১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৩৩

পাঠ্যপুস্তকে বানান ভুলের ফিরিস্তি

 

পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে এনসিটিবি। এ বছর বোর্ড যে বই ছেপে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিলো, তাতে বাংলা বানান ভুল, এমনকি বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নামে ভুল রীতিমতো বেদনাদায়ক ও হতাশা উদ্রেককারী।
অষ্টম শ্রেণীর জন্য নির্ধারিত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইটির প্রসঙ্গ কথা থেকে শুরু করে পুরো ১৩২ পৃষ্ঠার বইয়ে ১২৬টি বাংলা শব্দের বানান ভুল চোখে পড়ে। প্রসঙ্গ কথায় চেয়ারম্যান যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে অন্ত্য-য দিয়ে লেখা হয়েছে ছয় নম্বর লাইনেÑ চেষ্টা করা হযেছে। আর ৯ নম্বর লাইনে দন্ত্য-ন দিয়ে ছাপা হয়েছেÑ সম্যক ধারনা। তিন নম্বর পৃষ্ঠার ছয় লাইনে সিরাজউদ্দৌলার স্থলে লেখা হয়েছে ‘সিরাজদ্দৌলা’ এবং আট নম্বর পৃষ্ঠার ২০ নম্বর লাইনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্থলে ছাপা হয়েছে ‘ঈশ্চরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’।
‘স্ট’ দিয়ে যে খ্রিস্ট, খ্রিস্টাব্দ, খ্রিস্টধর্ম, খ্রিস্টপূর্ব, তা ছয়টি স্থানে ছাপা হয়েছে ‘মূর্ধন্য ষ এ ট’ দিয়ে। (পৃ. ৮, ৬৯, ১০৯, ১১০) ক্ষতিগ্রস্ত বানানটি ‘ক্ষতিগ্রস্থ’ হয়েছে ১৪টি স্থানে (পৃষ্ঠা ৪২, ৭৮, ৮০, ৮১, ৮৩, ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯৩, ১২৮, ১২৯)। পাঁচটি স্থানে গ্রীন হাউস গ্রীনহাইস ও গ্রীণহাউসরূপে ছাপা হয়েছে (পৃষ্ঠা-৭৯, ৯২, ৯৩)। দশটি স্থানে ২৪ শে, ২৫ শে ও ২৬ শে মার্চ ২৪এ, ২৫, ২৬এ ছাপা হয়েছে (পৃষ্ঠা ১৬, ১৭)। দু’টি স্থানে মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্ত না করে ‘বাঁধাগ্রস্থ’ করা হয়েছে (পৃষ্ঠা ২৩, ৮২)। নয়টি স্থানে দু’টি বানান ‘দুইটি’ ছাপা হয়েছে (পৃষ্ঠা ৩৩, ৬৭, ৭১, ৯৫, ৯৬, ৯৯, ১০৮)।
অবদান দু’টি স্থানে ‘আবদান’ হিসেবে ছাপা হয়েছে (পৃষ্ঠা- ৫৭)। পাকিস্তানি তিনটি স্থানে ‘পাকস্তানি’ হিসেবে ছাপা হয়েছে (পৃষ্ঠা ২৬)। ছাত্রী নাওমি হয়েছে ছাত্রি নাওমি (পৃষ্ঠা ২৯)। হৃৎপিণ্ড ‘হৃদপিণ্ড’ (পৃষ্ঠা ২৭), ত্বরান্বিত হয়েছে ‘তরান্বিত’ (পৃ: ৩০)। ‘প্রতœতত্ত্ব’, ‘প্রতœনিদর্শনের’, ‘প্রতœনিদর্শনগুলোর’-এই শব্দগুলো ছাপা হয়েছে ত/এ ম দিয়ে (পৃষ্ঠা ৪৭, ৪৩ ও ৪৬)।
