৮ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ১১:৪৮

খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ এর কোটায় অব্যাহত

এখনো খাদ্যমূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। প্রায় দুই বছর সময়কাল ধলে এই উচ্চমূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। শুধু তা-ই নয়, পরপর দুই অর্থবছর ধরে মূল্যস্ফীতি টানা ১০ শতাংশের ঘরে অবস্থান করছে। যেমন-২০২২-২০২৩ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। গেল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরেও এই গড় মূল্যস্ফীতির রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। শুধু ’৮০ দশকে প্রথম দিকে এই ধরনের উচ্চ মূল্যস্ফীতি লক্ষ করা গেছে।

এ দিকে গত জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ হয়েছে। এর আগে মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। একই সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও তিন মাস ধরে তা ১০ শতাংশের বেশি আছে। জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ। গতকাল রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে মূল্যস্ফীতির এই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে বিআইডিএস মহাপরিচালক বলেছেন, দেশে খাদ্যমূল্যস্ফীতি এখন ১৫ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে।

বিবিএসের তথ্যে দেখা গেছে, মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ; আগের মাস এপ্রিলেও তা ছিল দুই অঙ্কের ঘরে, ১০ দশমিক ২২ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭২ শতাংশের অর্থ দাঁড়ায়, গত বছরের জুন মাসে যেসব পণ্য ও সেবা ১০০ টাকায় কেনা গেছে, চলতি বছরের জুনে সেই একই পণ্য ও সেবা কিনতে একজন ভোক্তাকে ১০৯ টাকা ৭২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এই এক বছরে বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে নি¤œ ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের কষ্ট সবচেয়ে বেশি বাড়ে। তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

জুন মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়েছে। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, আগের মাস অর্থাৎ মে মাসে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।

দুই বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এই পুরো সময় ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তাতে লাভ হয়নি। বরং মূল্যস্ফীতি উচ্চ স্তরেই রয়েছে, মাঝেমধ্যে কেবল সামান্য একটু ওঠানামা করছে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন দেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এবং তা সরকারি হিসেবে চেয়ে অনেক বেশি।

এর চাক্ষুস প্রমাণ পাওয়া যায়, খোদ সরকারি সংস্থা বিআইডিএসের এক জরিপে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মাছের দাম। গত এক বছরে মাছের দাম ২০ শতাংশের ওপর বেড়েছে। এরপর বেড়েছে মুরগিসহ পোলট্রি পণ্যের দাম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) নিজেদের উদ্যোগে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে করা সাম্প্রতিক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিনায়ক সেন বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে বিআইডিএসের পক্ষ থেকে দেশের সব জেলা থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাতে দেখা গেছে, গরিব মানুষের ক্ষেত্রে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৫ শতাংশ। বাড়তি এ মূল্যস্ফীতির কারণে নি¤œ আয়ের মানুষ অসুবিধায় রয়েছেন। ডিসেম্বরে বিবিএস মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করেছিল, তাতে সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের কাছাকাছি। এরপর আমরা আমাদের জরিপের তথ্যে পেয়েছি, গরিব মানুষের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা মাছ ও পোলট্রি পণ্যের দামের।’

তবে বিআইডিএসের জরিপের তথ্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আদৌতে এই জরিপ আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/848020