হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে গত শনিবারের চেয়ে গতকাল তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গরমের অনুভূতি আগের মতোই অটুট ছিল।

ঢাকা শহরে শনিবার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠে গেলে গতকাল রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকা শহরে সবুজ বনানী কম বলে এখানে সামান্য তাপমাত্রাতেই তীব্র গরমের অনুভূতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই শহরে পিচ ঢালা পথ, কয়েক লাখ দালানকোঠা সূর্যের তাপ শোষণ করছে কিন্তু রাতে তা ছেড়ে দিয়ে শেষ করার আগেই সকাল হয়ে যাচ্ছে এবং আবারো প্রচণ্ড সূর্যকিরণ শোষণ করে উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে এখানে তীব্র গরমের অনুভূতি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো খুলনা বিভাগের জেলাগুলো, রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো এবং ঢাকা বিভাগের জেলাগুলো। অন্য দিকে সহনীয় তাপমাত্রায় অবস্থান করছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলো। গতকাল দিনের বেলা সিলেট বিভাগে সামান্য বৃষ্টিও হয়ে গেছে, ফলে সেখানকার তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয়। সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। এ ছাড়া রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। শ্রীমঙ্গল ও চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশে এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দিনের তাপমাত্রা কিছু হ্রাস পাবে আজ সোমবার; তবে রাতের তাপমাত্রা আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে মানুষের মধ্যে চরম অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে। গরমে ঘেমে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হতে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, বেশি ঘাম হলে শরীরে পানি শূন্যতার সৃষ্টি হতে পারে। হঠাৎ করে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যেতে পারে। প্রচুর ঘাম হলে সাথে সাথে প্রচুর পানি পান করে সেই ঘাটতি পূরণ করে নিতে হবে। শরীর বেশি দুর্বল হয়ে গেলে ঠিক আধা লিটারের পানির বোতলে একটি খাবার স্যালাইন গুলিয়ে পান করতে হবে। স্যালাইন পানের কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীর সতেজ হয়ে উঠবে। তবে স্যালাইন গুলাতে পানি ও স্যালাইনের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। কারণ একটি খাবার স্যালাইনে সেই পরিমাণ উপাদান থাকে যা আধা লিটার পানির জন্য প্রয়োজ্য। কম বেশি হলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি লবণ ও চিনির সরবরাহ ঠিক থাকলে ঘনঘন পাতলা পায়খানা হলেও তা ডায়রিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে দুর্বল করতে পারবে না।

আবহাওয়া অফিস আরো জানিয়েছে, দেশে বিরাজমান বর্তমান তাপপ্রবাহ আগামী পাঁচ দিনের মধ্যেও কমার কোনো পূর্বাভাস নেই। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ২০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঈশ্বরদী সংবাদদাত জানান, ঈশ্বরদীতে সপ্তাহজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। এ তাপমাত্রা দেশের সর্বোচ্চ হচ্ছে কোনো দিন ঈশ্বরদী কোনো দিন চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল ঈশ্বরদীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। তবে চলতি মৌসুমের ঈশ্বরদীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল ঈশ্বরদী আবহাওয়া অধিদফতরে।

চৈত্রের কাঠফাটা রোদের পর বৈশাখের শুরুতে তীব্র তাপদাহ চলছে প্রকৃতিতে। এ দিকে সপ্তাহজুড়ে ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপদাহ। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা বিরাজ করছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। প্রয়োজন মতো সেচ দিতে না পারায় জমি ফেটে চৌচির হচ্ছে। ঝরে যাচ্ছে মৌসুমি ফল বিশেষ করে আম, লিচু ও বাদাম।

এ দিকে তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে- জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ হচ্ছে রোগীর সিরিয়াল। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন জানান, গতকাল বেলা ৩টায় এ মৌসুমে ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ ৪২.০০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় চলতি মওসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল বেলা ৩টায় বগুড়া আবহাওয়া অফিস এ তাপমাত্রা রেকর্ড করে।

বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানায়, কয়েক দিন ধরেই বগুড়ার ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা বাড়ছে। গত তিন দিন আগে অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার বগুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্র ও শনিবার তাপমাত্রা বেড়ে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। গতকাল রোববার তাপমাত্রা আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এ দিকে প্রচণ্ড গরমে নাকাল হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন। শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে যাত্রী বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন রিকশাচালকরা। সূর্যের তাপ এতই বেশি যে, খোলা আকাশের নিচে হাঁটলেও গরম বাতাস লাগছে চোখেমুখে। যাত্রাপথে মাথায় ক্যাপ বা টুপি ও ছাতা মাথায় দিয়ে তাপ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন অনেকে।