এ ছাড়া ইংল্যান্ডের রাজা, নির্মম মৃত্যু, মন্বন্তর, দানা বাঁধতে, ঘরে ঘরে দুর্গ, জামায়াতে ইসলামী, বধ্যভূমিতে, আঙুলে, সংস্পর্শই, আত্মসমর্পণ, ঊর্ধ্বগতি, ঊর্বরাশক্তি, ঊর্বর, আয়ত্ত, প্রবিষ্ট, ইলেক্ট্রনিক কমার্স, ইদানীং, চাকরিসূত্রে, বৈশিষ্ট্য, দায়ী, নকশা, রাষ্ট্রপ্রধান, পাঁচসালাসহ, বিস্ফোরণ, বিস্ময়কর, রেস্তোরাঁ, ব্যাংক-বীমা, প্রবৃদ্ধির হার, অর্থবছরের, জাদুঘর, বাঁধা ও পরিষ্কার, কারিগরি, কল্যাণমুখী, মাপকাঠিতে, দুরবস্থা, গৃহিণীর, দারিদ্র্যের, অভ্যন্তরীণ, পরিমাণ, নদীভাঙন, সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, বাধার সম্মুখীন, বেষ্টনীর, পরিষ্কার, বাধাগ্রস্ত, বন উজাড়, কার্বনডাই অক্সাইডের, লক্ষ্যভ্রষ্ট, প্রধান কারণ, উদ্ভূত, লুঙ্গি পরে, রপ্তানি, খাদ্যাভ্যাসে, জীববৈচিত্র্য, হাঁটছিল, হঠাৎভিড়, হীনম্মন্যতারÑ এই বানানগুলো ছাপা হয়েছে ইংলাণ্ডের রাজা (৪ পৃ:), ‘নিমর্ম মৃত্যু (পৃ: ৪), মণ্বত্তর (পৃ: ৭), দানা বাধতে (পৃ: ৯), ঘরে ঘরে দূর্গ (পৃ: ১২), জমায়েতে ইসলামি (পৃ: ২৭), বদ্ধভূমিতে (পৃ: ২৭), আঙ্গুলে (পৃ: ২৭), সংর্স্পশই (পৃ: ৩৩) আত্মসমর্পন (পৃ: ৩০), উর্ধ্বগতি, উর্বরাশক্তি, উর্বর (পৃ: ৩৩, ৮১, ১১৯, ১২১), আয়ত্ব (পৃ: ৪৮), প্রবিষ্ঠ (পৃ: ৪৯), ইলেক্ট্রনিক কর্মাস (পৃ: ৫২), ইদানিং (পৃ: ৫৪, ৮৩), চাকরীসূত্রে (পৃ: ৬৪), বৈশিষ্ঠ্য (পৃ: ৬৬), দায়ি (পৃ: ৬৬), নকঁশা (পৃ: ৬৮) রাষ্টপ্র্রধান (পৃ: ৭১), পাঁচশালাসহ (পৃ: ৭৪), বিষ্ফোরণ (পৃ: ৭৮), বিষ্ময়কর (পৃ: ৭৮), রে¯েঁÍারা, ব্যাংক-বিমা (পৃ: ৫৭), পৃবৃদ্ধির হার (পৃ: ৫৭), আর্থবছরের (পৃ: ৫৭), যাদুঘর (পৃ: ৪৭), বাঁধা তা পরিস্কার (পৃ: ৫৯), কারিগরী (পৃ: ৫৯), কল্যাণমূখী (পৃ: ৫৯), মাপকাটিতে (পৃ: ৬০), দুরাবস্থা (পৃ: ৬০), গৃহিনীর (পৃ: ৬২), দারিদ্রের (পৃ: ৬৩), অভ্যন্তরীণ, পরিমান (পৃ: ৬৩), নদীভাঙ্গন (পৃ: ৮২ ও ৮৫), সৃষ্ট ঘূর্নিঝড় (পৃ: ৮২), বাঁধার সম্মুখীন (পৃ: ৮৬), বেস্টনির (পৃ: ৮৭), পরিস্কার (পৃ: ৯১), বাধাগস্ত (পৃষ্ঠা : ১২১), বনউজার (পৃ: ৯২), কার্বণ ডাই অক্সাইড (পৃ: ৯২), লক্ষভ্রষ্ট (পৃ: ১০), প্রধাণ কারণ (পৃ: ১০৪), উদ্ভুত (পৃ: ১১১), লুঙ্গি পড়ে (পৃ: ১১৩), রপ্তানী (পৃ: ১১৫), খাদ্যাভাসে (পৃ: ১১৫), জীববেচিত্র্য (পৃ: ১২১), হাটছিল, হঠাৎ ভীড় (পৃ: ১২৬), হীনমন্যতার (পৃ: ১০০ ও পৃ: ১০৩)। এ ছাড়া দুর্যোগ ‘দূর্যোগ’ হিসেবে ছাপা হয়েছে ৪ স্থানে (পৃ: ৯৩)। সূচিপত্রে এগারো ও বারোকে ‘এগার ও বার’ হিসেবে ছাপানো হয়েছে।
এ ছাড়া এক শব্দকে ভেঙে দুই শব্দ হিসেবে ছাপা হয়েছে; যেমন হত দরিদ্র, কিছু সংখ্যক, নব বর্ষকে, গুণগত মান, মীর জাফর। অন্য দিকে দুই শব্দ এক করে ছাপা হয়েছে যা পৃথক থাকা উচিত।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/196452