১৫ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:১০

সিন্ডিকেটের কবলে রাজধানীর কোরবানির পশুহাট

রাজধানীর কোরবানির পশুহাট সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। গত কয়েক বছরে একচ্ছত্রভাবে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা টেন্ডারের মাধ্যমে কোরবানির পশুহাট ইজারা নেন। তবে এ বছর আরেক ধাপ এগিয়ে কোনো টেন্ডার ছাড়াই হাট বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। এ কারণে সিটি করপোরেশন টেন্ডার আহ্বান করলেও তাতে অংশ নিচ্ছেন না নেতারা। এমনকি অনেকে দরপত্র কেনার পরও তাদের জমা দিতে দেয়া হয়নি। এতে বিপুল রাজস্ব হারাতে যাচ্ছে সরকার।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবার ২৩টি কোরবানির পশুহাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৩টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন ১০টি। দুই সিটি করপোরেশন গত বছর ২০টি হাট ইজারা দিয়েছিল। ওই বছর সব ক’টি হাটই সরকারি দলের নেতারা পেয়েছিলেন। টেন্ডারের মাধ্যমে হওয়ায় তাতে সরকার রাজস্ব পেয়েছিল। কিন্তু এ বছর টেন্ডার আহ্বান করলেও তাতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি দরপত্র কেনার পরও জমা দিতে পারেননি অনেকে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১৩টি হাটের বিপরীতে টেন্ডার আহ্বান করলেও প্রথম দফায় সাতটি হাটের বিপরীতে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। আর বাকি ছয়টির মধ্যে দু’টিতে মাত্র একটি করে দরপত্র জমা পড়ে। ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যে সাতটি হাটের বিপরীতে কোনো দরপত্র জমা পড়েনি ওই সব হাটের জন্য দরপত্র বিক্রি হয় ২০টি। এর মধ্যে মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গার হাটের জন্য সাতটি, ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ একটি, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গার জন্য একটি, আরমানিটোলা খেলার মাঠসংলগ্ন খালি জায়গার জন্য ছয়টি, ধুপখোলা ইষ্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গার জন্য একটি, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গার জন্য চারটি দরপত্র কেনা হয়। তবে সাদেক হোসেন খোকা মাঠের আশপাশের খালি জায়গার হাটের বিপরীতে কোনো দরপত্র কেনেননি কেউ। এ দিকে যে ছয়টি হাটের বিপরীতে দরপত্র জমা পড়েছে সেখানে অনেকে দরপত্র কিনে জমা দিতে পারেননি। কামরাঙ্গীরচর হাটের জন্য তিনটি দরপত্র কিনলেও জমা পড়ে মাত্র একটি, শ্যামপুরে হাটের জন্য পাঁচটি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে একটি, রহমতগঞ্জ হাটের জন্য চারটি বিক্রি হলেও জমা পড়ে তিনটি, পোস্তগোলা হাটের জন্য সাতটি বিক্রি হলেও জমা পড়ে পাঁচটি, ঝিগাতলার জন্য সাতটি বিক্রি হলেও জমা পড়ে পাঁচটি। তবে শাজাহানপুর হাটের জন্য চারটি দরপত্রের সবগুলোই জমা পড়েছে। একইভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রথমে সাতটি হাটের টেন্ডার আহ্বান করলেও একটি হাটের বিপরীতে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। অন্যগুলোতেও অল্প দরপত্র জমা পড়ে। ডিএনসিসি নতুন করে আরো তিনটি হাটের টেন্ডার আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নিয়মানুযায়ী প্রথম দফা টেন্ডার আহ্বানের পর ইজারাদার না পাওয়া গেলে আরো দুইবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তিন দফা টেন্ডার আহ্বানের পর কোনো ইজারাদার না পাওয়া গেলে তখন খাস আদায় করে সিটি করপোরেশন। এ জন্য স্থানীয় লোকদের ওপরই দায়িত্ব দেয়া হয়। তখন যা আয় হয় খরচ বাদে সে টাকা সিটি করপোরেশনে জমা হয়। কিন্তু বিগত দিনে দেখা গেছে খাস আদায়ের ক্ষেত্রে যে প্রকৃত আয় হয় তার পুরোটা সিটি করপোরেশনে দেয়া হয় না। বেশির ভাগ অংশই দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, টেন্ডারে অংশ নিলে নির্ধারিত সরকারি দরের বেশি দর দিয়ে হাট ইজারা নিতে হয়। এ জন্য এবার সিন্ডিকেট করে কোনো দরপত্রই জমা দেয়া হচ্ছে না। যাতে এক সময় সিটি করপোরেশন বাধ্য হয়ে খাস আদায়ে যেতে বাধ্য হয়। তখন এসব ব্যক্তি যোগসাজশ করে কম দরে হাট বাগিয়ে নিতে পারেন।
এ দিকে ঢাকার দুই সিটির কোরবানির পশুহাটের দরপত্রে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের বেশির ভাই সরকারি দলের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুহাট নিতে টেন্ডারে অংশই নেননি। কয়েক বছর ধরেই এ অবস্থা চলে আসছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। জমা পড়া দরপত্রের কাগজপত্র ঠিক থাকলে শীর্ষ দরদাতাকে ইজারা দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কে কোন দল করেন, তা বিবেচ্য বিষয় না। অবশ্য সরকারি দরের চেয়ে কম দর হলে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে। এবার সাতটি হাটের মধ্যে একটিতে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি বলেও জানান তিনি। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, নতুন করে আরো তিনটি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই হাটগুলোর জন্য শিডিউল ও দরপত্র বিক্রির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।
এই বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিয়ম মেনে যদি সব হাট কোনো দলের লোক পেয়ে যান, তাহলেও কিছু করার নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/332972