৪ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৩:১৭

দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার বিস্তৃতি ॥ পরিস্থিতির অবনতি

অতিভারী বৃষ্টিপাতে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির বিস্তার ও অবনতি হয়েছে। বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমন তথ্য জানিয়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে সাত জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বানের পানিতে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া, হাতিয়া ও চিলমারি, যমুনার পানি সাঘাটায়, সুরমার পানি কানাইঘাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জে, কুশিয়ারার পানি অমলশীদ, শেরপুর-সিলেট, মারকুলি ও শেওলায়, মনু’র পারি মনু রেলব্রিজ ও মৌলভীবাজারে, খোয়াইয়ের পানি বল্লা ও মৌলভীবাজার এবং সুমেশ্বরীর পানি কলমাকান্দায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পাউবো এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীগুলোর পানির সমতল বাড়ছে, যা আগামী তিন দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, ভুগাই ও কংস নদীগুলোর পানির সমতল কমেছে, অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল বেড়েছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া সংস্থার তথ্যানুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী এবং ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) নাগাদ জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা নদী সংলগ্ন কতিপয় পয়েন্টে পানির সমতল বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদ সংলগ্ন নি¤œাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নি¤œাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। পাউবো জানিয়েছে, বিভিন্ন নদ-নদীতে তাদের পর্যবেক্ষণাধীন ১১০টি স্টেশনের মধ্যে বুধবার পানির সমতল বেড়েছে ৮৩টিতে, কমেছে ২৭টিতে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে ১৬ স্টেশনের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার বিকেলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে গেছে নদের অববাহিকার চর, দ্বীপ চর ও নি¤œাঞ্চল। অনেক বসতবাড়িতে পানি চলে এসেছে। কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ-ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। নদী তীরবর্তী বসতবাড়িতে পানি উঠায় অনেকে গবাদিপশু আর আসবাবপত্র নিয়ে পার্শ্ববর্তী বাঁধে আশ্রয় নিলেও অনেকে বসতবাড়িতে উঁচু মাচান করে সেখানেই রয়েছেন। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা চরের আনোয়ার বেগম মিডিয়াকে বলেন, গত দুই দিন থেকে ঘরের ভেতর পানি। মাচান উঁচু করে সেখানেই আছি সবাই। খাওয়া-দাওয়া ও যাতায়াতের খুব সমস্যা হচ্ছে। ঘর থেকে বের হতে গেলে নৌকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাবলু মিয়া বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে আমার ইউনিয়নের অবস্থা খুব খারাপ। কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অসংখ্য পরিবারের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে মৌলভীবাজার জেলার তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারণে নদী তীরবর্তী লোকালয়ের তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলার মনু, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টায় মনু নদীর পানি রেলওয়ে ব্রিজে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার, চাঁদনীঘাট ব্রিজে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর পানি রেলওয়ে ব্রিজে বিপৎসীমার ১৬৮ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী শেরপুর ব্রিজে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলায় বন্যা কবলিত হয়েছে। তিন লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢল নামার কারণে নদ-নদী ও হাওরের পানি আবারও বাড়ছে। কুলাউড়া ও জুড়ীর পানি হাকালুকি হাওরে গিয়ে পড়ে। কিন্তু হাওড়ের পানি ধীর গতিতে নামছে। ওই হাওড়ের পানি নামে কুশিয়ারা নদী দিয়ে।

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা : ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজারে মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শহরের মনু সেতুর কাছে চাঁদনীঘাটে মনু নদের পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার এবং সদর উপজেলার শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবার ২ জুলাই ২০২৪ ইং, সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায় কুশিয়ারার পানি উপচে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জনপদে প্রবেশ করেছে। এ এলাকায় কুশিয়ারার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নেই। গ্রামীণ সড়কটিই প্রতিরক্ষা বাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নতুন করে ভাঙনের ফলে আশপাশের গ্রামগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার রাত থেকে মৌলভীবাজারে মনু, কুশিয়ারাসহ জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। মনু নদের পানি মৌলভীবাজার শহরের মনু সেতুর কাছে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৯ দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। একই জায়গায় আজ সকালে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে সদর উপজেলার শেরপুরে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কুশিয়ারা নদীর পানি ছিল ৮ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার বা বিপৎসীমার নিচে। আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টার সময় সেখানে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।

কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের শেরপুরের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। এর মধ্যে আজ সকালের দিকে হামরকোনা মসজিদের কাছে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে গ্রামের ভেতর পানি প্রবেশ করছে। ধলাই নদের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী নদীর পানি অনেক দিন ধরেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সকাল ৯টার সময় জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

আজ সকালে খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনার ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ ফুট জায়গা ভেঙে গেছে। ওই ভাঙা অংশ দিয়ে গ্রামের দিকে পানি ঢুকছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, পানিপ্রবাহ বন্ধ করা না গেলে হামরকোনা, ব্রাহ্মণগ্রাম ও শেরপুর বাজারের একাংশ প্লাবিত হবে। পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খলিলপুর ইউনিয়নের যেদিকে বাঁধ ভেঙে কুশিয়ারা নদীর পানি গ্রামে ঢুকছে, সে এলাকায় পাউবোর কোনো বাঁধ নেই। একসময় প্রতিরক্ষা বাঁধ হলেও এটি এখন মূলত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একটি গ্রামীণ সড়ক। কুশিয়ারা নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠলে বাঁধটির বিভিন্ন স্থান ভেঙে এলাকায় পানি ঢোকে।

