১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার, ১২:৩৭

সুনামগঞ্জে পানিবন্দী লাখো মানুষ এক মাস ধরে দুর্ভোগে

জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা শুরু হলেও এখনো এর কোনো উন্নতি নেই। একদিকে পানি বাড়ে, আরেক দিকে কমে। ভারী বৃষ্টি আর হঠাৎ রোদের ঝিলিকের লুকোচুরি খেলা চলছে এই অঞ্চলের আকাশে। সুনামগঞ্জে লাখো মানুষ এখনো ঘরবাড়িতে পানিবন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে আবারো শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এতে নদ-নদীর পানি কোথাও বাড়ছে, কোথাও স্থিতিশীল রয়েছে। এতে বানভাসি মানুষের শঙ্কা পিছু ছাড়ছে না। পানিবন্দী লাখো মানুষ প্রায় এক মাস ধরে ভোগান্তি নিয়ে চলছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫৫ মিলিমিটার আর চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত ১৬০ মিলিমিটার। ১২ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে প্রায় ৩৭ সেন্টিমিটার। ভারী বর্ষণের কারণে নি¤œ আয়ের মানুষজন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। এছাড়া সিলেটে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। সিলেটের হাওরাঞ্চল হলো সুনামগঞ্জ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হাওর জনপদ ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে। জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লাসহ সব উপজেলার যোগাযোগের সড়কসহ গ্রামীণ রাস্তায় বন্যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। এবারো দুই দফা বন্যার চাপ গেছে সড়কগুলোর ওপর দিয়ে। কঠিন হয়ে পড়েছে হেঁটে চলাচলও। রোগী, বয়স্ক ও শিশুদের যাতায়াতের ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। জেলার প্রায় ২৭ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন পার করছেন। উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে পুরো জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেন বহু পরিবার। ২৩ জুনের পর থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে মানুষ বাড়িঘরে ফেরেন। কেউ কেউ এখনো বাড়িতে ফিরতে পারেননি। মানুষ স্বস্তি ফেলার আগেই আবার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জে চলমান বন্যার কারণে, শাক-সবজির তেমন উৎপাদন নেই। অন্যান্য জেলা থেকেও আমদানি কম থাকায় শাক-সবজির দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।

তাহিরপুরে তৃতীয় দফায় দুর্ভোগ
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাদুকাটা পাটলাই নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার গ্রামীণ সড়ক, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি কিনিক পানিতে ডুবে আছে। সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কে যান চলাচল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্ধ থাকায় চলাচলকারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ ছাড়াও তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

তাহিরপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সেলিম আখঞ্জি জানান, দুই দিন ধরে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের দু’টি স্থান তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সাথে তাহিরপুরে সরাসরি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, আমার ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের চার পাশে শুধুই হাওর। এক মাসের মধ্যে তিনবার বন্যা দেখা দেয়ার আমার ইউনিয়নের মানুষজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। হাওরের ঢেউয়ে ইতোমধ্যে অনেকের বসতবাড়ি ভেঙে গেছে।

দেওয়ানগঞ্জে পানি কমলেও রয়েছে দুর্ভোগ
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, দেওয়ানগঞ্জে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে কিন্তু কমছে না জনদুর্ভোগ। আখ, পাটসহ সব ফসলের মাঠ অধিকাংশ গেছে ডুবে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী। নদ-নদীর পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন। ব্যস্ততম দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী সড়কের বাঁশের পুল ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। নৌকায় পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ অন্য সব লোকজন। দেওয়ানগঞ্জ-তারাটিয়া-সানন্দবাড়ী ব্যস্ততম সড়কের কাঠারবিল মহারানী ব্রিজসংলগ্ন বাঁধ ভেঙে গেলে সেখানেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ওই পথে যেতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ সড়কের সরদারপাড়ায় রাস্তা ভেঙে গেলে অতিকষ্টে তা মেরামত করে কোনো রকম যোগাযোগ স্থাপন করা হলেও কাঠারবিল এবং খোলাবাড়ী পথের ভাঙন কবে নাগাদ চালু হবে তা বলতে পারছে না কেউ। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো: তোফায়েল আহম্মেদ জানান, বন্যার পরে পানি কমে শুকনো সময় ব্যতীত ওই দুই স্থানে রাস্তা মেরামত করা সম্ভব হবে না। চলতি সপ্তাহে দেওয়ানগঞ্জের চুকাইবাড়ী, ডাংধরা ও বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে তিন শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। গতকাল পাউবোর পানিমাপক মো: আ: মান্নান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার পানি কমে বর্তমানে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় উপজেলার ৮ ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদেও পানি। পানি কমতে থাকলেও নিম্নাঞ্চলের মানুষ বাড়ি ঘরে ফিরতে পারছে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/849224