৯ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১:১৫

বাংলা ব্লকেডের দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল সারাদেশ

দ্বিতীয় দিনের মতো বাংলা ব্লকেড পালন করেছে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত ‘এক দফা’ দাবিতে অনঢ় শিক্ষার্থীরা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা দখল করে রাখে। রোববার রাজধানীর শাহবাগ থেকে তারা এ এক দফা ঘোষণা করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার শাহবাগে জড়ো হন তারা। এ সময় তাদেরকে ‘মেধা না কোটা?, মেধা মেধা’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সুযোগের সমতা, ‘৭১ এর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এদিন বিকেলে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে রাজধানী শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মূল গেটের সামনে দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পার হয়ে কারওয়ান বাজার হয়ে ফার্মগেটের দিকে মিছিল নিয়ে আসেন। ব্যারিকেডে ভেঙে ফেলার সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। পাশে পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আজ রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, চাঁনখারপুল মোড়, ঢাকা মেডিকেল মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে প্রতিটি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগ থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে সংগঠিত হন শিক্ষার্থীরা। বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে একটি অংশ এসে অবরোধ করেন। বাকিরা বাংলামোটর, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় অবরোধ করেন। চাঁনখারপুল মোড় ও ঢাকা মেডিকেল মোড় অবরোধ করেন ঢাবির শহীদুল্লাহ্ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘হাইকোর্ট না রাজপথ? রাজপথ, রাজপথ’ ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘আপস না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া স্লোগানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দেশাত্মবোধক গান, কবিতা পরিবেশন করতে দেখা যায়।

এদিকে বিকাল ৪টায় নিউমার্কেটের দিক থেকে একদল শিক্ষার্থী সায়েন্সল্যাব মোড়ে এসে রাস্তা অবরোধ করেন। এর কিছু সময় পরে টিএসসি থেকে শাহবাগ মোড় এসে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে কয়েকশত শিক্ষার্থী অবরোধ করায় রাস্তার দু’পাশে গাড়ি জমে যায়।

শাহবাগ মোড়ে বিকাল ৪টার আগ থেকে পুলিশের অবস্থান দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা প্রথমে সড়ক ঘিরে ফেলেন এবং পরে রাস্তায় রাখা লোহার ব্যারিকেড ব্যবহার করে সড়ক আটকে দেন। শাহবাগ ও সায়েন্সল্যাবে সড়ক অবরোধ করায় মিরপুর রোড, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউসহ ওই দুই এলাকা সংলগ্ন সব সড়কে যান চলাচল আটকে যায়।

এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ পুরো দেশজুড়ে দ্বিতীয় দিনের মতো পালিত হয় কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘বাংলা ব্লকেড’। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এক দফা দাবির পক্ষে স্লোগান, গান আর কবিতা আবৃত্তি করে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়, চানখারপুল, ইন্টার কন্টিনেন্টাল মোড়, পল্টন মোড়, কারওয়ান বাজার, বাংলা মোটর, ফার্মগেটে ‘বাংলা ব্লকেড’ বাস্তবায়ন করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকরি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টসহ সচিবালয় এলাকা দখলে রাখেন।

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশালের (বিইউপি) শিক্ষার্থীরা মিরপুর-১২, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করেন।

এছাড়াও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মডার্ন মোড়, রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি হাজী মহসিন মুহাম্মদ কলেজ, সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ষোলশহর, চট্টগ্রাম রেলপথ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-খুলনা সড়ক এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-পাবনা সড়কে ‘বাংলা ব্লকেড’ বাস্তবায়ন করেন।

এছাড়াও রুয়েট, আনন্দমোহন, নোবিপ্রবি, আশেক মাহমুদ কলেজ, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা ‘মেধা না কোটা?, মেধা মেধা’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সুযোগের সমতা, ‘৭১ এর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

কোনঠে বাহে জাগো সবাই, কোটা প্রথা বাতিল চাই :
‘কোনঠে বাহে জাগো সবাই, কোটা প্রথা বাতিল চাই’ স্লোগানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলা ব্লোকেডের অংশ হিসেবে রংপুরের মডার্ন মোড় অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে সারাদেশের সাথে রংপুর অঞ্চলের ছয় জেলার সড়ক যোগাযোগ দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে ব্লোকেড কর্মসূচি পালন করে তারা।

ব্লকেডে অংশ নেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর কলেজ, বেগম রোকেয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই, কোনঠে বাহে জাগো সবাই’, ‘সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথা কবর দে’, ‘আমার দেশ আমার মা, কোটা বৈষম্য মানবো না’-সহ নানা স্লোগানের প্লাকার্ড হাতে নিয়ে ব্লোকেড কর্মসূচিতে বসে।

স্লোগান আর বক্তব্যে উত্তাল হয়ে পুরো এলাকা। কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে ব্লকেড করে দেয় মডার্ন মোড়। এতে দুই ঘণ্টা সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের। সেখানে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। দুপুর দেড়টায় দিনের কর্মসূচি শেষ করলে যাতায়াত স্বাভাবিক হয়।

