৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, শুক্রবার, ৪:১৪

অন্য দৃষ্টি

দুর্নীতি আছে, তবে কেউ দায়ী নয়

জসিম উদ্দিন

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে তিন থেকে বিশ লাখ টাকা ঘুষ বিনিময় হয়েছে। রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তার, আত্মীয়তা, আঞ্চলিকতা এই তিনটি বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পেছনে কাজ করে। এ ধরনের পক্ষপাতিত্বের কথা সবার জানা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে সরাসরি নগদ অর্থের লেনদেন নতুন বিষয়। তবে রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুফল ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠী এখন পাচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি প্রতিনিধি নির্বাচনের বিভিন্ন বডিতে তারা নিরঙ্কুশ জয় পাচ্ছে। পাল্টা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে যত দিন না এটা ভারসাম্যে আসবে তত দিন বিরোধীরা আর শিক্ষক বডিগুলোতে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রহিত হয়ে গেল।
টিআইবি যখন ঘটনাটি প্রকাশ করল, লক্ষণীয় বিষয় ছিল অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিক্রিয়া। তারা টিআইবির এই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট, ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক, কাল্পনিক ও স্ববিরোধী বলে বিবৃতি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে মাঠের রাজনৈতিক বক্তৃতা দেয়ার মতো করে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের নেতারাও একই ধরনের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে তাদের অনুসরণ করেছেন। অথচ টিআইবি জানিয়েছে, বিগত ১৫ বছরের শিক্ষক নিয়োগের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এসব তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে নিশ্চিতভাবে তারা এ ঘোষণা দিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে কমবেশি সবার জানা রয়েছে। অভিভাবক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন এমন অন্ধভাবে সাফাই গায়, এতে করে দুর্নীতির সাথে তাদের আপসকামিতার লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের সম্মানিত ব্যক্তিরা এর মাধ্যমে নিজেদের মানহানি ঘটান।
বগুড়ার ধুনটে গোপালনগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের ছাত্রলগীগ কর্মী মো: জুয়েল। নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর শূন্য পদে চাকরির আবেদন করেছিলেন ২০১৩ সালে। এ পদে যাচাই পরীক্ষায় তিনি প্রথম হন। ওই চাকরি পাওয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের নাম করে তার ব্যক্তিগত সহকারী মিলন তিন লাখ টাকা ঘুষ নেন। এরপরও তার চাকরি হয়নি। আরো চড়া দামে অন্য একজনকে চাকরিটা দেয়া হয়। জুয়েল পিছু ছাড়েননি, আদালতে মামলা ঠুকে দেন। মামলার রায় তার পক্ষে গেছে কিন্তু চাকরি পাওয়া যায়নি। বিষয়টি কেউ জোরালোভাবে উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জুয়েল নৈশপ্রহরীর চাকরিটি পেয়ে যেতে পারেন। তবে এ ধরনের ঘটনা এখন লাখ লাখ, কয়টি ঠেকাবেন উচ্চ আদালত? যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ টাকার বিনিময়ে চলছে, সেখানে প্রাইমারি স্কুলের একজন নৈশপ্রহরী নিয়োগ কে পেল সেটা কোনো হিসাবের খাতায় আসে না। তবে দুর্নীতির বিস্তার কতটুকু হয়েছে তার উত্তরে বলা যায়, প্রাইমারি স্কুলের প্রহরী নিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে একই অর্থের লেনদেন এখন চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই হাল।
বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে চার দিকে প্রচার চলছে। রাজধানী ঢাকার ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়ে যে তুঘলকি কাণ্ড তা এমন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা। এসব ফ্লাইওভার নির্মাণের সুফল কত দিনে ঢাকাবাসী পাবে সেটা অনুমান করা যাচ্ছে না। তবে এই নির্মাণের বিপুল কর্মযজ্ঞে মানুষের ত্রাহি অবস্থা। ধূলিঝড়ে বাসাবাড়ি এবং রাস্তায় মানুষের দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। নির্মাণ ব্যয়ের বিরাট অঙ্ক দেখলে দম বন্ধ হওয়া মানুষের কষ্ট আরেক দফা বাড়বে। খবর বের হয়েছে, ফ্লাইওভার নির্মাণে দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে, একই সাথে সময় লাগছে বেশি। বেশি সময় লাগার সাথে ব্যয় বাড়ানো নাকি আন্তঃসম্পর্কিত। চার লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটারে গড়ে খরচ পড়ছে ১২৩ কোটি টাকা। ভারতে এক কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় গড়ে ১০০ কোটি এবং পাকিস্তানে ৭০ কোটি টাকা। এক কিলোমিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে পাকিস্তানের প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বাংলাদেশে।
