৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, শনিবার, ৩:৫৫

ভুয়া বন্ধকী সম্পদে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ব্যাংকের অর্থ: বাংলাদেশ ব্যাংক ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে

গাজীপুরে একই ভবনের চার দেয়ালে চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে সরকারি মালিকানাধীন একটি ব্যাংক থেকে ১২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন জনৈক গ্রাহক। এখন ওই ঋণ পুরোটাই খেলাপি হয়ে গেছে। কিন্তু বন্ধকী সম্পদ বিক্রি করে ঋণের ৫০ ভাগের এক ভাগও আদায় হবে না। বহুল আলোচিত হলমার্কের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের কাছে রাখা বন্ধকী সম্পদ বিক্রি করে ২০ ভাগের এক ভাগও আদায় হবে না। আদায় হবে না বিসমিল্লাহ নামের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বন্ধকী সম্পদ বিক্রি করে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। অথচ বিসমিল্লাহ নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বর্তমানে লাপাত্তা রয়েছেন।
এভাবে ভুয়া বন্ধকী সম্পদের বিপরীতে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণের আমানতের অর্থ। দীর্ঘ দিন ধরে এ কারসাজি চললেও এটা ঠেকাতে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভুয়া বন্ধকী সম্পদের মাধ্যমে ঋণের নামে ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে না পারে এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঋণতথ্য কেন্দ্রীভূত করার মতো বন্ধকী সম্পদেরও ডাটাবেজ তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, কোনো ঋণখেলাপি অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারে সে জন্য গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) নামের একটি বিভাগ রয়েছে। সাধারণত ৫০ হাজার টাকার নিচে ঋণখেলাপির তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সংগ্রহ করে থাকে। আর ৫০ হাজার টাকার ওপরে হলে তা ব্যাংকের পাশাপাাশি বাংলাদেশ ব্যাংক সংগ্রহ করে থাকে। আগে কোনো ব্যক্তি ঋণ নিতে গেলে তার ঋণতথ্য যাচাই করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যেতে হতো সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে। এ জন্য অনেক সময় সময়ক্ষেপণ হতো। পরে সিআইবি অনলাইন হওয়ার পর এখন একটি ব্যাংকে বসেই গ্রাহকের ঋণতথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। এর ফলে আগের মতো সময় ক্ষেপণ হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একই জমি একাধিক ব্যাংকে বন্ধক রেখে যেন কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ধকী সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রাহকের ঋণতথ্যের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেও তা ডাটাবেজ আকারে সংগ্রহ করতে হবে। কোনো সম্পদ বন্ধক দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট সম্পদের বিপরীতে অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে কি না তা যাচাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধŸতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এমনিতেই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। ঋণ অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মোট খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই কুঋণ বা মন্দ ঋণ। মন্দ ঋণের কারণে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে গেছে। এ কারণেই সরকারি ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে মূলধন ঘাটতি। বন্ধকী সম্পদ ঋণতথ্যের মতো কেন্দ্রীভূত করা হলে ব্যাংকের ঋণঝুঁকি কমে যাবে বলে তিনি আশা করেন।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/183286