২ জানুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ২:২১

মহাসড়কে লোড নিয়ন্ত্রণ বাণিজ্য

দেশের মহাসড়কগুলোতে লোড (ওজন) নিয়ন্ত্রণের নামে বাণিজ্য চলছে। ‘ওয়ে স্কেল’- এর মাধ্যমে লোড নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। এ কারণে মালামাল পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, পণ্য/মালবাহী মোটরযান থেকে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদাবাজি করা হয়। এর মধ্যে তিন ধাপে এ চাঁদাবাজি সংঘটিত হয়। অতিরিক্ত ওজন বহনকারীরা চার হাজার টাকা দিলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। আর যারা টাকা দিতে অপারগতা জানায় তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ন্যূনতম ১২ হাজার টাকা থেকে বিভিন্ন হারে জরিমানা করে। কিছু কিছু ট্রান্সপোর্টের সঙ্গে তারা লেনদেনের সম্পর্ক করে আগের মতো অতিরিক্ত লোন নিচ্ছেন। এর ফলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নিয়ম মেনে যেসব মোটরযান মালিক কম লোড নেন তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। চাঁদাবাজির প্রথম ধাপ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাধারণত যানজট/ জ্যামের স্থান, তেমুহনী (তিন রাস্তার মোড়) বা যে কোনো চৌরাস্তায় ধীরগতির যানবাহনকে সিগন্যাল দিয়ে ২০-২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। রাস্তায় এ ধরনের চাঁদাবাজির মধ্যে পড়তেই হবে জেনে চালক ও হেলপাররা আগে থেকে স্থান বুঝে ভাংতি টাকা নিয়ে রাখেন। এমন নিয়ম অনুসরণ না করলে যানবাহন চালককে দ্বিতীয় ধাপে পড়তে হয়। দ্বিতীয় ধাপ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ ধাপে কর্মব্যরত পুলিশ সদস্য মোটরযানের কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চান। সবকিছু ঠিক থাকলেও নগদ টাকা উৎকোচ নেয়া হয়। উৎকোচ না দিলে আদেশ অমান্য করা, নিষিদ্ধ হর্ণ ব্যবহার, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ইত্যাদি ধারায় মামলার রসিদ ধরিয়ে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট তারিখে মামলা প্রত্যাহারের জন্য গেলে সংশ্লিষ্ট মোটরযানের মালিক/শ্রমিকদের তৃতীয় ধাপের চাঁদাবাজিতে পড়তে হয়। তৃতীয় ধাপ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটরযানকে ট্রাফিক পুলিশ দ্বিতীয় ধাপে যে মামলা দেয় তার ধারা মোতাবেক জরিমানার টাকা নিয়ে গেলে দেখা যায়, মোটরযান সংশোধনী আইন ১৯৮৮ অনুযায়ী প্রত্যেক ধারার বিপরীতে জরিমানা করা অর্থের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি দাবি করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দেয়া হচ্ছে। এদিকে সড়ক ও মহাসড়কগুলো মেরামতের জন্য প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু অতিরিক্ত ওজন নিয়ে পণ্য/মালামাল পরিবহনের কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে এসব রাস্তা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। গত আগস্টে বিষয়টি সমাধানের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী নির্দেশ দেন। এরপর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় দারোগার হাট, মেঘনা-গোমতী সেতুর পূর্ব পাড়সহ দেশের বিভিন্ন সড়কে ওয়ে স্কেল বসানোর মাধ্যমে মোটরযান এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিচালনা শুরু করে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাণিজ্য শুরু করে। এছাড়া, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট বা রুট পারমিট যাচাইয়ের নামে অপব্যবহার করা হচ্ছে। এসব রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=47291&cat=2/%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%9C%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%A1-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A3-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A6%BF%E0%A6%9C