১২ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৫৬

দশ মাস মেয়াদী প্রকল্পে অর্ধেক কাজে হাত বদল ৩ বার

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: চরম অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে সাতক্ষীরার বেতনা নদী পুনঃখনন প্রকল্প ও সীমানা ঘেঁষা পুটিমারি খালের বেড়িবাঁধ নির্মানের কাজ। এতে জোয়ারের তোড়ে ভাঙতে শুরু করেছে খালের বেড়িবাঁধ। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। বেতনা নদী পাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ একের পর এক হাতবদল হওয়ার কারণে বেতনা নদী পুনঃখনন কাজ দায়সারা গোছের হচ্ছে। একেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কিছুদিন কাজ করার পর টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে আসে অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এভাবে একের পর এক হাতবদল হওয়ার কারণে কাজের মান নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমান কাজ খুব দ্রুত গতিতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত কাজের অনুকুলে ৪৮ শতাংশ টাকা দেয়া হয়েছে। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দশ মাস মেয়াদী সাতক্ষীরার বেতনা নদী পুনঃখনন প্রকল্পের তিন বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি বলতে এ পর্যন্ত ৪০/৪৫ শতাংশ। প্রকল্পটি হাতবদল হয়েছে তিন বার। এভাবেই চরম অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে সাতক্ষীরার বেতনা নদী পুনঃখনন প্রকল্প।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, বেতনা নদী পুনঃখননে শুভংকরের ফাঁকি চলছে সাতক্ষীরাতে। ঠিক বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে নদী খনন শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর পর যেই বর্ষা চলে আসে আবার কাজ বন্ধ রাখা হয়। ভাবা যায়? ১০মাসের কাজ তিন বছরেও শেষ হয় না। এছাড়া প্রকল্পের বরাদ্দের অর্থ দেয়া হয়েছে কাজের অগ্রগতি বিবেচনা না করে।

সরেজমিনে বেতনা নদী পুনঃখনন এলাকা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গায় গিয়ে দেখা যায় খুলনার সততা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কয়েকটি স্কেবেটর মেশিন দিয়ে নদী খনন করছেন। কাজে দায়িত্ব থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান আসাদের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই কাজটি নিয়েছি কিছুদিন হলো মাত্র। এর আগে আক্কাজ আলী নামের এক ঠিকাদার কাজ করতে করতে রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমাদের দায়িত্বে দিয়েছেন। আমরা খুব দ্রুতই কাজ শেষ করবো বলে আশা করছি।

ঝাউডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, বেতনা নদী পুনঃখনন প্রকল্পের কাজটি একটানা হচ্ছে না, এক ঠিকাদার কিছুদিন করার পর চলে যায় আরেক ঠিকাদারের কাছে। এভাবে একের পর এক হাতবদল হচ্ছে। কিন্তকাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, বেতনা নদী যেভাবে পুনঃখনন হচ্ছে তাতে খুব উপকারে আসবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ স্কেবেটর মেসিন দিয়ে তলার পলীমাটি উঠিয়ে নদীর পাড়েই রেখে দেয়া হচ্ছে। যা বর্ষা হলেই ধসে গিয়ে আবারও ভরাট হবে বেতনা নদী। এছাড়া মূল নদীর ৫০ শতাংশও খনন হচ্ছে না বলে জানান এই গ্রামবাসি। নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ও পরিবেশকর্মী অধ্যক্ষ আশেক ইলাহী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদার যোগসাজস করে বেতনা নদী পুনঃখননে চরম অনিয়ম করে চলেছে। মূল ঠিকাদার কেন কাজ হস্তান্তর করবে? সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোজকন কেনই বা এই সুযোগ করে দেয়? সরকারের সিদ্ধাš Íঅনুযায়ী কোনো প্রকল্পের কাজ এক ঠিকাদারী পেয়ে অন্য ঠিকাদারকে দিতে পারবে না। এতে কাজের মান ভালো হয় না। তিনি বলেন, বেতনা নদী পুনঃখনন প্রকল্পের কাজ শুরু থেকে অদ্যাবধি ভালো কোনো অগ্রগতি নেই। তাছাড়া খনন কাজ যেভাবে হচ্ছে তা সরকারের কোনো কাজে আসবে না।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬, ৮ এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিষ্কাশন ব্যবহার উন্নয়ন প্রকল্প ২০২১-২২ এর অধীনে ১৮নং প্যাকেজ ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার হাজিপুর হতে কলারোয়া উপজেলা পর্যন্তসাড়ে ৭ কিলোমিটার বেতনা নদী পুনঃখননের জন্য পটুয়াখালী জেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম আজাদকে ৩০জুন ২০২২তারিখে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ১০ মাস মেয়াদ অর্থাৎ ২১-০৬-২০২৩ তারিখে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ১০মাসের পরিবর্তনে ২বছর পেরিয়ে গেলেও বেতনা নদী খননে তেমন অগ্রগতি নেই। স্থানীদের দাবি কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি ৫০শতাংশও হয়নি এখনো। তবে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
দুর্নীতি-অনিয়মের একই চিত্র দেখা দিয়েছে কুলিয়ার লাবণ্যবতী খাল পুনঃখননেও। একদিকে দুর্নীতি আর অন্যদিকে ধীরগতিতে পুনঃখনন কাজ চলায় গেল কয়েকমাস ধরে দুর্ভোগ, দুর্দশা আর পানি সংকটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন কুলিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মৎস্য ঘের মালিক। সীমাহীন দুর্নীতি-অনিয়মের ফলে একদিকে ক্ষতিগস্তহয়েছে পুটিমারি খালের আকার, আয়তন; তেমনি প্রবল জোয়ারের তোড়ে প্রতিনিয়ত ভাঙছে এর বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট। ভাঙনে বিলীন হতে বসেছে প্রত্যন্তজনপদ পুটিমারি প্রাইমারি স্কুলগামি একমাত্র রাস্তাটিও। সেজন্য অবিলম্বে ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি।

এব্যাপারে জানতে চালইলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম জানান, কিছুদিন হলো তিনি সাতক্ষীরাতে যোগদান করেছেন। তার পরও বেতনা নদী পুনঃখননে কোনো অনিয়ম হলে সেটা মেনে নেয়া হবে না। কাজের অগ্রগতি অন্তত ৫০শতাংশ হয়েছে দাবি করে তিনি আরো বলেন, কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য দাগিত দেয়া হয়েছে। তবে কাজের অনুকূলে এ পর্যন্ত ঠিকাদারকে ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

https://www.dailysangram.info/post/561073