১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শনিবার, ১০:৫৫

বন্দুকযুদ্ধে দেড়মাসে ২৫ জন নিহত

বন্দুকযুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেড় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে গোলাগুলী চলাকালে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
পুলিশ বলছে-নিহতদের মধ্যে রয়েছে ডাকাত, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, চরমপন্থী, মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন মামলার আসামী। তবে আটক হওয়ার পর দীর্ঘদিন নিখোঁজ ব্যক্তির বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর লাশ পাওয়া গেছে এমন অভিযোগও রয়েছে। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন জঙ্গি, ডাকাত দলের সরদার, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী রয়েছে বলে থানা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় উল্লেখ আছে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেড় মাসে বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১৫ জন। এদেরমধ্যে ৪ জন র্যাবের হাতে এবং ১১ জন। ফেব্রুয়ারির ১৬ দিনেই ১০ জনের মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে রাজবাড়ীর পাংশার নাওড়াবন গ্রামে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোয়াজ্জেম ফকির (৩৫)নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। মোয়াজ্জেম উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মধ্যপাট্টা গ্রামের মজিদ বাউলের ছেলে। পুলিশের ভাষ্যে, মোয়াজ্জেম চরমপন্থী সংগঠনের সদস্য এবং তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ সাতটি মামলা রয়েছে। পাংশা থানার ওসি মোফাজ্জেল হোসেন জানান, ঢাকার সাভার থেকে মোয়াজ্জেম হোসেনকে বৃহম্পতিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। তার তথ্যে রাতে নাওড়াবন গ্রামে অভিযানে গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মোয়াজ্জেমের সহযোগীরা গুলী ছুঁড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলী চালালে এক পর্যায়ে সুযোগ পেয়ে মোয়াজ্জেম দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে গুলীবিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি শ্যুটারগান ও এক রাউন্ড গুলী উদ্ধার করে বলেও জানান ওসি।
অধিকারের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ জানুয়ারি গভীর রাতে যশোর জেলার সদর উপজেলায় মোহাম্মদ রাসেল নামে এক যুবককে পলিশ গুলী করে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে। যশোর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন বলেন, রাতে জগহাটি এলাকায় দুই দল ডাকাতের মধ্যে গোলা গুলী হয়। এই সময় রাসেল গুলীবিদ্ধ হয়ে মারাযান। অন্যদিকে রাসেলের মামি সানিয়া খাতুন জানান, রাসেলকে পলিশ ধরে নিয়ে ঘাড়ে গুলী করে হত্যা করেছে। রাসেলের নামে কয়েকটি মামলা ছিল। এদিকে রাসেলের মা অধিকারকে জানান, রাসেল নিহত হওয়ার ১০-১২ দিন আগে পলিশ তাদের বাড়িতে তার ছেলেকে খুঁজতে আসে। তিনি মনে করেন যে, পলিশ তার ছেলেকে আটক করার পর গুলী করে করেছে।
এরআগে পুলিশের সঙ্গে পৃথক 'বন্দুকযুদ্ধে' রাজধানী ঢাকা, কক্সবাজার ও বগুড়ায় জেএমবি সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়। এরা হলো- সাগর ওরফে জুলহাস ওরফে সিফাত (৩০), আবু মুসা ওরফে আবুজার ওরফে আবু তালহা ওরফে রবিন ওরফে সামীউল (৩২) ও আবদুস সাত্তার ওরফে সব্বির আহমদ। ৬ ও ৭ ফেব্রয়ারি এসব ঘটনা ঘটে। রাজধানীর তাঁতীবাজারে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাগর ওরফে জুলহাস ওরফে সিফাত নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। সোমবার রাত ৩টার দিকে বন্দুকযুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি সাগর ডাকাত দলের সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলী ও ককটেলের খোসা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান জানান, একদল ডাকাত তাঁতীবাজারে ডাকাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে-এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলী ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায়। পুলিশও পাল্টা গুলী চালায়। এতে গুলীবিদ্ধ হয়ে একজন গুরুতর আহত হয়। পরে উদ্ধার করে মিডফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, নিহত ব্যক্তি ডাকাত সাগর বলে স্থানীয়রা শনাক্ত করেছে। সে এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। পুলিশের দাবি, গত কয়েক মাস আগে ইসলামপুরে এক ব্যবসায়ীকে গুলী করে ২৫ লাখ টাকা ছিনতাই মামলার অন্যতম আসামী তিনি। এছাড়া সাগরের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, বগুড়ার কাহালুতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নব্য জেএমবির পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়ক আবু মুসা ওরফে আবুজার ওরফে আবু তালহা ওরফে রবিন ওরফে সামীউল নিহত হয়। সোমবার গভীর রাতে উপজেলার পাতাঞ্জ গ্রামে কথিত এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, নিহত মুসা গুলশান হামলা মামলায় গ্রেফতার নব্য জেএমবির অন্যতম প্রধান নেতা রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ট সহযোগী। তার বাড়ি পাবনার সদর উপজেলায়। তবে তার বাবা ও গ্রামের নাম জানাতে পারেনি তারা। কাহালু থানার ওসি নুর-এ-আলম সিদ্দিকী জানান, সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে উপজেলার পাতাঞ্জ গ্রামে সড়কের পাশে একদল সন্ত্রাসী কোনো অপরাধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা টহল পুলিশের ভ্যান দেখে গুলী ছুড়ে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলী করে। এতে অন্যান্য হামলাকারীরা পালিয়ে গেলেও সেখানে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি আরও জানান, ঘটনাস্থলে একটি বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলী, একটি ম্যাগজিন ও তিনটি ধারালো অস্ত্র পাওয়া গেছে। পুলিশ ভ্যানে দুটি গুলীর চিহ্ন রয়েছে। গতকাল দুপুরে বগুড়া পুলিশের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, নিহত ব্যক্তি নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলের চার জেলার প্রধান সমন্বয়ক এবং গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা মামলায় গ্রেফতার রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ’ূ সহযোগী আবু মুসা ওরফে আবুজার ওরফে আবু তালহা ওরফে রবিন ওরফে সামীউল। তিনি গত বছরের ২০ মে কুষ্টিয়া সদরের মজুমপুর এলাকায় হোমিওপ্যাথি ডাক্তার ছানাউল্যাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যায় সরাসরি জড়িত।
অপরদিকে মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজারের মহেশখালীর হোয়ানক নয়াপাড়ার পূর্ব পাশে পাহাড়ে পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' আবদুস সাত্তার ওরফে সব্বির আহমদ নামে একজন নিহত হয় বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের দাবি, নিহত আবদুস সাত্তার একজন সন্ত্রাসী। তার নামে মহেশখালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের সাত সদস্য আহত হয়েছেন। নিহত আবদুস সাত্তার উপজেলার কেরুনতলী এলাকার মাজরপড়া গ্রামের মৃত নুরুসছাফার ছেলে। মহেশখালীর থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ভোরে হোয়ানক নয়াপাড়ার পূর্ব পাশে পাহাড়ে অভিযানে যায় পুলিশ। এসম
http://www.dailysangram.com/post/272305-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A7%9C%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A7%A8%E0%A7%AB-%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%A4