১ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১১:৪৯

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রশ্নে অবাক করার মতো নীরবতায় পশ্চিমা দেশগুলো

২৮ ফেব্রুয়ারি, পার্সটুডে : জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইয়াংহি লি রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর তিনি এ অভিযোগ করেন।

লি বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে পরিমাণ নির্যাতনের কথা এতদিন ধারণা করা হয়েছিল বাস্তব অবস্থা তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ। জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নারীদের ওপর গণধর্ষণ চালিয়েছে, মুসলিম নারী ও পুরুষদের গলা কেটে হত্যা করেছে এবং জ্বলন্ত ঘরবাড়ির ভেতর শিশুদের ছুঁড়ে ফেলে তাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে।

ইয়াংহি লি’র বর্ণনায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর যে লোমহর্ষক নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে তাতে মানবাধিকারের কথিত রক্ষকদের গা শিউরে ওঠার কথা। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে আশ্চর্যরকম নীরবতা পালন করছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আসলে ১৯৬২ সালে ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ শুরু করে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের পুরনো নাম আরাকান। সবুজ-শ্যামল ও উর্বর এই ভূমিতে শত শত বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বসবাস করে এসেছে। খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতকে আরাকান অঞ্চলে ইসলাম প্রবেশ করার পর রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এই শান্তির ধর্ম গ্রহণ করে। আরাকান রাজ্যে সে সময় ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুসলিম রাজবংশ এখানে ৩৫০ বছর ধরে রাজত্ব করে। সে সময় এ রাজ্যে ইসলামি মুদ্রা চালু ছিল যার উপরে তৌহিদের বাণী অঙ্কিত ছিল।

সামরিক শাসকরা ক্ষমতা গ্রহণের পর রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে রাখাইন প্রদেশ থেকে বের করে দেয়ার লক্ষ্যে তাদের গায়ে ‘বাঙালি অভিবাসী’র তকমা লাগিয়ে দেয়।

যদিও উপনিবেশবাদী শাসনামলে ব্রিটিশদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উপমহাদেশের কিছু মানুষ তৎকালীন আরাকান প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছিল; কিন্তু তার মানে এই নয় যে, রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাইরে থেকে এখানে এসে অবৈধভাবে বসবাস করছে।

১৯৮২ সালে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও গণহত্যার মাত্রা বেড়ে যায়। এ সময় হাজার হাজার মুসলমান বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী চায় রাখাইন প্রদেশে থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের পুরোপুরি নির্মূল করে ফেলতে। আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতার সুযোগে মিয়ানমার সরকার এ ব্যাপারে পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করছে।

কাজেই জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি রোহিঙ্গা নির্যাতনের যে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে তা আসলে প্রকৃত ঘটনার অতি সামান্য অংশ মাত্র। একটি জাতিগোষ্ঠীকে যখন সেই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে এভাবে নির্মূল করে ফেলা হচ্ছে তখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কেবল বিবৃতি ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছে। কিন্তু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার উচিত শুধু হুমকি নয় বাস্তবে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।