৮ জুলাই ২০২৪, সোমবার, ১১:৪৫

বন্যায় ১৮ জেলায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার

নতুন করে তিন জেলাসহ চলমান বন্যায় দেশের ১৮ জেলায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। দেশের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রোববার সচিবালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের জন্য ৩ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

মো. মহিববুর রহমান বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের জন্য ১৮ জেলায় ২১ হাজার ৭০০ টন চাল, নগদ ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ৬৫ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার, গো-খাদ্য বাবদ ৪০ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিলেট-৩, সুনামগঞ্জ-১ ও মৌলভীবাজার-২ সংসদীয় আসনে আড়াই হাজার প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানিবন্দী মানুষগুলো ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন। খাবার সংকটের পাশাপাশি আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। ধনী কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তারা। জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট।

গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলী : উজানের ঢল এবং গেল সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার।বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলাসহ আড়াই হাজার হেক্টরের অধিক জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিকেল ৩টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাডা, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, জেলার করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাইবান্ধা সদর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের ৯ টি, সাঘাটার ৮ টি এবং ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ২৯ ইউনিয়নে পানিবন্দি রয়েছে ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদরে ৩৯ হাজার ৮৮৯টি, সুন্দরগঞ্জ ৫২ হাজার, সাঘাটা ১৫ হাজার ১৫০টি ও ফুলছড়ি ৭৪ হাজার ৯০টি পরিবার পানিবন্দি। তবে স্থানীয়দের দাবি বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরও বেশি। পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ছয়টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ১৭টি, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১টিসহ জেলার মোট ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

এছাড়া, সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তিনটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ।
পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষ শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকট আকার ধারণ করেছে গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা।

সাত দিন থাকি পানিত আচি, একনো কোনো ইলিপ পানো না’
রান্নাঘরে হাঁটুপানি তাই থাকার ঘরে একটি কাঠের টেবিলে চুলা বসিয়ে রান্না করছেন এক গৃহীনি। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে তোলাছবি
চারপাশে অথৈ পানি। রান্নাঘরে হাঁটুপানি। ঘরের মেঝেও ডুবে গেছে। তাই থাকার ঘরে একটা কাঠের টেবিলে চুলা বসিয়ে রান্না করছেন গৃহিণী আয়শা বেগম (২৫)। পাশে একটি চৌকিতে দুই শিশুসন্তান আশিক মিয়া (৭) এবং আরমান মিয়া (১১ মাস) বসে রান্না শেষ হওয়ার অপেক্ষায়।গতকাল তিস্তা নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের পোড়াচর গ্রামের দিনমজুর মনিরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। আয়শা বেগম দিনমজুর মনিরুল ইসলাম স্ত্রী। মনিরুল ইসলাম চরে ঘোড়ার গাড়ি চালান।
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কামারজানি বাজার। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে প্রায় এক ঘণ্টার পথ। তারপর কাপাসিয়া ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রাম। পোড়ারচরসহ ইউনিয়নটি তিস্তা নদীর কারণে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন। পুরো ইউনিয়ন এখন পানিতে নিমজ্জিত।

পোড়ারচরসহ ইউনিয়নটি তিস্তা নদীর কারণে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন। পুরো ইউনিয়ন এখন পানিতে নিমজ্জিত
পোড়ারচর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় ডুবে আছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। উঠোনে ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকায় অবস্থান করছে। অনেকে কলাগাছের ভেলা চালাচ্ছে। ইউনিয়নের সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি। অনেক লোকজন বাড়িতেই আছেন। মাচা করে ও চৌকিতে হাঁস, মুরগি রেখেছেন। অন্য গ্রামের উঁচু জায়গায় গরু-ছাগল রেখেছেন।

