৭ জুলাই ২০১৮, শনিবার, ১০:৪৪

ধরাছোঁয়ার বাইরে রাজধানীর খুনিরা

নিরাপদেই থেকে যাচ্ছে রাজধানীর খুনিরা। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটিয়েও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি, সরকারদলীয় নেতাদের খুন করেও গ্রেফতার হতে হচ্ছে না ওই সব খুনিকে। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এসব খুনিকে যারা নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের অনেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইদানীং রাজধানীতে চাঞ্চল্যকর যেসব খুনের ঘটনা ঘটেছে তার বেশির ভাগ খুনিই অধরা রয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজধানীর বাড্ডায় দু’টি হত্যাকাণ্ডের খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব হত্যার নেপথ্যে প্রভাবশালীরা জড়িত হত্যাকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ১৫ জুন রাজধানীর বাড্ডায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী। উত্তর বাড্ডার বায়তুস সালাম জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে বের হওয়ার পর সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনার সাথে জড়িত মূল খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, ডিশ ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিদেশে অবস্থানরত ডালিম, রবিনসহ একটি গ্রুপের নির্দেশে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। খুনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত সন্ত্রাসীরাও ওই একই এলাকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত ২২ এপ্রিল বাড্ডার বেরাইদ এলাকায় নিহত হন কামরুজ্জামান দুখু (৩৫)। এই ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। স্থানীয় এমপি রহমত উল্লাহ ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্বের জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। নিহত দুখু চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ভাই। এই ঘটনায় রহমত উল্লাহর ভাগ্নে ফারুকসহ ২৭ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মামলার আসামি ফারুকসহ ২২ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তবে মূল খুনি মহসীন কবির, মহসীন ও এমদাদ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। জাহাঙ্গীর বলেন, মহসীন কবির হচ্ছে মূল খুনি। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারছে না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে এভাবেই বাড্ডা এলাকায় একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার মূল খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভাগ্নে ফারুক ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবসায় থেকে শুরু করে ছিনতাই, রাহাজানি, অস্ত্রবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপমর্কে সক্রিয় তার সাঙ্গপাঙ্গরা। দুখু হত্যার আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মেরুল বাড্ডার মাছের আড়তে প্রকাশ্যে আবুল বাশার নামে এক যুবককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতা অস্ত্রসহ ভাগ্নে সহযোগী নুরুল ইসলাম ওরফে নূরীকে (৩৮) ধরে পুলিশে দেয়। পরে বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকায় নূরীকে নিয়ে অভিযানে গেলে তার সহযোগীরা ডিবিকে আক্রমণ করে। এ সময় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নূরী নিহত হন। পুলিশ বলছে, নূরী ও বাশার একই সন্ত্রাসী দলের সদস্য ছিল। দু’জনেরই নেতৃত্ব দিতেন ভাগ্নে ফারুক। নূরীর বিরুদ্ধে বনানীর এমএস মুন্সি ওভারসিজ (জনশক্তি রফতানি) প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক হোসেন মুন্সিকে (৫০) হত্যা এবং বাড্ডায় চার খুনসহ ডজন খানেক অভিযোগ ছিল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এই গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলোÑ আরিফ, পুলক, মানিক, রমজান, প্রবন, মান্নান, অনিক ও রায়হান। বিদেশ থেকে তাদের সহায়তা করে আশিক, মেহেদী, ডালিম ও রবিন। এর আগে ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট বাড্ডার আদর্শনগর পানির পাম্প এলাকায় রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন বাড্ডার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামসুদ্দিন মোল্লা ও ব্যবসায়ী ফিরোজ আহমেদ মানিক। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসাহিত্য ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামা চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান। পরে ২৩ আগস্ট রাতে মৃত্যু হয় গ্যারেজ মালিক ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা আবদুস সালামের।
এ ঘটনায় নিহত মাহবুবুর রহমান গামার বাবা মতিউর রহমান অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে চার্জশিট দেয়। বাদি এই চার্জশিটের ওপর নারাজি দিলে আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। মামলার বাদি অভিযোগ করেন, আফতাবনগর গরুর হাটের ইজারাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ ভাগ্নে ফারুক ও বিদেশে আত্মগোপন করে থাকা মেহেদীর নির্দেশে এই খুনের ঘটনা ঘটে। খুনের মিশনে অংশ নিয়েছিল আরিফ, পবন, পুলক, রমজান, মানিক, মান্নানসহ ১০-১২ জন সন্ত্রাসী। একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েও এই সন্ত্রাসীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/330757/