শহীদ মিনারে আন্দোলনরত একজনকে হামলার হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা
৩ জুলাই ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৪৫

কোটা আন্দোলনকারীদের ফের পেটালো ছাত্রলীগ

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে আবারো হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ঢাকা ও রাজশাহীতে ছাত্রলীগের পিটুনির শিকার হন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলনকারীদের মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনটির হামলায় বিকাল পর্যন্ত ঢাবিতে আন্দোলনকারীদের প্রায় ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেয়া হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে। এ হামলা থেকে রেহাই পাননি ছাত্রীরাও।
হামলাকারীদের রোষানল থেকে নেতাদের বাঁচাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন কয়েকজন ছাত্রী। দুপুরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্র নুরুল হক নূরের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে চাইলে ছাত্রলীগ সেখানেও বাধা দেয়ার চেষ্টা করে।

এক পর্যায়ে বিভাগটির এক শিক্ষকের কড়া প্রতিবাদের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এদিকে শহীদ মিনারে হামলাসহ গত কয়েকদিনে ক্যাম্পাসে সংঘটিত ঘটনার মধ্যে অধিকাংশের বিষয়েই কিছু জানেন না বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। আর দীর্ঘ দেড় মাস ছুটি কাটিয়ে চালু হওয়া ক্যাম্পাসে গতকালও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যাপক শোডাউন দিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শনিবার নেতাদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকাল পৌনে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হতে চাইলে অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ধরে ধরে মারধর করে আন্দোলনকারীদের। এসময় আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মেরে তাকে বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমানের মোটরসাইকেলে করে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে ছাত্রলীগ। এর কিছুক্ষণ পর আবারো আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে চাইলে ফের হামলা চালানো হয়। এ দফায় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায় শহীদ মিনার এলাকায় দায়িত্বে থাকা পুলিশকেও। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আসতে দেখে তারা নিজেদের অবস্থান ত্যাগ করেন। হামলায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাকিব হাসান সুইম (ঢাকা কলেজ), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মোহাম্মদ নিজামুল হক, স্কুল কার্যক্রম বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের সভাপতি বিআই বাঁধন, সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, সূর্যসেন হলের সভাপতি গোলাম সরওয়ার, বিজয় একাত্তর হলের সভাপতি ফকির রাসেল আহমেদ, কবি জসীম উদ্দীন হলের সভাপতি আরিফ হোসেন, জহুরুল হক হলের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, জগন্নাথ হলের সাধারণ সম্পাদক উৎপল দাসসহ ৩৫-৪০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিভাগটির ছাত্র নুরুল হক নূরের ওপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। মানববন্ধনের শুরুতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। তবে বিভাগটির এক শিক্ষকের কড়া প্রতিবাদে ছাত্রলীগ কর্মীরা সেখান থেকে চলে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, মহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, সূর্যসেন হলের সভাপতি গোলাম সরোয়ার, বঙ্গবন্ধু হলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান, বিজয় একাত্তর হলের সভাপতি ফকির আহমেদ রাসেল প্রমুখ নেতাকর্মীরা মানববন্ধনের শুরুতে বাধা দিতে এগিয়ে যান। এসময় তারা মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কটূক্তি করেন। হলে ফিরলে দেখে নেয়ার হুমকিও দেয়া হয় অনেককে। মানববন্ধন শেষে বিভাগটির সহযোগী অধ্যাপক ড. তাসনীম মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের ছাত্র নুরুল হক নূরের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করছি। কিন্তু আমরা এখানে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছে কতিপয় ছাত্র (ছাত্রলীগ)। আমাদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে। তারা আমাদের বিভিন্ন দলের ট্যাগ দেয়। আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এমন ক্যাম্পাস চাই না। আমরা চাই রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন পরমতসহিষ্ণু একটি ক্যাম্পাস। কিন্তু একটি দলের নেতাকর্মীরা আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করেছে। আমরা প্রক্টরকে জানাবো এবং বলতে চাই এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।’

এদিকে বিকালেও শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকাসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে সন্দেহ হলেই ধরে ধরে শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে ছাত্রলীগ। বিকালে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন মানবজমিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ আজও আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে। পুরো ক্যাম্পাসে তারা ধরে ধরে শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে। এতে আমাদের প্রায় ১৫ আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=124043