৫ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১০

বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি বাড়ছে : বন্যার আশঙ্কা

বান্দরবানে তলিয়ে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

দেশের কয়েকটি জেলায় নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন। নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন নদীপারের মানুষ। সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণে বাড়ছে সুরমার পানি, প্লাবিত হচ্ছে নি¤œাঞ্চল। বন্যার আশঙ্কা করছেন সুরমা নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি, পানিতে তলিয়ে গেছে জিরো লাইনের রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। বুধবার সকাল থেকে তিস্তার পানি ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন নদীপারের লোকজন।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বুধবার সকাল ৬টায় ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হয় (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যে কোন সময় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা চর বেষ্টিত গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম জানান, কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। আমরা সতর্কাবস্থায় থেকে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছি।
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওর ও নদীতে পানি বাড়ছে। ভারী বর্ষণে প্লাবিত হচ্ছে নি¤œাঞ্চল, শোনা যাচ্ছে বন্যার পদধ্বনি। গতকাল বৃষ্টিতে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার সকালে পাহাড়ি ঢলের পানিতে নি¤œাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ার দুর্ভোগে পড়তে হয় লোকজনকে। তবে এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সংশ্লিষ্টরা। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার জানান, সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে ও বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। জেলা সদরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শহরের নবীনগর, বড়পাড়া, ষোলঘর, নতুনপাড়াসহ বেশ কয়েকটি শহরতলীর পাড়া প্লাবিত হচ্ছে।
এ ছাড়া জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা উপজেলার নি¤œাঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজার ও গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এভাবে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নি¤œ আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হতে না পারায় অনেককেই পারিবার নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে। এ দিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারা বাজার, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার নি¤œœাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ডুবে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের যানচলাচল।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বাড়ছে। নি¤œাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো: সাবিরুল ইসলাম বলেন, এখনো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, হলে তা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানে তুমব্র সীমান্তের জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গাশিবির গতকাল সকালে আবারো পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সেখানকার প্রায় চার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। অনেকেই শিবিরের মাচান ঘর ও টিলায় অবস্থান করছেন।
প্রবল বর্ষণে বান্দরবানের সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার নিচু এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও বান্দরবান-রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান-রুমা সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কের পুলপাড়া বেইলি ব্রিজ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল থেকে এখনো বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। রুমা সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ভেঙে মাটি পড়ায় রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জেলার আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, শেরেবাংলানগরসহ নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
এ দিকে বান্দরবানে পাহাড় ধসে নিহতদের প্রতি পরিবারকে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও খাদ্যসামগ্রী এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের প থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয়ার জন্য সাত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/330362/