প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের অনশন গতকাল শনিবার ৬ষ্ঠ দিনের মতো চলছে
১ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ১০:১০

অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ১শ’ ২৬ শিক্ষক

নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের টানা আন্দোলনে ১২৬ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ৬ষ্ঠ দিনের অনশনে ৩৫ জনের শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে রাস্তার ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। ছয় জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া শিক্ষকদের আন্দোলনে গত ২৩ জুন থেকে সারাদেশের নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তারা।

এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রতিদিনের মতো গতকাল শনিবারও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খোলা আকাশের নিচে বসে আন্দোলকারীরা আমরণ অনশন পালন করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা টানা ছয়দিন ধরে আমরণ অনশনের মতো এমন কঠিন কর্মসূচি পালন করছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকায় এসে এ আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। তাদের উপস্থিতিতে এ আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠেছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ আর স্লোগানে প্রেস ক্লাব এলাকা কম্পিত হয়ে উঠছে।

সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, টানা ছয়দিনের অনশনে এ পর্যন্ত ১২৬ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে বর্তমানে ৩৫ জনকে স্যালাইন দিয়ে অনশনের মধ্যে শুইয়ে রাখা হয়েছে। ছয়জনকে ঢাকা মেডিলেকে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকে আবার মেডিকেল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুষ্ঠু হয়ে আবারও অনশনে যোগ দিয়েছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভূষণ রায়ও গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এমপিভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিলে শিক্ষক-কর্মচারীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে রাজপথ ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যান। আমাদের বিষয়টি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার কথা থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তা উল্লেখ না করে আমাদের গভীর অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার শরীরে স্যালাইন লাগিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আর পারছি না। না খেয়ে রাস্তায় বসে অনশন পালনে শিক্ষক-কর্মচারীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তবুও আমাদের দিকে কেউ মুখ তুলে তাকিয়ে দেখছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের রাস্তায় মরে যেতে হবে।
এদিকে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আমরণ অনশন কর্মসূচির সঙ্গে একমত পোষণ করে সমর্থন জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার দুপুর ১২টা দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে ইসলামী আন্দোলনের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। এ সময় পীর বলেন, শিক্ষকরা জাতির সবচেয়ে সম্মানের পাত্র। তাঁরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা সরকারকে বলব, অনতিবিলম্বে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণ করুন। শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি। একইসঙ্গে তাঁদের জন্য দোয়া কামনা করছি।
গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির দাবি জানান শিক্ষক নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, বাজেটে এমপিওভুক্তির সুস্পষ্ট কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলা হয় নাই। গত ২৫ জুন থেকে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করেন।

সারা দেশে পাঁচ হাজার ২৪২টি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি) কর্মরত প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ৫ জানুয়ারি অনশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একান্ত সচিব মো. সাজ্জাদুল হাসান, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে ২০১৮-১৯ প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এমপিওভুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। খবরটি সারা দেশের নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষকরা আহাজারি-আর্তনাদে ও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাই আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ১০ জুন রমজান মাসে সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান গ্রহণ করেন। শিক্ষকরা পুলিশি বাধা, গ্রেফতার, বৃষ্টি-বাদল, রোদ ও ভ্যাপসা গরম, রাতে মশার কামড় খেয়ে রাজপথের ফুটপাতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।

 

http://www.dailysangram.com/post/336057