২ জানুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ২:১৮

ব্যাংকের বিলাসী ব্যয়ে কমছে না ঋণের সুদ: বাংলাদেশ ব্যাংকের সমীক্ষা

দামি আসবাবপত্র। মেঝে বিদেশী টাইলসে। অত্যাধুনিক সাজসজ্জা। সর্বাধুনিক ইলেকট্রিক দরজা। ভেতরে বসে আছেন কিছু লোক। মনে হয় পাঁচ তারা হোটেলের কোনো কামরা। সাধারণের প্রবেশের সুযোগ নেই। আবার কারো সাহসেই কুলায় না অত্যাধুনিক এ কামরায় প্রবেশ করতে। কারো বোঝার সুযোগ নেই মানুষের আমানতের টাকায় এত বিলাসিতা আমাদের দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শাখায়।
ব্যাংকগুলোর শাখা দেখলে মনে হয় এক ব্যাংক যেন আরেক ব্যাংকের সাথে বিলাসিতার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। আর এ বিলাসিতা করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার তলানীতে নামিয়ে আনলেও ঋণের সুদহার ওই হার কমাচ্ছে না। বরং সার্ভিস চার্জের নামে নানা কৌশলে সাধারণের পকেট কাটা হচ্ছে। এ কারণে বিনিয়োগ স্থবিরতার মাঝেও ব্যাংকগুলোর পরিচালনা মুনাফা কমেনি বরং তা বেড়ে গেছে।
ব্যাংকের বিলাসী ব্যয়ের কারণে ঋণের সুদহার কমছে না। অথচ আমানতের সুদ হার কমে তলানীতে চলে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সমীক্ষায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। বিলাসী ব্যয়ের মধ্যে চাকচিক্য ভবন, উচ্চ বেতন, বিলাসী গাড়ি ব্যবহার ইত্যাদি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের শাখা খোলার অনুমোদনের আগে বাহুল্য ব্যয় পরিহার করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এজন্য একটি শাখা খুলতে কোনো ব্যাংক সর্বোচ্চ কী পরিমাণ ব্যয় করবে তার নির্ধারিত সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা মানছে কিনা তা পরিদর্শন করা হয় না। হলে ব্যাংকের শাখাগুলোর চাকচিক্য এ পরিমাণে যেত না বলে মনে করে ওই সূত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যাংকের আমানতের গড় সুদ হার প্রতি মাসেই কমে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে আমানতের গড় সুদ হার ছিল ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে আমানতের গড় সুদহার নেমে এসেছে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশে। এর বিপরীতে কাক্সিক্ষত হারে কমছে না ঋণের সুদহার। কয়েকটি খাতে নামে মাত্র কম সুদে ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু শিল্পঋণসহ ভোক্তা ঋণে সুদের হার এখনো অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে গড় ঋণের সুদ এখনো ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বিপরীতে কৃষিঋণের গড় সুদহার সাড়ে ৯ শতাংশ রয়েছে। আবার মসলা চাষে কৃষিঋণ রয়েছে ২ শতাংশ। গড়ে ঋণের সুদহার ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, যেসব ঋণের সুদহার কম ওইসব ঋণ বিতরণ করা হয় ব্যাংকের মোট ঋণের ৫ শতাংশেরও কম। বিপরীত যেসব ঋণের সুদহার বেশি ওইসব ঋণই বেশি বিতরণ করা হয়। ব্যাংকের শাখাগুলোকেও বেশি মুনাফা হয় এমন খাতে বেশি হারে ঋণ বিতরণে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু গড় হারে তা কমে যায়। এভাবেই ব্যাংক বেশি হারে মুনাফা আদায় করে গ্রাহকদের কাছ থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো যে হারে আমানতের সুদহার কমাচ্ছে ওই হারে ঋণের সুদহার কমাচ্ছে না। বরং গড় সুদহারে শুভঙ্করের ফাঁকি দিচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগ মন্দার মাঝেও ব্যাংকগুলোর মুনাফার হার কমেনি। বরং বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। ব্যাংকগুলোর এ বাহুল্য ব্যয়ের হ্রাস টেনে ধরতে না পারলে ব্যয় দিন দিন বাড়তেই থাকবে। আর এ অবস্থায় ব্যাংকের শাখা থাকবে, কিন্তু ঋণ দেয়ার মতো গ্রাহক খুঁজে পাবে না।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/183839