২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার, ১২:২৩

রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা

শর্ত পূরণের তথ্য জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠি

সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে কঠোর হচ্ছে সরকার। প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়। এই অর্থ দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে কিছু শর্ত পূরণের কথা বলা হয়। এই জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। বেশির ভাগ ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে এই শর্ত পরিপালন করতে সমর্থ হয় না। এখন অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে শর্তগুলো বাস্তবায়ন কাজ খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই শর্ত পালনে ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গেল সপ্তাহে ব্যাংকিং বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, যেসব ব্যাংক মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ নিয়েছে তাদের শর্ত পরিপালনের সর্বশেষ অবস্থা যেন দ্রুত ব্যাংকিং বিভাগকে জানানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকিং বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি ব্যাংকগুলোকে প্রতি বছর বাজেট থেকে মূলধন ঘাটতি পূরণে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়। এককথায় এগুলো জনগণের করের অর্থ। তাই এ অর্থ ব্যবহারে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কিনা তা আমাদের দেখতে হবে। ফলে টাকার নেয়ার সময় ব্যাংকগুলোকে যে শর্ত দেয়া হয় তা যথাযথভাবে পূরণ হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে আমাদের অবহিত করবে। এ জন্য তাদের কাছে আমাদের পক্ষ থেকে এ চিঠি দেয়া হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে বেসিক ও কৃষি ব্যাংকের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। গত সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি সাত ব্যাংকই ঘাটতিতে পড়েছিল। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এই ঘাটতির তালিকার শীর্ষে রয়েছে সোনালী, বেসিক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এ তালিকায় থাকা অন্য পাঁচ ব্যাংক হলো জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ছয় হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, জুনে যা ছিল সাত হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্Ÿোচ্চ দুুই হাজার ৪২৩ কোটি টাকার ঘাটতি বেসিক ব্যাংকের, জুনে যা ছিল দুই হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এরপরে সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি দুই হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, জুনে এর পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি এক হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। জুনে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল এক হাজার ৫৩ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ঘাটতি ৭৭১ কোটি টাকা, জুন শেষে মূলধন ঘাটতি ছিল ৬৬৪ কোটি টাকা। তবে সেপ্টেম্বরে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২০০ কোটি টাকা থেকে কমে ১১২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭২৬ কোটি টাকা, জুনে এর পরিমাণ ছিল ৬৯৯ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নীতিমালা ব্যাসেল-৩-এর আলোকে ব্যাংকগুলোর পর্যাপ্ত মূলধন রাখার নিয়ম রয়েছে। এর আগে ব্যাসেল-২ নীতিমালার আলোকে ন্যূনতম ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ, এর মধ্যে যেটি বেশি সে হারে মূলধন রাখতে হতো। এখনো একই হারে মূলধন রাখতে হচ্ছে। তবে পরিবর্তনটা এসেছে উদ্যোক্তা মূলধন রাখার বেলায়। এখন ১০ শতাংশের মধ্যে উদ্যোক্তা মূলধন রাখতে হচ্ছে ন্যূনতম সাড়ে ৪ শতাংশ।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর বাদে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রতি অর্থবছরই সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে পাঁচ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দফায় দফায় পূরণ করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি। তবে মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ বিভাগ থেকে চারটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এগুলো হলো- অর্থ ব্যয়ে প্রচলিত সব আর্থিক বিধিবিধান এবং অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। মূলধন পুনর্ভরন ছাড়া এ অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না। ব্যাংকটির অটোমেশন এবং বিজনেস প্ল্যান বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিশেষ করে পুঞ্জিভূত খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি/হ্রাস ত্রৈমাসিকভিত্তিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাতে হবে। সর্বশেষ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পর্যালোচনা সভা আয়োজন এবং সভার কার্যবিবরণী অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে বলে শর্তজুড়ে দেয়া থাকে। এ ছাড়া মূলধন পুনর্ভরন বাবদ অর্থ পাওয়ার পর ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধনের চেয়ে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বেশি হলে মেমোরেনডাম অব অ্যাসোসিয়েশন সংশোধন করতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।

এদিকে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি চলতি অর্থবছরের বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও বছর শেষে ১৮ শ’ কোটি দেয়া হয়। এর মধ্যে শুধু বেসিক ব্যাংকেই দেয়া হয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি মেটাতে দুই ধাপে ব্যাংকগুলোকে চার হাজার ৪০৯ কোটি টাকা দেয় সরকার।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/198425