তেজগাঁও রেলগেট থেকে সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই সারিবদ্ধভাবে ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ছবিটি শুক্রবার বিকেলে তোলা।
১০ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১১:৪৫

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড

সড়ক আবার ট্রাকের দখলে

তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন রেলগেট-সাতরাস্তা সড়কটি আবার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপের দখলে চলে যাচ্ছে। আড়াই বছর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এই সড়ক দখলমুক্ত করেছিল।

গত শুক্রবার দুপুরের পর প্রায় দুই ঘণ্টা এই সড়কটিতে অবস্থান নিয়ে দেখা যায়, তেজগাঁও রেলগেট থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই সারিবদ্ধভাবে ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। শ্রমিকেরা কয়েকটি ট্রাক মেরামতের কাজও করছেন। কোথাও কোথাও একটি ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যানের পাশাপাশি আরেকটি রাখায় রাস্তা অনেকটা সরু হয়ে এসেছে। এতে ছুটির দিনেও চলাচলকারী যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ট্রাক ঘোরানোর সময় লেগে যাচ্ছে যানজট।

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক ফেডারেশনের হিসাবে, এই ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি মালবাহী যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় এক হাজারের মতো গাড়ি স্ট্যান্ডের ভেতরে রাখার ব্যবস্থা আছে। বাকিগুলো এই সড়কসহ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার অন্য সড়কগুলোয় রাখা হয়।
প্রায় এক শ ফুট প্রশস্ত রেলগেট-সাতরাস্তা সড়ক ধরে ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে তেজগাঁও মহাখালী ও বনানীর দিকে যাওয়া যায়। গুলশান-নিকেতনে যাওয়ার সহজ রাস্তাও এটি। এই রাস্তা ব্যবহার করে তেজগাঁও এলাকার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল কলেজ, জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট ও কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রধান কার্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাওয়া-আসা করেন। এ ছাড়া সড়কটি ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান পথ।
আড়াই বছর আগেও এই সড়কটি যাত্রীদের কাছে ছিল বিভীষিকার মতো। অবৈধ পার্কিং ও যানজটের কারণে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কটি পার হতে কখনো কখনো ঘণ্টা পেরিয়ে যেত। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগে সড়কটি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের দখল থেকে মুক্ত করা হয়। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। উচ্ছেদে সফল হওয়ার পর ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করে তোলে। সড়ক বিভাজক দিয়ে তাতে লাগানো হয় গাছ। ফুটপাত সংস্কার করে হাঁটার উপযোগী করা হয়। কিন্তু এখন ট্রাক রাখার কারণে ফুটপাত ঢাকা পড়ে গেছে। এর বেশির ভাগ জায়গা দিয়ে চলাচলের উপায় নেই।

বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত আড়াই বছরে দু-একবার এই রাস্তায় আবার ট্রাক রাখতে দেখেছি। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে এগুলো থেকেই যাবে।’ এ রকম মনে হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়র আনিসুল হক বেঁচে থাকাকালে একধরনের নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন মনে হচ্ছে সেই নিয়ন্ত্রণটুকু সিটি করপোরেশনের নেই।’
একই রকম আশঙ্কা ব্যক্ত করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রাজীব হাসান। ফার্মগেট থেকে তিনি প্রতিদিন এই পথ ধরে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখন থেকেই এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে খুব অল্প দিনের মধ্যেই সড়কটি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।’
সড়কটি আগের অবস্থায় কোনোভাবেই ফিরবে না দাবি করে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী বলেন, ‘আমরা এটা কখনোই হতে দেব না।’ তাহলে সড়কের ওপর আবার ট্রাক কেন রাখা হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে এই অবস্থা ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার সময় থেকেই চলছে। আমরা সবাইকে বলছি সড়কের ওপর যেন কোনো ট্রাক না রাখা হয়। কেউ শুনছে। কেউ শুনছে না। আগামীকাল শনিবার এ জন্য একটা জরুরি বৈঠকও ডাকা হয়েছে।’

এ ছাড়া সড়কটি দখলমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে রুস্তম আলী আরও কিছু প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগেও সারা দেশে মালবাহী যানবাহনের সংখ্যা ছিল দেড় লাখের মতো। এখন তা তিন লাখের ওপরে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় সবকিছু ঠিকঠাক রাখাটা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।’
জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যেহেতু নিয়মিত ফোর্স নেই তাই সব সময় এটি নজরদারিতে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে ট্রাক মালিক ফেডারেশনের নেতারা আমাদের কথা দিলেও সব সময় তাঁরা সেটা রাখতে পারেন না। এ ছাড়া সড়কটি দখলমুক্ত রাখতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। তাঁরা সেই ভূমিকা কতটুকু পালন করতে পারছেন সেটাও একটা প্রশ্ন।’

http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1529121