ব্লকেডে বক্তব্য রাখেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী শয়ন কুমার সাহা, জাহিদ হাসান, বাংলা বিভাগের ফরহাদ হোসেন, মুন্না বিশ্বাস, শাহরিন আলম, মারিয়া তাবাসসুম প্রমুখ।

তারা বলেন, ‘কোটায় মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি চাকরতে মেধাবীরা প্রবেশ করতে না পারায় দুর্নীতি-অনিয়ম বাড়ছে। অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য ১০ ভাগ কোটা রেখে বাকি কোটা পদ্ধতি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ব্লকেড কর্মসূচি চলবে।’

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তার ক্লাশ-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না বলেও ঘোষণা দেন। রংপুর মহানগর পুলিশের এডিসি (ক্রাইম) উৎপল রায় বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। তাদের কর্মসূচির নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আমরা মোতায়েন হয়েছি। তাদের এই কার্যক্রম যেন সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পায়, কেউ যেন কোনো বেআইনি সুযোগ-সুবিধা না নিতে না পারে সে জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘তাদের কার্যক্রম যতক্ষণ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বজায় থাকবে, ততক্ষণ আমরা তাদের নিরাপত্তা দেবো।

প্রসঙ্গত, এক দফা দাবি হলো- সব গ্রেডে সকল ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে। রোববার রাতে তারা রাজধানীর শাহবাগ থেকে এ ‘এক দফা’ ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সিলেট ব্যুরো: কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ছাত্রসমাজের ঘোষিত বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় দিনের মতো সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। অবরোধের কারণে সড়কের দুপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান কর্মসূচি করেন তারা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।

কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা-সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। ‘সারা বাংলা খবর দে, কোটা পদ্ধতির কবর দে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘আদায় হবে দাবি, পথ দেখাবে শাবি’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না’, ‘কোটাবৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, কোটাপদ্ধতির ঠাঁই নাই’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘নারী যেখানে অগ্রসর, কোটা সেখানে হাস্যকর’, ‘বৈষম্যর বিরুদ্ধে লড়াই করো এক সাথে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ প্রভৃতি স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন।

রাবি রিপোর্টার: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়ায় স্বাভাবিক হয়েছে ঢাকা-রাজশাহীর রেল যোগাযোগ। প্রায় পাঁচ ঘন্টা অবরোধ থাকার পর ট্রেন চলাচল আবারও স্বাভাবিক হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা সংলগ্ন ফ্লাইওভারের নিচের রেললাইনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। এতে প্রায় ৫ ঘন্টা রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের রেলপথ বন্ধ ছিল। পরে বিকেল চারটায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। আজ মঙ্গলবার থেকে আবারো আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে, বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হল এবং আশপাশের বিভিন্ন মেস থেকে প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর এক বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, সবকটি হলের সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রেললাইনে গিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আমান উল্লাহ খান বলেন, আজকের মতো আমাদের আন্দোলন এখানেই শেষ হয়েছে তবে আগামীকাল কি হবে আমরা রাতে জানাবো। আমরা আজ একদফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি। আমাদের একটাই দাবি কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতেই হবে। কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আমাদের আন্দোলনও চলমান থাকবে।

এবার রুয়েটে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ
রাবি রিপোর্টার: কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে এবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিভিন্ন প্লেকার্ড হাতে নিয়ে জড়ো হতে দেখা যায় তাদের। পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের তালাইমারি এলাকা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফলকে অবস্থান করেন তারা। এসময় 'দফা এক দাবি এক, কোটা নট কামব্যাক', 'জেগেছে রে জেগেছে রূয়েটবাসী জেগেছে', 'সংবিধান পরিপন্থী কোটা ব্যবস্থা নিপাত যাক', 'স্বাধীন বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই' , 'হয় যদি কোটার চাষ পড়বো কেন বারো মাস', এসব স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। আন্দোলনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ইমন বলেন, “আমরা মূলত কোটা সংস্কারের দাবিতে এখানে এসেছি। বিভিন্ন রকম কোটার কারণে আমাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটার প্রভাব অনেক বেশি। আমরা কোটা বাতিল চাই না কিন্তু চাই এটা সংস্কার করা হোক।” সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাবিল ফাহমিদ বলেন, “ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেকে ক্যাম্পাসে আসেননি যার কারণে আমরা আন্দোলনটা শুরু করতে পারিনি। সবাইকে এক করতে আমাদের একটু দেরি হয়ে গেল আন্দোলন শুরু করতে। আমাদের আন্দোলন আপাতত একদিনের জন্য ছিল এরপরে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া দেখবো। যদি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে তাহলে পরবর্তীতে আমরা আবারো আন্দোলনে নামবো।” দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।

https://www.dailysangram.info/post/560778