হিসাব মতে, পাকিস্তানে ওইসব ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়েছে বেনজির ভুট্টোর আমলে। কথিত আছে, সেই সময় প্রকল্পের অর্থ ছাড় করাতে বেনজিরের স্বামী জারদারিকে ১০ শতাংশ ঘুষ দিতে হতো। যে জন্য ওই জমিদার নতুন নাম পেয়েছিলেন মিস্টার টেন পার্সেন্ট। মূল খরচের সাথে টেন পার্সেন্ট হারে যোগ করার পর কিলোমিটারপ্রতি ৭০ কোটি টাকা খরচ হলে ঐকিক নিয়মের সেই অঙ্কটি সবাই কষতে বসে যাবেন যে, কতটা টাকা বাড়তি যোগ হলে কিলোমিটারপ্রতি ১২৩ কোটি টাকা খরচ হয়। উইকিলিকস রাজাবাদশাহদের দুর্নীতির বিশাল ভাণ্ডার সম্প্রতি খুলে দিয়েছিল, তাতে উপমহাদেশে বর্তমান পাকিস্তান ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ প্রধান নওয়াজ শরিফের পরিবারের দুর্নীতির কথা এসেছে। অর্থাৎ দেশটির ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দুর্নীতি রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে সেখানে দুর্নীতি হওয়াটা স্বাভাবিক। দুর্নীতি হওয়ার পরও কিভাবে তাদের উন্নয়ন ব্যয় আমাদের চেয়ে অর্ধেক থাকছে এটি একটি ধাঁধা। এটি উন্নয়ন ধাঁধা হিসেবে উন্নয়ন কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় মালয়েশিয়া ও চীনের চেয়েও বেশি পড়ছে বাংলাদেশে। দেশগুলোতে একই ধরনের ফ্লাইওভার নির্মাণে গড়ে ১০০ কোটি টাকার কম খরচ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্মাণ ব্যয় অস্বাভাবিক বেশি হওয়ার কারণ নিয়ে কোনো সমীক্ষা হয়নি। নির্মাণ ব্যয় পার্শ্ববর্তী যেসব দেশের সাথে তুলনা করা হচ্ছে, প্রত্যেকটি দেশের জীবনযাত্রা বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত। তাদের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। শ্রমের দাম প্রত্যেকটি দেশে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, একইভাবে ওইসব দেশে নির্মাণ সামগ্রীর দামও বেশি। ডেইলি স্টার এক প্রতিবেদনে ফ্লাইওভার নির্মাণের ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে। তারা একটি প্রকল্পের সময় বাড়ানো ও ব্যয় বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ নেয় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার সময় চূড়ান্ত হয়েছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বর। কর্তৃপক্ষ পরে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয়। আট কিলোমিটারের ওই প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭৩ কোটি টাকা। সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন করে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রতি কিলোমিটার ৯৭ কোটি টাকা। পরে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫২ কোটি টাকায়। সময় বাড়ানোর সাথে সাথে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায় ৫৮ শতাংশ। পুনর্নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে বছরের শেষ সীমায় চলে আসার পরও প্রকল্প শেষ হয়নি। এ ধরনের অনেক ফ্লাইওভার নির্মাণ চলছে ঢাকায়। প্রত্যেকটির প্রকল্প ব্যয় ও সময়সীমা দফায় দফায় বেড়ে চলেছে। আজগুবি ব্যাপার হলো, শ্রমিক সস্তা, নির্মাণসামগ্রীর দাম কম কিন্তু প্রকল্প ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ কী, তার কোনো সন্ধান কোথাও নেই। টিআইবি শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেনের খবর প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গোমর ফাঁস করে দিলেও এসব সাগরচুরির ঘটনায় খুব একটি আগ্রহ পাচ্ছে না। কেউ আগ বাড়িয়ে বলছে না এসব ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করা হোক। কিংবা এসব তদন্তে সংসদীয় কমিটি গঠন করা হোক।
এ অবস্থায় চার দিক থেকে রব উঠছে বাংলাদেশে বিপুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হতে যাচ্ছে। চীন প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব সই করার পর একই ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আরো অনেকে এগিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যসহ অনেকে হাজার কোটি ডলারের প্রস্তাব নিয়ে আসছেন। বৃহৎ অঙ্কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিপরীত যে বিপুল ঋণ পরিশোধের ব্যাপার রয়েছে সেটা অবশ্যম্ভাবিরূপে বাংলাদেশের মানুষকে পরিশোধ করতে হবে। তাই এসব প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হলে শুধু ঋণের বোঝাটা মাথার ওপর ঝুলে থাকবে। দৈনিক যুগান্তর সোমবার প্রধান সংবাদ করেছে ‘বিস্ময়কর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর’। পত্রিকাটি লিখেছে, নাম ডিপি (ঢাকা-পায়রা) রেলওয়ে লিমিটেড। অথচ রেলপথ নির্মাণ বা এ ধরনের সমীক্ষা যাচাইয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অভিজ্ঞতা নেই। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বয়স মাত্র তিন বছর। আবার এর জন্মও হয়েছে ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পকে ঘিরে। এ ছাড়া অবাক হলেও সত্য যে, শুরুতে এ প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ছিল ১০০ পাউন্ড বা কম-বেশি ১০ হাজার টাকা মাত্র।
