২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ২:১৮

এমপি লিটন হত্যা

হত্যার দায় থেকে বাঁচতে ভারতে অবস্থান করেন কাদের খান

কিলারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন

এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ননÑ এমন অকাট্য প্রমাণ রাখতে ভিসা-পাসপোর্টে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত বছর ১৯ অক্টোবর ভারতে যান এবং চলতি বছর ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতে অবস্থান করেন। কাদের খান ভিসা-পাসপোর্টে ভারতে অবস্থান করলেও এমপি লিটন হত্যা মিশন সফল করতে চোরাই পথে দুই থেকে তিনবার ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেন। ভারতের আসাম রাজ্যের একটি স্থলবন্দর দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশে আসেন তিনি। এর আগেও তিনি কয়েক দফা চোরাইপথে ভারতে আসা-যাওয়া করেন। কাদের খান সর্বশেষ চোরাই পথে বাংলাদেশে এসে ৩১ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে এমপি লিটন হত্যা মিশন সফল হওয়ার খবর নিশ্চিত হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যান। এমপি লিটন হত্যার পর আবার পাসপোর্ট-ভিসায় চলতি বছর ৬ জানুয়ারি ভারত থেকে কাদের খান দেশে ফেরেন। পুলিশ ও ঘাতকদের স্বীকারোক্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, অর্থ ও অস্ত্র জোগান এবং কিলারদের সুন্দরগঞ্জের নিজ বাড়িতে প্রশিক্ষণের দায় স্বীকার করেছেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জাপার সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব:) আব্দুল কাদের খান। শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ১৬৪ ধারায় কাদের খানের জবানবন্দী শেষে তাকে কারাগারে প্রেরণের পর আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের সাথে এক তাৎক্ষণিক মন্তব্যে রংপুর রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি বশির আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ক্ষমতার লোভ, সংসদ সদস্য হতে না পারা এবং তার বিরুদ্ধে পরে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত হওয়ার জন্য এমপি লিটনকে দায়ী মনে করে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই একান্ত নিজস্ব পরিকল্পনায় কাদের খান এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী চারজনসহ কিলিং মিশনে ইনফরমেশন দাতা, কিলারদের শেল্টার প্রদানকারী, অর্থদাতাদের সম্পর্কে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তদন্তপূর্বক তাদেরও এ হত্যাকাণ্ডের আসামি করা হবে এবং এ জন্য সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন কুমার সরকারসহ অন্য যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার তদন্ত শেষে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই পুলিশ চার্জশিট প্রদান করতে সক্ষম হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কাদের খানের স্বীকারোক্তিতে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় : এমপি লিটনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা কাদের খানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ গাইবান্ধার রাজনৈতিক মহলসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক রাজনীতিতে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে হত্যাকাণ্ড যেন তারই প্রতিফলন। খুনের এ রাজনীতি প্রতিহত করার বিপক্ষে জোরালো মতামত দিয়েছেন সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতারা। সরেজমিন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মতামত থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তারা অবিলম্বে কাদের খানের ফাঁসি এবং তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান।

কাদের খানের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ : এমপি লিটনের খুনি কাদের খানসহ সংশ্লিষ্টদের ফাঁসির দাবিতে শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার হাসানপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা কাদের খানের কুশপুত্তলিকা পোড়ায়। পরে বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমস উদ্দিন বাবুর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাহেদুল ইসলাম জাবেদ, নিলুরাম রায়, আবুল কালাম আজাদ, নাদিম হোসেন, মুশফিকুল ইসলাম পিয়াল, খালেদ গাফলাদার প্রমুখ।

পুলিশের সাফল্যে সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে মিষ্টি বিতরণ : এ দিকে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশের সাফল্যে জনগণ জেলা পুলিশের প্রশংসা করেছেন।

এ উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে সর্বস্তরের মানুষ এবং পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আনন্দ প্রকাশ করেন। এ সময় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্যাহ আল ফারুক, পৌরমেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলন, সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আতিয়ার রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, সহসভাপতি ফরহাদ আব্দুল্যাহ হারুন বাবলু, গাইবান্ধা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সাবু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, জেলা জাসদ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মারুফ মনা, জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন, শ্রমিক নেতা আব্দুল করিম প্রমুখ। পরে উৎসব মুখর পরিবেশে পুলিশ সদস্য ও উপস্থিত সবার মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/199276