২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ২:২৭

‘মানসম্পন্ন শিক্ষা’ : ১৫ দফা নির্দেশনা

পরীক্ষার পুরো সময়ে কেন্দ্রেই চলেছে সরকারি কলেজ অধ্যদের সম্মেলন

পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তার নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও জমায়েত নিষিদ্ধ। পরীক্ষা কেন্দ্রের ওই পরিসীমার মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। এ নীতিমালা যারা তদারকির দায়িত্বে তারাই গতকাল তা ভঙ্গ করলেন। এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

রাজধানীর আজিমপুর গর্ভমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে গতকাল সকাল থেকে এক দিকে চলছে এসএসসি পরীক্ষা। অন্য দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের আয়োজনে সারা দেশে থেকে আসা অধ্যদের নিয়ে স্কুল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে সরকারি কলেজ অধ্যদের সম্মেলন। সকাল থেকেই মাইক বাজিয়ে সম্মেলন চলে। ফলে শব্দ দূষণ আর বিরক্তিকর মাইকে আওয়াজের মধ্যে ওই কেন্দ্রের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ অভিভাবকদের অনেকেই এ ব্যাপারে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ওই সম্মেলন স্থলে আসেন এবং কলেজ অধ্যক্ষদের দিনব্যাপী সম্মেলন ও কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।

গতকাল সকাল ১০টা থেকে সারা দেশে এসএসসির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বিষয়ের পরীক্ষা শুরু হয়। শেষ হয় বেলা ১টায়। আজিমপুর গর্ভমেন্ট গার্লস স্কুল কেন্দ্রেও এ পরীক্ষা চলে। অধ্য সম্মেলন শুরু হয় সকাল পৌনে ১০টায়। একই সময়ে পরীক্ষার্থীরা ও সম্মেলনে আসা অতিথিরা প্রবেশ করেন একইসাথে কেন্দ্রে। এ সময় অধ্যদের প্রায় সবার গাড়িও কেন্দ্রে প্রবেশ করে। এতে করে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় কেন্দ্রে আসা পরীক্ষার্থীদের।

সরকারি কলেজ অধ্যক্ষদের সম্মেলনের আয়োজন মাউশি অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যেই অধ্যক্ষ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা যেন না হয়; তা বিবেচনায় নিয়েই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া অধ্যদের গাড়িগুলো পরীক্ষা শুরুর আগেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেছে। অন্য কোথাও জায়গা না পাওয়ায়ই এখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’

তবে পরীক্ষা চলাকালে বেলা ১টার আগে ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কিছুণ পরপরই অধ্যদের কেউ কেউ মিলনায়তন থেকে বের হয়ে বাইরে যাচ্ছেন, আবার আসছেন। অসুবিধার কথা বলেছেন শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরীক্ষা শেষে বলেন, ‘সাউন্ড বক্সের শব্দেও কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আমরা শিকদের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।’

গতকালের দিনব্যাপী অধ্য সম্মেলনে নতুন করে জাতীয়করণকৃত কলেজগুলো বাদে পুরনো ৩২৯ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের মধ্যে ৩১৮ জন অংশ নেন। এর আগে গত বছরের ৩০ এপ্রিল অনুরূপ একটি সম্মেলন হয় রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। এবারের দ্বিতীয় সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানসম্পন্ন শিা’। এবারের সম্মেলনে আগত সরকারি কলেজ অধ্যক্ষরা ৫১টি দাবি তুলে ধরেন মাউশির কাছে। গত বছরের সম্মেলনে দাবি করা ২৫টি সমস্যার এখনো সমাধান হয়নি বলে অধ্যক্ষরা নয়া দিগন্তকে জানান।

শিক্ষক সঙ্কটই সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন অধ্যরা। দিন দিন শিার্থী বাড়লেও শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি হয়নি বলে জানান তারা। এ ছাড়া এবারের সম্মেলনে অবকাঠামো ও পরিবহন সমস্যা, শিক-শিক্ষার্থীর আবাসন সমস্যা, শিক্ষকদের মর্যাদার সঙ্কটসহ নানা সমস্যা তুলে ধরা হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অধ্যক্ষদের উদ্দেশে ১৫ দফা নির্দেশনার উল্লেখ করে বলেছেন, কলেজগুলো উচ্চশিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কলেজগুলোতে শিার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। কলেজগুলোতে শিার উন্নত পরিবেশ তৈরিতে অধ্যদেরকে টিম লিডার হিসেবে কাজ করতে হবে। শিকদের পাঠদানের দতা আরো বাড়াতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সব সরকারি কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কলেজগুলোতে ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণের জন্যও প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কলেজের উন্নয়ন ও অন্যান্য বিষয়ে প্রতি মাসে একটি প্রতিবেদন অধিদফতরে প্রেরণের জন্যও তিনি অধ্যদের নির্দেশ দেন।

সম্মেলনের কর্মশালা পর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে বিভিন্ন নির্দেশনা ও কৌশল সম্পর্কে অবহিত করা হয় অধ্যক্ষদের।

এরপর তাদের বিভাগওয়ারী ভাগ করে গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার জন্য ৩৬টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি ও উপস্থিতি নিশ্চিত, ঝরেপড়া রোধ, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সেবা সহজ করা, বিশেষ করে শিক্ষকদের সম্মানজনক স্বতন্ত্র পে-স্কেল প্রদান এবং শিক্ষকদের বদলির
সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার সুপারিশও উঠে এসেছে।

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে সরকারের জন্য তিনটি করণীয় সুপারিশ করেছেন অধ্যক্ষরা। তা হচ্ছেÑ আইসিটি বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং শ্রেণিকক্ষে মালটিমিডিয়ার ব্যবহার নিশ্চিত। এ ছাড়া কলেজকে দু’টি করণীয় নির্দেশ করা হয়েছে।

দিনব্যাপী চলমান কর্মশালা ও সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাউশি অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান। বক্তব্য দেন- মাধ্যমিক ও উচ্চশিা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো: আলমগীর।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/199292