২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:৫৭

বিমানের ১২ কোটি টাকা গচ্চার আশঙ্কা

উড়োজাহাজ ভাড়ায় অনিয়মের অভিযোগ

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জন্য উড়োজাহাজ ভাড়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে কম দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে বেশি দামে উড়োজাহাজ ভাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে আট মাসের জন্য ভাড়া করা ওই উড়োজাহাজ বাবদ কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা বাড়তি খরচের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে ও এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিমান পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জানা যায়, আট মাসের জন্য ২২০ থেকে ৩০০ আসনের একটি উড়োজাহাজ ভাড়া করার (ক্রু, রক্ষণাবেক্ষণ, বিমাসহ) জন্য গত ডিসেম্বরে দরপত্র বা ‘রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল’ আহ্বান করে বিমান কর্তৃপক্ষ। ২৮ ডিসেম্বর ছিল প্রস্তাব বা দর জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এতে মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দেয়।

এসব প্রস্তাবের মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে বিমানের মূল্যায়ন কমিটি ডাকে এবং তাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চায়। এই পাঁচটির মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হলো মিসরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ার লেইজার, যারা এমিরেটস এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ভাড়া দিয়ে থাকে। এদের প্রতি উড্ডয়ন ঘণ্টা ভাড়ার প্রস্তাব করা হয় ৬ হাজার মার্কিন ডলার। পরে আলোচনার পর্যায়ে তারা ৫ হাজার ৪০০ ডলার ভাড়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিমানের মূল্যায়ন কমিটি প্রথম গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে চূড়ান্ত করে জর্ডানের জেএভি কমার্শিয়ালকে। এদের দর প্রতি উড্ডয়ন ঘণ্টা ৬ হাজার ১৫০ ডলার। দ্বিতীয় গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে এভিকো এশিয়া-প্যাসিফিককে, যাদের দর প্রথম তিন মাস প্রতি ঘণ্টা ৬ হাজার ৩৬৫ ও পরের পাঁচ মাস ৬ হাজার ৯৬৯ ডলার।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, শুরু থেকেই সবচেয়ে কম দামে উড়োজাহাজ ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ার মনোভাব দেখান মূল্যায়ন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এরপর একের পর এক নানা কাগজপত্র চাওয়া হয়। সেসব জমা দেওয়ার পর আবার অতিরিক্ত কাগজপত্র চাওয়া হয়। বিমানের নিজস্ব চ্যানেলে সেসব কাগজপত্রের সত্যতা যাচাইয়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিমান কর্তৃপক্ষ তা করেনি। উপরন্তু উড়োজাহাজ কোম্পানির ব্যবসায়িক গোপনীয় কাগজ ‘বিল অব সেল’-এর কপিও চাওয়া হয়, সেটাও জমা দেয় ওই দরদাতা। সর্বশেষ অতিরিক্ত কাগজ জমা দিতে দেরি হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে প্রতি ঘণ্টার ভাড়া ৭৫০ মার্কিন ডলার বেশি দেওয়া দরদাতা প্রতিষ্ঠান জেএভি কমার্শিয়ালের কাছ থেকে উড়োজাহাজ ভাড়ার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।

বিমানের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সাধারণত কম দাম পেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার উল্টোটা হয়েছে। ফলে ফ্লাইট পরিচালনার আগেই ১২ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বিমান।

সূত্রটি ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, মাসে ‘গ্যারান্টেড আওয়ার’ ধরা হয়েছে ২৫০ ঘণ্টা। অর্থাৎ ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যবহার না করলেও মাসে ন্যূনতম ২৫০ ঘণ্টার ভাড়া বিমান পরিশোধ করবে। ২৫০ ঘণ্টার বেশি উড্ডয়ন করলে সেটার বাড়তি ভাড়া। আট মাসে ন্যূনতম ২ হাজার ঘণ্টার ভাড়া পরিশোধ করবে বিমান। বাদ পড়া সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বর্তমানে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের ভাড়ার ব্যবধান প্রতি ঘণ্টায় ৭৫০ ডলার। এ হিসাবে ন্যূনতম ২ হাজার ঘণ্টার ভাড়ার ব্যবধান দাঁড়ায় দেড় মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ কোটি টাকার বেশি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কেবল ভাড়া নয়, জ্বালানি খরচ ও আসনপ্রতি খরচ হিসাব করে উড়োজাহাজ ভাড়া করার বিষয়ে মূল্যায়ন কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

তবে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের উড়োজাহাজের জ্বালানি খরচ ও আসনপ্রতি খরচের যে হিসাব প্রথম আলোর হাতে এসেছে, তাতেও জেএভি কমার্শিয়াল নয়, এয়ার লেইজার সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। এ কথা জানালে বিমানের এমডি বলেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া মূল্যায়ন কমিটিতে বাইরের সদস্যও থাকেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1092838