১২ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৪৬

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’

আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও সমাবেশ

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা। প্রধান বিচারপতির আহ্বান, পুলিশের ‘সতর্কবার্তা’ এবং ছাত্রলীগের ‘হুঁশিয়ারির’ পরও গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে। পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন শাহবাগের আন্দোলনকারীরাও। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশের বাধার মুখে পড়ে আন্দোলনকারীরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এদিকে আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে তারা। বাংলাদেশের সংসদে আইন পাশ করে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে কোটা বিরোধী নানা স্লোাগানে মুখর রাখে তারা। রাজধানীর বিভিন্নস্থানে একইভাবে কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়া, কুমিল্লায় কর্মসূচি চলাকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া সারাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছেন। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন।

কেন্দ্রীয়ভাবে বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও শিক্ষার্থীরা পাঁচটার কিছু আগে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হন। এদিকে গত কয়েকদিনের তুলনায় এদিন অধিক প্রস্তুতি ও সতর্কতা নিয়ে মাঠে নামতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এর অংশ হিসেবে আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), জলকামান, অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশ। ক্যাম্পাসে থেকে শাহবাগ মোড়ে যাওয়ার রাস্তায় ব্যারিকেডও দেয়া হয়। তবে, শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে মোড়ে চলে যান এবং সেখানে অবস্থান নেন। এসময় কাউকে কাউকে পুলিশের এপিসির উপরও উঠে বসতে দেখা গেছে।

গতকাল দুপুরে ডিএমপি'র পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যদি আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগসৃষ্টি করা হয় তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বাংলা ব্লকেডে শাহবাগ মোড় কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ফলে আশেপাশের সড়কে যানজট দেখা দেয়। পুলিশের বাধা পেরিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানেও বাংলা ব্লকেড পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সবখানেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।

স্লোগানে উত্তাল শাহবাগ : সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরুদ্ধ রাখে। এতে শাহবাগ-সংলগ্ন সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৫টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টায় শাহবাগ ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে কোটা সংস্কার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান, কবিতা এবং কোটা নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। এ সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানান আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জনরোষ তৈরি হয়েছে। পুলিশ দিয়ে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন দমন করা যাবে না। আমরা ব্লকেড কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আন্দোলনকারীরা এ সময় পুলিশের জলকামানের গাড়িকে ধাক্কা দিতে থাকে। ফলে গাড়ি শাহবাগ এলাকা থেকে সরাতে বাধ্য হয় পুলিশ।

এর আগে, কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ৩টার সময় ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে শুরু হতে দেরি হয়। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হন। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের অবস্থান প্রতিদিনের মতো হবে। আমরা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে আছি।

আন্দোলনের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে, আদালতের কাছে নয়। আমরা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করব। পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করবে বলে আশা করি। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রসমাজকে জিম্মি ও জনদুর্ভোগ তৈরি করা হলে ছাত্রলীগ রুখে দাঁড়াবে।

এর আগে বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ অবরোধ করেন। সেখানে মেট্রোরেলের নিচে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়মুখী পথে পুলিশ ব্যারিকেড দিলে শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন। তবে সামনে না গিয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে ফিরে আসেন।

তাদের একটি অংশ বাংলামোটরের দিকে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। অন্যরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। পরে তারা শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পর্যন্ত সড়ক ব্লক করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যারিকেডে ভেঙে ফেলার সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পাশে পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগের বিক্ষোভে অংশ নেন। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে চারটায় উন্মুক্ত লাইব্রেরির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীদের বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন। পরবর্তীতে তারা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগদান করেন।
শেকৃবিতে লাঠি চার্জ : রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন সাধারণ শিক্ষার্থী। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। কিছুক্ষণ পর এটি সংঘর্ষে রূপ নেয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ফার্মগেট-মিরপুর সড়ক অবরোধ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশের বাঁধার সম্মুখীন হন। এতে শিক্ষার্থীরা ফিরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটের সামনে অবস্থান নেয় এবং সেখানে বসে স্লোগান দিতে থাকে।

কুমিল্লায় সংঘর্ষে ২০ শিক্ষার্থী আহত : বেলা সোয়া তিনটার দিকে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের এক দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন আনসার ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁদের কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। পরে শিক্ষার্থীরা ফের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে।

রাবি শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধ : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রাজশাহীতে রেললাইন অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশনবাজারসংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করেন তাঁরা। পরে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলেও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হল ঘুরে ক্যাম্পাসসংলগ্ন স্টেশনবাজার এলাকায় যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করেন।

বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, লড়াই হবে এক সাথে’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

চট্টগ্রামে হাতাহাতি : চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী ও এক নারী পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ট্টগ্রামে সড়ক অবরুদ্ধ করে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামে সড়ক অবরুদ্ধ করে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শাহজালালে পুলিশের বাধা : সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বাধা উপেক্ষা করে মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়ক অবরোধ করতে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বাধা দেওয়ার সময় পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে। এতে তাঁদের ১৫ থেকে ২০ জন আহত হন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

আন্দোলনকারী কয়েকজন জানান, বেলা তিনটা থেকে তাঁদের কর্মসূচি শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নিয়ে গোলচত্বরে জড়ো হন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকের দিকে যান। এরপর পুলিশ বাধা দিলে বাধা ঠেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। পৌনে এক ঘণ্টা অবরোধের পর বিকেলে সোয়া পাঁচটার দিকে তাঁরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা যায় তৈরি হয়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খলিলুর রহমানসহ নেতা-কর্মীরা প্রধান ফটকে অবস্থান করছিলেন। তার আগে সংগঠনটির সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বেলা সাড়ে তিনটায় ক্যাম্পাসে মিছিল করেন তাঁরা। মিছিল–পরবর্তী সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে যাওয়া এবং সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুর যৌক্তিক সমাধানের দাবিতে যাওয়ার আহ্বান জানান।

ইবিতে পদযাত্রা : পূর্বঘোষিত বাংলা ব্লকেড কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গনে জড়ো হয়ে পদযাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ফটক খুলে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে মহাসড়কে অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক সড়ক অবরোধের পর পুনরায় মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে অবস্থান করেন তারা।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থান : এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ৩ ঘণ্টার অবরোধ পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশ বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে মহাসড়কে উপস্থিত হন তারা।

পুলিশের বাধার মুখে শিক্ষার্থীরা জানান, ‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ পালন করার কথা। এ কর্মসূচি পালন করেই ঘরে ফিরবেন তারা।’ শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থান দেখে পিছু হটে পূর্বে থেকে প্রস্তুত রাখা একটি এপিসি কার। তবে অবরোধ চলাকালে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। আজকের কর্মসূচিতে অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক ছিলেন শিক্ষার্থীরাও।

আন্দোলনে অংশ নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম বলেন, আমরা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করার এক দফা নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। আজও বিকাল ৩টা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল। কিন্তু আমরা এসে দেখলাম মহাসড়কে পুলিশ, সাঁজোয়া যান আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ। এসব উপেক্ষা করে অবরোধ পালন করেছি। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই এটা সম্ভব হয়েছে। দাবি আদায়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ : বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাংলা ব্লকেডের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটায় আন্দোলনে নামেন তাঁরা। এর আগে বেলা তিনটা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় জড়ো হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ করে জনভোগান্তি সৃষ্টি না করার জন্য অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে না পারেন, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দুটি ছাত্র হল থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে আন্দোলনস্থলে যোগ দেন। তাঁদের হাতে কোটা সংস্কার দাবির নানা স্লোগান লেখা প্লাকার্ড ও ব্যানার দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হলে মূল ফটকের তালা খুলে দেওয়া হয়। তালা খুলে দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নেন। সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন।

বৃষ্টিতেও রাস্তায় খুবি শিক্ষার্থীরা : প্রচ- বৃষ্টি উপেক্ষা করেই খুলনায় কোটা বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে নাগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচি শুরু করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।অবরোধ চলাকালে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না।

খুবি শিক্ষার্থী মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, শুরুতে আমরা চারদফা দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যে গেম খেলা হচ্ছে, তাতে চারদফার পরিবর্তে দাবিগুলো এক দফায় পরিণত হয়েছে। সাইফ নেওয়াজ নামের আরেকজন বলেন, ‘আমরা মেধাবী ছাত্রছাত্রী দিয়ে পরিচালিত একটি স্মার্ট বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমাদের সামনে যত বাধা আসুক না কেন, আমরা পিছপা হবো না।
পাবনা এডওয়ার্ড শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। এতে দুইপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের অনুরোধে ক্যাম্পাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

এসময় শিক্ষার্থীরা সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে; কোটা না মেধা, মেধা মেধা; কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই; আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম; দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ ইত্যাদি -

স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করেন। https://www.dailysangram.info/post/561055