এ দিকে তাপপ্রবাহের কারণে বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।

পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী) থেকে সংবাদদাতা জানান, দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি হতে পারে। এমনই তথ্য দেন আবহাওয়া অধিদফতর।

এমন অবস্থায় কড়া রোদ, উষ্ণ বাতাস আর তীব্র তাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার জনজীবন। বিশেষ করে যারা জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তীব্র তাবদাহের। বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে রোদ-গরম উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

উপজেলার তুলাতুলি স্লুইস ঘাটে শ্রমিক সোহেল বলেন, এমন রোদ আর গরম জীবনে দেখিনি। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে কয়েক লিটার পানি খাইছি। একটু কাজ করি আবার ছায়ায় বসি। প্রচণ্ড রোদের ভেতর আমাদের কাজ করতে হয়। ঘরে বসে থাকলে তো না খেয়ে মরে যাব। তাই গরমে আমাদের ঘর থেকে বের হতে হয়, কিছুই করার নাই। এখন একটু বৃষ্টি দরকার না হলে এই গরমে আমরা মরে যাব।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ঘরে ঘরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত নারী শিশু
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, প্রচণ্ড তাপে পড়ছে সারা দেশ। কমছেই না অস্বস্তিকর গরম। মাঝে মধ্যে গায়ে বাতাস লাগলেও তা যেন আগুনের হলকা, হাঁসফাঁস জীবন। তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। ত্রিপলের ছাউনিতে ছোট্ট ঘরে তাদের কষ্টের কোনো শেষ নেই। উখিয়ার স্থানীয়রা গরমে অনেকেই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিতে পারে কিন্তু রোহিঙ্গাদের তারও কোনো সুযোগ থাকে না। ক্যাম্পে নেই গাছপালা। থাকার জন্য সেখানে পর্যাপ্ত ফ্যান নেই। নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা এই গরমে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাতাসের আর্দ্রতা। ঘর থেকে বের হলেই পুড়ে যাচ্ছে শরীর। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। তবে জীবিকার তাগিদে বের হয়ে চরম বিপাকে খেটে-খাওয়া মানুষ। প্রচণ্ড গরমে উখিয়ায় হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। অসুস্থ হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। ডাক্তাররা বলছেন বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হতে। বেশি বেশি পানি পান করতে। সুতি কাপড় পরিধান করার পাশাপাশি শিশু বয়স্ক ও গর্ভবতী মাদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। তীব্র গরমে প্রতিদিনই গড়ে অর্ধশত শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। সরেজমিন উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও কোটবাজার অরিয়ন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে বেশির ভাগ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ফাহিয়া ফারহা নিশি বলেন, আজ চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে অরিয়ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার মতো অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন। সর্দি-কাশি জ্বর নিয়ে এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন রোহিঙ্গা শিশু নুর কায়দাকে। তার পিতা আব্দুল্লাহ বলেন, বৃদ্ধ মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম পাঠিয়েছি ছোট ভাইকে দিয়ে। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে দুই দিন ধরে অবস্থান করছি। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। ডাক্তার মোহাম্মদ আয়াজ বলেন, ডায়রিয়া হলে ভয় পাওয়ার কিছুই নাই। কেবল যদি অতি মাত্রায় পানি শূন্যতা হয় সেক্ষেত্রে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিলে দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ।

৩ হাজার রোগী ভর্তি
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া ও হিটস্ট্রোকসহ নানা রোগবালাই। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ এর অধিক রোগী। গত শুক্রবার ৭০৭ জন এবং গত শনিবার ৬৬৯ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার পর্যন্ত কাগজে কলমে দুই হাজারের অধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন।

সূত্র জানায়, গত ১৮ এপ্রিল ৬৭৮ জন, ১৯ এপ্রিল ৬৭৯ জন ও ২০ এপ্রিল ৭০৭ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। যা শয্যার বিপরীতে ভর্তির সংখ্যা চার গুণের বেশি। ২৫৯ শয্যার এই হাসপাতালে মেডিসিন, ডায়রিয়া, গাইনি ও শিশু ওয়ার্ডসহ ১২টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা ২৪টি। এই ১২টি ওয়ার্ডের ২৫০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছেন তিন সহস্রাধিক।

হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী গত ছয় দিনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে তিন হাজার ১৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুল মজিদ বলেন, উপজেলা হাসপাতালগুলোতে কোনো চিকিৎসা হয় না। একটা কিছু হলেই রেফার্ড করেন। তাই জেলা হাসপাতালে মানুষের উপচে পড়া ভিড় হয়। তিনি বলেন, জেলার ২৬ লাখ মানুষের শেষ ভরসা জামালপুরের এই জেনারেল হাসপাতালে নাকি মাত্র আড়াই শ’ সিট। এত মানুষের জন্য মাত্র এই কয়ডা সিট! তাইলে মাটি থাকপনা কই থাকপ।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: মাহফুজুর রহমান বলেন, তীব্র তাপদাহের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসাসেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

কাঁঠালিয়ায় হিটস্ট্রোকে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম আউরা গ্রামের মো: আফজাল হোসেন তালুকদার (৪০) নামে এক ডেকোরেটার ব্যবসায়ী হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন।

নিহতের চাচাতো ভাই মো: নুরনবী তালুকদার বলেন, গত শনিবার রাত ৭টার দিকে অতিরিক্ত ভ্যাপসা গরমে আফজাল হোসেন হিটস্ট্রোক করে রাত ৮টা ৩০ মিনিটের সময় ইন্তেকাল করেন। স্থানীয় ডা: দিলিপ চন্দ্র হাওলাদার হিটস্ট্রোকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত মো: আফজাল হোসেন তালুকদার পশ্চিম আউরা গ্রামের মৃত মো: আনোয়ার হোসেন তালুকদারের ছেলে। তিনি কাঁঠালিয়া শহরে ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ছিলেন।

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, মাত্রাতিরিক্ত তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার জনজীবন। তবুও জীবিকার তাগিদে তীব্র রোদে কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। অন্যদিকে ফসলি জমিতে পানিসঙ্কট ঠেকাতে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। একটু স্বস্তির আশায় পানিতে শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছেন মাঠে কাজ করা মানুষ। টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার এবং গতকাল রোববার টাঙ্গাইলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
(২১ এপ্রিল) রোববার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অতিরিক্ত গরমে একটু প্রশান্তির আশায় মানুষ গাছের ছায়ায় কিংবা শীতল কোনো স্থানে বসে বা শুয়ে রয়েছে। গরমের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে শিশুরাও পুকুর কিংবা শ্যালো মেশিনের পানিতেই দিনের বেশির ভাগ সময় পার করছে। উপজেলার শহরগোপীনপুর এলাকার কৃষক হারুন মিয়া বলেন, এই রোদে ধানের জমিতে সকালে পানি দিলে বিকেলে ধানক্ষেত শুকনা থাকে। রোদে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকায় এই দুর্ভোগ বেড়েছে আরো কয়েক গুণ।

গরমে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ ও শ্রমজীবীরা। এমন পরিস্থিতিতে বেশি করে বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও তরল খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

মুরাদনগর (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় লাগাতার তাপপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জনজীবন। নাজুক হয়ে পড়ছে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম। তীব্র রোদ আর তাপদাহে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন উপজলোবাসী। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। এ অবস্থায় বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা।
রিকশাচালক মতিন মিয়া বলেন, গরমের কারণে রিকশা চালাতে বেশ কষ্ট হলেও চালাতে হবে। রিকশা না চালালে ছেলেমেয়ে নিয়া খামু কী। কৃষক লিটন মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরমে আমাদের জীবন বিপর্যস্ত, তারপরও কিছুই করার নাই। খেতে হলে মাঠে কাজ করতে হবে। উপজেলা সদরের রাস্তার পাশে শরবত বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, গরমে আগের চেয়ে শরবত বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে রোদের অতিরিক্ত তাপের কারণে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে কম। মানুষ থাকলে বিক্রি আরো বেশি হতো।

ধামরাই (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, ধামরাই উপজেলায় বেশ কয়েক দিন ধরে তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খেটে খাওয়া মানুষ ও শ্রমজীবীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমে ও তাপদাহ থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষ ছুটে যাচ্ছে গাছের ছায়ায়, নদীর ধারে পুকুরের ধারে একটু স্বস্তির প্রশান্তি পাওয়ার জন্য। গরমের কারণে ছোট ও বয়স্করা অসুস্থ বোধ করছেন। এছাড়া রাস্তাঘাটে ঠাণ্ডা পানির শরবত পান করছে প্রাণ জুড়ানোর জন্য। এখন কোমল পানি ও আইসক্রিম দেদার বিক্রি হচ্ছে। খাঁখাঁ রোদে মানুষ এখন হাঁপিয়ে উঠছে ।

মেহেরপুর, সিলেট ও নরসিংদীতে তিনজনের মৃত্যু : প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁসের মধ্যে গতকাল রোববার মেহেরপুর, সিলেট ও নরসিংদীতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানায় স্থানীয়রা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/829629