২৫ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৪৩

তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন

বছরে গড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ নদীভাঙ্গনে সর্বসান্ত হচ্ছে-আইপিসিসি

বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় এবার বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। নদী গিলে খাচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, বাঁশঝাড়, বাগান, কবরস্থান, রাস্তা-ঘাট, স্কুল, মাদরাসাসহ পাকা-আধাপাকা স্থাপনা। সব হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ।

কুড়িগ্রামে তিস্তার তীব্র ভাঙনে নি:স্ব হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। জামালপুরে যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র টানা দুই সপ্তাহের ধীরগতির ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক ঘর-বাড়ি ও শত একর ফসলি জমি। এছাড়াও ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে স্কুল, হাট-বাজারসহ শত শত বসত ভিটা। ফরিদপুরে পদ্মার ভাঙনে কয়েক শত বিঘা ফসলি জমি বিলিন হয়ে গেছে। লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষ্। পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীর তীব্র ভাঙনে কয়েকশ একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। রংপুরের ৩ উপজেলায় তিস্তার ভাঙ্গন তীব্র। নদীর ভাঙ্গনে এরই মধ্যে বসতভিটা, ফসলি জমি ও রাস্তাাঘাট বিলীন হয়ে গেছে। চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই।

নদীমাতৃক এ দেশের এক বড় সমস্যা নদীভাঙন। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অভ্যন্তরীন সর্বোচ্চ প্যানেল-আইপিসিসির সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে বলা হয় বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ থেকে ৬ হাজার হেক্টর জমি বিলীন হচ্ছে নদী ভাঙ্গনে। এ হিসেবে গেলো ২০ বছরে নিশ্চিহ্ন হয়েছে দেশের অন্তত ১ লাখ হেক্টর ভ‚মি। আর্থিক হিসেব ধরলে যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। নদী ভাঙ্গন ঠেকাতেও গেলো দ্ইু দশকে ১ লাখ কোটি টাকার অধিক ব্যায় হয়েছে। আইপিসিসি বলছে- নদীভাঙ্গনই এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ঝুঁকির দুর্যোগ। এখন বছরে গড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হচ্ছেন। এসব মানুষ জীবন জীবিকা আর কর্মসংস্থানের জন্য গ্রাম ছেড়ে আসছেন শহরে।

জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে দেশের বড় বড় নদীগুলির ভাঙ্গনের তীব্রতা গেলো কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। ফলে বহু পাড়া-মহল্লা, ইউনিয়ন এমনকি উপজেলার মানচিত্রও পাল্টে যাচ্ছে। এমনকি সীমান্তের অনেক নদীর অস্বাভাবিক ভাঙ্গন দেশের সীমান্ত রেখা বদলে দিচ্ছে। এমন আশংকা উল্লেখ করেছে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)। সীমান্ত এলাকায় নদী ভাঙ্গন কেনো এতো বিধংসী হচ্ছে- তাও খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা। তারা বলছেন-বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যে ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী প্রবাহিত হচ্ছে তার প্রধান ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা। এ চারটি নদীই সবচেয়ে বেশী ভাঙ্গনের শিকার। নদীরপাড় গঠনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সবচেয়ে বেশী ভাঙ্গনপ্রবণ হল যমুনা নদী। এরপর পদ্মা। অতিরিক্ত পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং শাখা-উপশাখা দখল ও ভরাটও ডেকে আনছে নদী ভাঙ্গনের এই মহা সর্বনাশ। প্রধান নদীগুলো ছাড়াও তিস্ত, ধরলা, আত্রাই, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা, খোয়াই, সুরমা, মনু, মগড়া, ধনু, জুরী, সাঙ্গু, ধলাই, গোমতী, মাতামুহুরি, মধুমতি, সন্ধ্যা, বিশখালী এসব নদীও ভাঙ্গনপ্রবণ। এসব নদীর অন্তত দেড়’শ স্পটে এখনো বড় ধরনের ভাঙ্গন বিদ্যমান। সিইজিআইএসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মৌসুমে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৩ জেলা ভয়াবহ নদীভাঙনের কবলে পড়তে পারে। পদ্মা, গঙ্গা, যমুনা ও তিস্তা নদীর ভাঙনে এসব জেলার প্রায় ২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিলীন হতে পারে। নদী ভাঙন নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন নি¤েœ তুলে ধরা হলো।

রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তার পানি দ্রæত বেড়ে যাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছায় তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদীর ভাঙ্গনে এরই মধ্যে বেশকিছু বসতভিটা, ফসলি জমি ও রাস্তাাঘাট বিলীন হয়েছে। চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। বরাদ্দ না থাকায় ভাঙনকবলিত এলাকার বেশিরভাগ স্থানেই জিও ব্যাগ ফেলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, মর্নেয়া বরাইবাড়িসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এসব এলাকায় বসতভিটা, রাস্তাঘাট ছাড়াও প্রায় ৯০ হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কেলকেন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চর ও গোডাউনের হাট নামক স্থানসহ লক্ষীটারী ইউনিয়নের শংকরদহসহ আশপাশের বেশ কিছু স্থানে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ভাঙন থাকলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কিছু কিছু স্থানে স্থানীয়ভাবে বালুর বস্তা ফেলে নদী ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নদী ভাঙনে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল ও ঘরবাড়ি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী লোকজন। তারা ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। গঙ্গাচড়া ছাড়াও জেলার কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙ্গন তীব্র ভাঙ্গন আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে অসংখ্য ফসলী জমি, রাস্তা ও ঘর-বাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিস্তার ভাঙ্গনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টাও করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, জেলার রাজারহাটে রাক্ষুসে তিস্তার তীব্র ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি, গাছপালা ও বসত ভিটাসহ নানা মূল্যবান সম্পদ। হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পরেছে উপজেলার বুড়িরহাট স্পার বাঁধসহ হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও সহস্রাধিক বাড়িঘর। তবে ভাঙন ঠেকাতে শুধুমাত্র একটি স্থানে কুড়িগ্রাম পাউবো জিও ব্যাগ ফেলার জন্য বালু সংগ্রহ শুরু করলেও অন্যান্য স্থানে ভাঙন রোধে বরাদ্দ না থাকায় কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

গতকাল সরেজমিনে জানা গেছে, তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, কালিরহাট, রামহরী, তৈয়বখাঁ, ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা ইউনিয়নের বড়দরগা খিতাবখাঁ, বুড়িরহাট এবং নাজিমখান ইউনিয়নের সোমনারায়ন গ্রামে ভাঙন চলছে। এতে করে প্রতিদিনই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, গাছপালা ও ভিটেমাটি। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার শতশত মানুষ। ভাঙনে ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে চতুরা, খিতাবখাঁ ও কালিরহাট গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতভিটে। ফসলি জমি ও গাছপালা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে প্রতিমুহ‚র্তে। গত বছরের বন্যায় নদী গর্ভে অধিকাংশ বিলীন হওয়া বুড়িরহাট স্পার বাঁধটির বাকী অংশও দেবে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন নদী পাড়ের মানুষ জন। প্রতিবছর তিস্তা নদী ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িযালডাঙ্গা ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে গেছে। বিগত এক যুগে রাক্ষুসে তিস্তা কেড়ে নিয়েছে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের পাঁচ হাজারেরও বেশী পরিবারের বসত ভিটা ও ফসলি জমি। সর্বশান্ত এসব পরিবারের অনেকেই আজ পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। চতুরা গ্রামের সদ্য বসত ভিটা হারানো নিবারণ চন্দ্র (৫০) বলেন, কোনটে যামো, কোনটে থাকমো কিছুই চিন্তা করি কুল পাংনা। কুড়িগ্রাম পাউবোর নিবার্হী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ভাঙন কবলিত কালিরহাটে ২শ মিটার স্থানে জিও ব্যাগ ফেলার বরাদ্দ পেয়েছি এবং শুরু হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য স্থানে ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরেজমিন পরিদর্শনের পর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ার সাথে সাথে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বড় খাল, খোলা বাজার, পাটাধোয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। টানা দুই সপ্তাহের ধীরগতির ভাঙ্গনে নদ ও নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক ঘর-বাড়ি ও শত একর ফসলী জমি। এছাড়াও ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে স্কুল, হাট-বাজারসহ শত শত বসত ভিটা। মন্ডল বাজার এলাকার বাসিন্দা নয়ন মিয়া বলেন- এক মাস থেকে ভেঙে দুটো গ্রাম চলে গেছে। এর আগে বহুম গেছে। এর পরে দুটো গ্রাম চলে গেছে। এখন যতটুকু আছে। এটাও মেরামত করে দিলে। আমরা এলাকার মানুষ থাকতে পারমু। ইমরান মাহমুদ নামে একজন বলেন-‘আমাদের এখানে স্বয় সম্পত্তির মধ্যে মরিচের ক্ষেত গেছে,পাটের ক্ষেত গেছে। ওয়া গারছি, ওয়ার ক্ষেত গেছে। বহুত ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। নি¤েœ সোজা কথা ৫০০-৭০০ বিঘার মতো ক্ষতি হয়ে গেছে।’

নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের দাবি- নদীর গভীরতা বেশি ও তীব্র ¯্রােত থাকায় কাজে আসে না ভাঙন রোধে ডাম্পিং করা জিও ব্যাগ। তাই স্থায়ী সমাধানের জন্য বাঁধ নির্মানের দাবি তাদের। আর বন্যার আগে কাজ না করলে ভাঙ্গনের মাত্রা আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তবে ভাঙন রোধে দাখিল করা প্রস্তাবনা অনুমোদন হয়ে আসলেই ব্যবস্থা গ্রহন করার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, পদ্মায় হু হু করে বাড়ছে বানের পানি। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদী ভাঙনও। গত ২৪ ঘন্টায়, ফরিদপুর সদর থানার নর্থচানেল ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুবৃবরের ডাঙ্গী, উস্হাডাঙী, সরকার ডাঙ্গী, মোহন খার ডাঙী, রহম মিয়ার ডাঙ্গী, আয়নালের ডাঙ্গী, সহ ৫ নং ওয়ার্ডের কয়েক শত বিঘা ফসলি জমি পদ্মা বিলিন হয়ে গেছে। সদর থানার ডিক্রিচড় ইউনিয়নের ১ নং ও ২ নং ওয়ার্ডের মধ্যে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের তীব্রতায় ১ নং ওয়ার্ডের সমস্ত ঘর বাড়ী জমি জিরাত সবই এখন নদীতে। ভাঙ্গন অব্যাহত আছে। পানির তোড় আরও বাড়লে সপ্তাহ না ঘুরতেই বাকি ৩০ টি বাড়ীও নদী গর্ভে গেলে একটি ইউনিয়ন থেকে ২ ওয়ার্ড সম্প‚র্ণ বিলীন হবে নদী গর্ভে। নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর সালমা বেগম ইনকিলাব কে বলেন, নর্থচ্যানেলের ৫/৬ নং ওয়ার্ডের অব্যাহত ভাঙ্গনে কয়েক কোটি টাকার ফসিল জমি নদীতে চলে গেছে গত এক সপ্তাহে। নতুন করে আরো ৬০/৭০টি বাড়ী নদীতে ভাঙ্গনের মুখে পড়ে বিলিন হয়ে যাবে বলে ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ মেহেদী হাসান ইয়াকুব মৃধা ইনকিলাব কে নিশ্চিত করেন। যদিও ঐ এলাকায় ফরিদপুর পাউবো কর্তৃপক্ষ সামান্য কিছু অংশ মাত্র কয়েক হাজার জিও ব্যাগ ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করছেন। এই সামান্য কাজে ৪ কোটি টাকার এলজিইডির ব্রীজটি, সরকারি হাসপাতাল, সরকারি পাকা সড়ক সহ শতাধিক বাড়ি কিছু রক্ষা করা যাবে না।

লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা সাধানরন মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে নদী ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও তিস্তা তার ভাঙন অব্যহত রেখেছে। বন্যার পানি বসতবাড়ী হতে নেমে গেলেও নদীর উপরে যেন দায়িত্ব দিয়ে গেছে পাড় ভাঙনের। আর এজন্য বিঘার পর বিঘা জমি ও বসতভিটা খেয়ে এগোচ্ছে তিস্তা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ বাগডোরা, আদিতমারী উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি ও হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না গড্ডিমারি এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। এছাড়া তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকার কমপক্ষে ২০টি পয়েন্ট হুমকির মুখে পড়েছে। এসব জায়গায় বসতভিটা, ফসলি জমি, গাছপালা ও বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা চন্ডিমারীর বাসিন্দা খয়বর হোসেন বলেন, ‘তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় আবার নদী ভাঙন আতঙ্কে রয়েছি। সরকার থেকে জিও ব্যাগ ফেললেও কাজে আসছে না। লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা গ্রামের ভাঙন কবলিতএলাকার কৃষক মোঃ তমছের আলী বলেন, ‘তিস্তার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। প্রতিদিন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বসতভিটা ও আবাদি জমি। নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন। অনেকে রাস্তার পাশে ঘর ফেলে রেখেছেন। এদিকে ধরলা নদীর তীব্র ভাঙ্গনে কুলাঘাট ইউনিয়নের দক্ষিন শিবেরকুটি ও আনন্দ বাজার এলাকার বনগ্রাম মৌজার বিশাল এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কুলাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রীস আলী জানান ধরলা নদীর ভাঙ্গন রোধে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের আফিসে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পযর্ন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

পঞ্চগড় থেকে মো. সম্রাট হোসাইন জানান, জেলার বোদা উপজেলার খুটাখালী গ্রামের কয়েকশ একর ফসলি জমি করতোয়া নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নতুন করে আরও প্রায় দেড়শ একর চাষের জমি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছে স্থানীয়রা। নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে অসহায় হয়েছেন অনেকে। এলাকাবাসীরা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জোর দাবী জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বোদা উপজেলার কামাত কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের খুটাখালি, ব্রহ্মতল, মৌলভীপাড়া ও ব্রাহ্মনবাড়ি গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদী। বাঁশ ও আম বাগানের ধারে। যেকোন সময় ফসলি জমি ভেঙ্গে যাবে নদী গর্ভে। স্থানীয়রা জানায়, এক সময়ের খরস্রোতা নদী করতোয়া শুষ্ক মৌসুমে পানির নাব্যতা না থাকলেও, বর্ষা মৌসুমে স্বরূপে ফিরে চালায় তান্ডব। তীব্র জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদী তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়িসহ ফসলের ক্ষেত। কৃষক আবু সাঈদ ও আবু সুফিয়ান জানান,করতোয়া নদীর এ এলাকায় দ্রুতই বাঁধ নির্মাণ করা না হলে অনেক আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলিন হবে। এতে সর্বশান্ত হয়ে পথে নামতে হবে অনেক মানুষকে।

নীলফামারী থেকে মোশফিকুর রহমান সৈকত জানান, জেলার ডিমলা উপজেলার সুন্দরখাতা গ্রামে বুড়ি তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বুড়ি তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ডুবে গেছে আমনের বীজতলা। স্থানীয় লোকজন জানান, ভোরে উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের সুন্দরখাতা গ্রামে বুড়ি তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। বাঁধটির ভাঙা অংশ দিয়ে সুন্দরখাতা, মধ্য সুন্দরখাতা, রূপাহারা, সিংপাড়া, মাইঝালির ডাঙাসহ প্রায় ১০টি গ্রামে বুড়ি তিস্তা নদীর পানি প্রবেশ করে। এতে পানিতে তলিয়ে যায় এসব গ্রামের বেশ কিছু জমির আমন ধানের বীজতলা।

https://dailyinqilab.com/national/news/667010