১৩ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১১:২৭

নিয়োগে দীর্ঘ বিলম্ব, হতাশা

৩৬তম বিসিএস পরীক্ষা। প্রাক-বাছাই পরীক্ষা থেকে এখন পর্যন্ত কেটে গেছে ৩৭ মাস। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে তাও ৮ মাস আগে। এরপরেও নিয়োগ প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হয়নি। পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা এসব ক্যাডার নিয়োগের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। কবে প্রজ্ঞাপন জারি হবে তা বলতে পারছে না পিএসসি কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

দীর্ঘসূত্রতার কোনো কারণ জানতে চান না সুপারিশপ্রাপ্ত এ প্রার্থীরা। তারা চান দ্রুত নিয়োগের প্রজ্ঞাপন। বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত এসব প্রার্থী অনেকেই আগের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ বেকার বসে থেকে হতাশা ও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। আগের কর্মস্থল থেকে অব্যাহতি চেয়ে অনেকে আবেদন করে পড়েছেন বিপাকে। কবে নাগাদ কাঙ্ক্ষিত এ চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন, সে পথে চেয়ে রয়েছেন। তবে ক্যাডারে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় যারা নন-ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছিলেন তারা ইতিমধ্যেই কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।
৩৬তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত কয়েকজন প্রার্থী মানবজমিনের কাছে তাদের হতাশা ব্যক্ত করেন। এদের প্রত্যেকেই সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে তাদের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়। পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশকৃত এক প্রার্থী বলেন, আমি আগে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতাম। সেটি ছেড়ে দিয়েছি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পরে ভাবছিলাম কয়েকদিনের মধ্যেই নিয়োগ পেয়ে যাবো। কিন্তু পাঁচ মাসের বেশি হয়ে গেল এখনো নিয়োগের খবর নেই। আগের কোনো বিসিএসে সুপারিশের পরে এত সময় কখনো লাগেনি। ৩৬তম বিসিএসে এমন কেনো হলো সেটা বুঝতে পারছি না।

পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত আরেক প্রার্থী বলেন, একটি পরীক্ষার জন্য এতটা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েও চাকরিতে যোগদান করতে এত সময়ক্ষেপণ কেন। ৮-৯ মাস হলো চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তার পরেও সরকার গেজেট দিচ্ছে না। আশাকরি আমাদের বিষয়টা সরকার দ্রুত বিবেচনা করবেন। ৩৬তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক ক্যাডার প্রার্থী ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা ব্যক্ত করে লেখালেখি করেন। কেন তাদের নিয়োগ হচ্ছে না সে বিষয়ে জানতে চান সরাকরের কাছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পিএসসি বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য যাদের তালিকা সুপারিশ করে তাদেরকে গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রশাসন যাচাই-বাছাই করে দেখে। ৩৬তম বিসিএসের প্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষও হয়েছে। তবে ওই তালিকার কিছু প্রার্থীর ব্যাপারে বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় তাদের তথ্য পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে ৩৫তম বিসিএসের ৫৫ জন প্রার্থীর নিয়োগে প্রজ্ঞাপন হলেও তাদের পদায়ন করা হয়নি। এদের ব্যাপারেও গোয়েন্দা সংস্থার নেতিবাচক প্রতিবেদন ছিল। ভুক্তভোগী এসব ক্যাডারের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণাল সচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন। সচিব তাদের কথা শুনে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন। একটি সূত্র জানায়, পদায়ন না পাওয়া ৫৫ জন ক্যাডারের মধ্যে ২৮ জনের ব্যাপারে নতুন করে আবার তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) ৩৬তম বিসিএসে ২১৮০টি পদের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০১৫ সালের ৩১শে মে। এরপরে ৮ই জানুয়ারি, ২০১৬ প্রাক-বাছাই পরীক্ষা, ২০১৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা এবং সর্বশেষ ১২ই মার্চ ২০১৭ থেকে ৭ই জুন অনুষ্ঠিত হয় মৌখিক পরীক্ষা। আর ২০১৭ সালের ১৭ই অক্টোবর ২ হাজার ৩২৩ জনকে চূড়ান্তভাবে ক্যাডার পদে সুপারিশ করে তালিকাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি। এরপরে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। সুপারিশপ্রাপ্ত ক্যাডারদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও শেষ হয়েছে ২০১৮ এর ১৮ই মার্চের মধ্যে। এরপরেও কেন তারা নিয়োগ পাচ্ছেন না- এটাই তাদের প্রশ্ন। তবে ভিন্নচিত্র দেখা গেছে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগে সুপারিশ করা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। পর্যাপ্ত ক্যাডার পদ না থাকায় ৩৬তম বিসিএসের ৩ হাজার ৩০৮ জনকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগে সুপারিশের জন্য রাখা হয় উত্তীর্ণদের তালিকায়। ক্যাডার প্রার্থীদের গেজেট না হলেও নন-ক্যাডার পদের প্রার্থীদের নিয়োগে ১৭ই মে, ২০১৮ প্রজ্ঞাপন হয় এবং তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন গত ২১শে মে। সমাজসেবা অফিসার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিলো তাদের।

বিসিএস নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদাত হোসেন বলেন, নিয়োগ প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। পিএসসি মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে নিয়োগের সুপারিশ করে তালিকা তাদের কাছে পাঠায়। এরপরে যে সময় লাগে সেটা পিএসসির কিছু করার নেই। তবে বারবার বিসিএস পরীক্ষার সবগুলো ধাপের সময় কমানোর কথা বলা হলেও এটা সম্ভব নয়। বিভিন্ন কারণেই সময় লেগে যায়।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, একটি বিসিএস নিয়োগে এত দীর্ঘসময় কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনা অতীব জরুরি। আমি বারবার বলেছি এবং লিখেছি একটি বিসিএস পরীক্ষায় সকল প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=125432&cat=3/