২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:৫৯

হজের নিবন্ধনেও সিন্ডিকেট!

অনিশ্চয়তায় ৫০ হাজার যাত্রী

হজযাত্রীদের প্রাক নিবন্ধন নিয়ে এবারও সিন্ডিকেটের অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে কয়েকটি বড় হজ এজেন্সিকে সুযোগ দেওয়ায় ছোট হজ এজেন্সিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও হজের আইটি ফার্ম 'বিজনেস অটোমেশন' জড়িত রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদ ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। অনলাইন জালিয়াতির কারণে চলতি বছর বেসরকারি কোটার বাইরে প্রায় ৫০ হাজার হজযাত্রী নিবন্ধিত হয়েছেন।

সৌদি সরকার কোটা না বাড়ালে তাদের হজে যাওয়া সম্ভব হবে না।

হজ এজেন্সিগুলো দাবি করছে, হজের আইটি প্রতিষ্ঠানের অনলাইন সিস্টেমে কারসাজির মাধ্যমে কিছু বড় হজ এজেন্সিকে ডাটা এন্ট্রির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে ছোট ছোট পাঁচ শতাধিক হজ এজেন্সি সময়মতো তাদের হজযাত্রীদের প্রাক নিবন্ধন করতে পারেনি। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫৩৭টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে প্রাক নিবন্ধন করেও ৫০ হাজার হজযাত্রী চলতি বছর হজে যেতে পারবেন না। অথচ এসব হজযাত্রী সরকারের নির্ধারিত হজ প্যাকেজের অর্থ জমা দিয়েছেন।

গত ১৯ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হজের প্রাক নিবন্ধন শুরুর প্রথম তিন দিনেই কোটা পূরণ হয়ে যায়। চলতি বছর সরকারি-বেসরকারি মিলে বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৫৮ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার। এ ছাড়া গত বছরের প্রাক নিবন্ধিত হজযাত্রী রয়েছেন ৩৭ হাজার ৪৯৪ জন।

হজ এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, কিছু এজেন্সিকে আইন লঙ্ঘন করে ডাটা এন্ট্রির সুযোগ দেওয়াসহ আইটি প্রতিষ্ঠানের অনলাইন সিস্টেমে কারসাজির কারণে প্রকৃত হজ এজেন্সিগুলো নিবন্ধন করতে পারেনি। ডাটা এন্ট্রির জন্য সার্ভারে প্রবেশ করতে পারেনি। এতে প্রাক নিবন্ধনে বিলম্ব হয়েছে। আর প্রথম দিন সকাল থেকে চেষ্টা করেও সিরিয়ালে পেছনে পড়ে গেছেন তারা।

এ বিষয়ে হাব সভাপতি ইব্রাহীম বাহার সমকালকে বলেন, প্রতি এজেন্সি ১৫০ জনের কম হলে প্রাক নিবন্ধন করতে পারবে না, আবার রাতের অন্ধকারে এসব নিয়ম বাতিল করায় হজ এজেন্সিগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

হজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন- বলা হয়েছে, এজেন্সির নির্ধারিত কোটা ১৫০ জনের কম হলে ব্যাংকের কোনো ভাউচার জমা দিতে পারবে না এবং কোনো ব্যাংক আংশিক হজযাত্রীর ভাউচার গ্রহণ করবে না। অথচ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ ছিল তাদের এজেন্সির সদস্য সংখ্যা কম হলেও নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

১৯ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, ২৯৩টি এজেন্সি ১৮টি ব্যাংকের ৮৬ শাখার মাধ্যমে প্রায় আট হাজার হজযাত্রীর ভাউচার জমা দিয়ে প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। অথচ তাদের কেউই ১৫০ জনের কোটা পূরণ করেনি। অভিযোগ রয়েছে, ছোট ছোট হজ এজেন্সি ডাটা এন্ট্রি করে পেমেন্ট ভাউচার প্রিন্ট করে সময়মতো ব্যাংকে জমা দিলেও আইটি জটিলতার কারণে ৪-৫ ঘণ্টায়ও পেমেন্ট অনুমোদন পায়নি। অন্যদিকে কিছু বড় এজেন্সি সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্ট অনুমোদন পেয়েছে।

বিজনেস অটোমেশন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ম্যানেজার আল মামুন বলেন, অনলাইনে কোনো জালিয়াতি হয়নি। একসঙ্গে সব এজেন্সির চাপ বাড়ায় হয়তো কারও কারও সার্ভারে প্রবেশ করতে সময় লেগেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল বলেন, অনলাইনে জটিলতার অভিযোগ সম্পর্কে আমরা তদন্ত করছি। সত্যতা পাওয়া গেলে বিজনেস অটোমেশন ও সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হজ নিবন্ধন নিয়ে অনিয়মের এ বিষয়টি ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বঞ্চিতদের জন্য কোটা বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে। দেশের মানুষের আয় বাড়ায় এবং গত কয়েক বছর ধরে হজ পালনে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হওয়ায় চলতি বছর এত অধিক সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন।

http://bangla.samakal.net/2017/02/28/273593