২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ২:৪২

ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি ৫৪৭০ কোটি টাকা

ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। ঋণ জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অধিকাংশ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থাই এখন নাজুক। অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে শুভংকরের ফাঁকির মাধ্যমে লাভজনক দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা এতই খারাপ যে, তাদের সম্পদের তুলনায় দায় বেড়ে যাচ্ছে। বিপুল পরিমাণ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতেও অনেক ব্যাংক ব্যর্থ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাচাই-বাছাই ছাড়া বিতরণ করা বেশির ভাগ ঋণই খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। আর খেলাপি বাড়লে ব্যাংকগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। অনেক ব্যাংকের সম্পদের তুলনায় দায় বেড়ে গেছে। সে কারণে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী আয় থেকে ঋণের শ্রেণীমান বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত হারে প্রভিশন রাখতে হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়। অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করায় খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে ঋণ না দেয়ার একটা অপসংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে অনেক ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে আছে। সে কারণে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর ঋণ অবলোপন করা হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্ব^র পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা প্রভিশন রাখার প্রয়োজন ছিল। তবে ৬টি ব্যাংকের প্রভাবে পুরো ব্যাংক খাতে ৫ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংক ৪ হাজার ৬৩ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ২৪২ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ১২৩ কোটি টাকা এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক ৪৮ কোটি টাকা ঘাটতির মধ্যে রয়েছে। অথচ এর আগের বছর ৩০ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা প্রয়োজনের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ২৬ হাজার ৬১০ কোটি টাকা সংরক্ষণ করেছিল। তখন ঘাটতি ছিল মাত্র ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এ সময় বেসিক ব্যাংক ৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংক ১৫৫ কোটি টাকা ঘাটতিতে ছিল।

জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান যুগান্তরকে বলেন, সম্পদের তুলনায় দায় বেড়ে গেছে। সে কারণে কয়েকটি ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। আর শ্রেণীকৃত ঋণের মধ্যে নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা খারাপ ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লি­ষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, দেশের ব্যাংকগুলোকে ঋণের ঝুঁকি বিবেচনায় নির্দিষ্ট একটি অংশ প্রভিশন করতে হয়। ব্যাংকগুলোর মুনাফা থেকে প্রতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে যা রাখতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণের নির্দিষ্ট হার ঠিক করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। খেলাপি ঋণ কমলে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমে। আর প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমলে ব্যাংকের নিট মুনাফা বেড়ে যায়।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/02/27/104520