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, কুশিয়ারার পানি বাড়াটা ভয়ের। কুশিয়ারায় পানি বাড়লে মনুর পানি কমবে না। কুশিয়ারা নদীর খলিলপুর এলাকায় পাউবোর স্থায়ী কোনো বেড়িবাঁধ নেই। হামরকোনায় এলজিইডির রাস্তা ভেঙে খলিলপুর ইউনিয়নে পানি ঢুকছে। ভাঙা মেরামতের জন্য বালুভর্তি এক হাজার সিন্থেটিকের বস্তা পাঠিয়েছি বলে জানান তিনি।
ছাতকে বানের পানিতে ভেঙেছে সড়ক ॥ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুই উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষের

ছাতক (সুনামগঞ্জ): সাম্প্রতিক বন্যায় ছাতক-আন্ধারীগাঁও-সুনামগঞ্জ সড়কের আন্ধারীগাঁও এলাকায় বিশাল ভাঙনে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দু’উপজেলার অন্তত ৪ টি ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এসব মানুষ অনেকটাই বন্দীদশায় দিনানিপাত করছেন। গত ২০ জুন ছাতক-সুনামগঞ্জ পাকা সড়কের আন্ধারীগাঁও এলাকায় ঢলের পানির ধাক্কায় ভেসে যায় সড়কের একটি অংশ । বিষয়টি অতি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আমলে নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বিকল্প পথ সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগ গ্রহণ করেন নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ২২ জুন ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেন নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কিরণ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। এসময় জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে ১ লাখ, উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার ও ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ শুরু করা হয়। কাজের বেশ অগ্রগতিও ইতিমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ ছাতক-আন্ধারীগাঁও-সুনামগঞ্জ সড়ক মেরামতের জন্য অনেক আগেই একটি টেন্ডার হলেও ঠিকাদারের গাফিলাতির কারণে এখনো পর্যন্ত এ সড়কে কাজ শুরু করা হয়নি।

নেত্রকোনায় ৫৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকেছে ঢলের পানি
নেত্রকোনা সংবাদদাতা: নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম।

কোথাও সামান্য কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসতে পেরেছে। এমনও বিদ্যালয় রয়েছে সেখানে কোনো শিক্ষার্থীই যায়নি। বিশেষ করে ভারি বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে এই অবস্থা চলছে। বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান।
এদিকে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রধান নদী কলমাকান্দার উব্ধাখালির পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে করে উপজেলার আটটি ইউনিয়েনের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সদর, পোগলা, বড়খাপন ও কৈলাটি ইউনিয়েনের নি¤œাঞ্চল বেশি প্লাবিত হওয়ায় সেখানকার মানুষের বাড়ি-ঘরেও পানি ঢুকেছে।

বন্যার অবনতি হলে তা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। এমনটাই জানিয়েছেন কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান।

অন্যদিকে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে বুধবার সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত জেলার সোমেশ্বরী নদীর পানি কিছুটা কমতির দিকে। উব্ধাখালি আর কংশের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। কিছুটা বেড়েছে ধনু নদীর পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, উব্ধাখালি নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কংশ নদের পানি জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর হাওড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধনু নদের পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সব মিলিয়ে জেলায় বন্যার পানিতে গ্রামীণ সংযোগ সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। গো-খাদ্য নিয়ে কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। কোথাও কোথাও বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।

ঝিনাইগাতী সদর বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত
৩ নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে
শেরপুর সংবাদদাতা: গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের সব নদ-নদীর পানি ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয় প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে মহারশি নদীর বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজার, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, অফিসসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নালিতাবাড়ীর বাঘবের ইউনিয়নের সন্ন্যাসীরভিটা এলাকায় চেল্লাখালি নদীর বাঁধ ভেঙে এবং ভোগাই নদীর গড়কান্দা এলাকায় বাঁধ ভেঙে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন বেশ কিছু এলাকার মানুষজন। ভেসে গেছে বেশ কিছু মাছের ঘের।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে ও পাড় উপচে উপজেলা সদরসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে সেখানে গেজমিটার পানির মাপা থাকায় একইসাথে বেড়েছে ঝিনাইগাতী উপজেলার সোমেশ্বরী এবং সদর উপজেলার মূগী ও পুরাতন যাচ্ছে ব্রক্ষপূত্র নদের পানি।

স্থানীয়রা জানান, চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও শেরপুর সদর উপজেলায় স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এতে আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। পাহাড়ি ঢলের প্রবল ঘের ভেসে গেছে। বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকলে অবস্থার সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় আরও অবনতি হতে পারে। কৃষি শেরপুরে প্রায় ২৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙ বেশকিছু টিনের ঘর ভেঙে গেছে। নিচু অঞ্চলের ঘর-বাড়ি ও উপজেলা সদর বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা।

ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমাযুন দিলদার জানান, ঝিনাইগাতী উপজেলার প্রায় ২০০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ও আউশ ধান তলিয়ে গেছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে ফসলের ক্ষতি হবে। ঢলের পানিতে বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, আমি বাঁধর ভাঙা স্থান পরিদর্শন করেছি। ইতোমধ্যে নদীর স্থানগুলোতে জিও ব্যাগ ফেলে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল জানান, পাহাড়ি ঢলের পানি খুব দ্রুতই নেমে যায়। ইতোমধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজারের পানি নেমে গেছে। এরপরও যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা আশা করছি তেমন ক্ষয়ক্ষতি হবে না। য়েছে। সেইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। একই কথা জানান নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা।

https://www.dailysangram.info/post/560338