এ রকম একটি নামধারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে যাচ্ছে ৬০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের। ২০ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরও হয়ে গেছে। এর তিন দিন পর যমুনা টিভির অনুসন্ধানে ডিপি রেলওয়ে লিমিটেডের এমন বেহাল চেহারা বেরিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানটির পাঁচজন পরিচালক ও একজন সচিব রয়েছেন। পরিচালকদের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আনিসুজ্জামান চৌধুরী কোম্পানিতে যোগদান করেছেন চলতি বছরের ২ এপ্রিল। পত্রিকাটি আরো লিখেছে, ডিপি রেল লিমিটেডকে কার্যক্রমহীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এনডোলে। এনডোলে ঝুঁকিব্যবস্থাপনা ও ক্রেডিট রেটিং-সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে থাকে। তাদের মতে, রেলপথ নির্মাণ কিংবা নির্মাণ প্রকল্পে সরঞ্জাম সরবরাহে ডিপির কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ওই সমঝোতা স্মারক সইয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। স্মারকে স্বাক্ষর করেন রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। কিন্তু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী মো: মুজিবুল হক, অপরপক্ষে ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী।
পায়রা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি প্রায় ২৪৫ কোটি টাকা। যুগান্তর তার প্রতিবেদনে জানাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের রেলপথ নির্মাণে ২৩ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ৩১ কোটি টাকা। বাংলাদেশে ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয়ের সাথে রেলপথ নির্মাণের ব্যয়ের বিরাট অমিল দেখা যাচ্ছে। ফ্লাইওভার নির্মাণে বাজেট প্রণেতারা অনেক পরে বুঝতে পেরেছিলেন যে খরচ অনেক কম ধরা হয়েছে। তাই তাদের সময় বাড়িয়ে খরচ বাড়াতে হয়েছে। অন্য দিকে, রেলপথ নির্মাতার একেবারে শুরুতে সম্ভবত নির্মাণ ব্যয় বেশ কয়েকগুণ বাড়িয়ে হিসেব করছে। অন্ততপক্ষে রেলপথ নির্মাণের খরচের যে হিসাব যুগান্তর দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে রেলপথ নির্মাণে নয় থেকে দশ গুণ বেশি ব্যয় হতে যাচ্ছে। এর সাথে অস্তিত্বহীন একটি কোম্পানির হঠাৎ আত্মপ্রকাশ কী কাকতালীয় ঘটনা না এর সাথে অশুভ কোনো আঁতাত রয়েছে।
পুকুরচুরি না সাগরচুরি হয়েছে সেটা অনুমান করা দুষ্কর। তবে সামনে আসছে মহাসাগরচুরি। এ অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের খবরে বাংলাদেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। তার ফাঁকফুটো দিয়ে দুয়েকটি যে দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে, তা যেন হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিচ্ছে। ভেতরের অবস্থাটির বুঝতে এতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যম যেভাবে এসব খবর প্রকাশ করছে তাতে লক্ষণীয় হচ্ছে, এসব দুর্নীতির জন্য কেউ দায়ী নন। আর যদি কাউকে দায়ী করতে হয় তাহলে সে হচ্ছে ‘কেষ্টা বেটা’। নাগরিকদের পক্ষে দায়িত্ব পালন এতে কোনোভাবে হয় না। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম নিয়ে বড় আকারের প্রশ্ন উঠেছে। বস্তুনিষ্ঠ খবর তারা খুব কমই করতে পেরেছে।
একইভাবে আমরা দেখেছি দুর্নীতিবিষয়ক খবরের জোয়ার। এখন যেমন উন্নয়নের জোয়ারের খবর। যে কারণে হাওয়া ভবনের ব্র্যান্ডিং হয়েছে দুর্নীতির সমান্তরাল শব্দ হিসেবে। কতগুলো প্রতিবেদন হাওয়া ভবনের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে, তার হিসাব কষে শেষ করা যাবে না। তবে ওই সময় এই খবর পাওয়া যায়নি যে, খরচের দশ গুণ প্রাক-বাজেট হচ্ছে। প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এখন তো হাওয়া ভবন নেই। হাওয়া ভবনের কথিত কারিগরও নেই। তাহলে এখনকার দুর্নীতির জন্য কি কেউ দায়ী নয়?
jjshim146@yahoo.com
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/182622