রোববার দুপুর পর্যন্ত এসব এলাকায় কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি।কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনজু মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘গোটা ইউনিয়নে প্রায় ৪২ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার মানুষই অভাবী। বেশির ভাগ মানুষ এখন পানিবন্দী। এ পর্যন্ত ইউনিয়নে আড়াই মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু ইউনিয়নের লোকসংখ্যা অনুপাতে ত্রাণ বরাদ্দ পাইনি। অর্থাৎ যে পরিমাণ ত্রাণ দরকার, তা পাইনি।’সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, বন্যায় যেসব ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, সেগুলোয় বেশি ত্রাণ দেওয়া হবে। পোড়ারচর গ্রামেও ত্রাণ পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলমান বন্যায় চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে ডুবে গেছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষতি কম হবে। অন্যথায় ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাবে। গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, এ পর্যন্ত সদরসহ চার উপজেলার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ৩০৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬৫ মেট্রিক টন জি আর চাল (প্রাকৃতিক দুর্যোগ), ১০ লাখ টাকা জি আর ক্যাশ ৪টি উপজেলায় উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২৬৫ মেট্রিক টন জি আর চাল (প্রাকৃতিক দুর্যোগ) মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পিড বোট প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন,পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা এবং উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম এবং লাইভস্টোক টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া একাধিক এনজিও বানবাসী মানুষের সেবায় কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
জুলফিকার আলম, জামালপুর সংবাদদাতা : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, রোববার সকাল ১১টায় দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট যমুনা নদীর পানি ২৪ ঘন্টায় ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, ইসলামপুর,মেলান্দহ,মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রতিদিনই বন্যার পানি প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা, তলিয়ে গেছে ৬হাজহার ৮শ ৭২ হেক্টর ফসলি জমির ফসল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর জেলার কৃষি উপপরিচালক জাকেয়া সুলতানা। এদিকে দেওয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিততি ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতনর জীবন করছে। বেশিরভাগ ইউনিয়নের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা পশ্চিমঞ্চলে ৮টি ইউনিযনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, বন্যা পরিস্থিতি বয়াভহ পরিস্থিতি রুপ ধারণ করায় উপজেলার ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫০টি মাধমিক ও ৫টি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, প্লাবিত এলাকায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চেয়ারম্যান মেম্বার ও গ্রাম পুলিশসহ মেডিকেল টীম সার্বক্ষণিক প্রস্তÍুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বন্যার পানির কারণে জেলায় ১শ ৫টি প্রাথিমিক বিদ্যালয় ও ৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কয়েকশ পরিবার গবাদি পশু নিয়ে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা : ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৩১টি মৌজা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। দুধকুমার নদের পাটেশ^রী পয়েন্টে বিপদ সীমার ৫১ সেন্টি মিটার (সকাল ৯টা) উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গবাদিপশু ও ধান চাল নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। ইতিমধ্যে আব্দুল করিম ১৫০০ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,পাইকডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শালঝোড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ঢলডাঙ্গা ও পূর্ব ঢলডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় , ১ ও ২নং চর ধাউরারকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় , ভরতের ছড়া ও তিলাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি প্রবেশ করেছে এবং স্কুল গুলোতে আসার রাস্তা তলিয়ে গেছে। শালঝোড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, তার বিদ্যালয়ে বারান্দা পর্যন্ত বন্যার পানি ঢুকেছে। স্কুলে আসার রাস্তা ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ছাত্রচাত্রীরা আসতে পারছেনা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেশ উদ্দিন সরকার জানান, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ৮টি সরকারী প্রাথমিকে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস জানান, (রোববার) বন্যাকবলিত আন্ধারীঝাড়,পাইকেরছড়া, তিলাই, চরভূরুঙ্গামারী ও সোনাহাট ইউনিয়নে বন্যার্তদের মধ্যে ১১ মেঃটন চাল বিতরণ চলছে। এর আগে দেড় শতাধিক পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে আরো ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হবে।

ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা : ছাতকে টানা ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ী ঢলে উপজেলার নি¤œাঞ্চলসহ বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। অনেক স্কুল-মাদ্রাসার আঙ্গিনা তলিয়ে গিয়েছিল বন্যার পানিতে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। তবে এখনো সুরমা নদীর ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ধনীটিলা-ছনবাড়ী বাজার সড়ক, ইছামতি-ছনবাড়ীবাজার সড়ক, শিমুলতলা-মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক সহ উপজেলার অর্ধশতাধিক কাচা-পাকা গ্রামীন সড়ক তলিয়ে গিয়েছিল বন্যার পানিতে। ইউনিয়নের নোয়কুট, রহমতপুর, বনগাঁও, দারোগাখালী, বৈশাকান্দি, ছনবাড়ী, ইছামতি, লুবিয়া, বাগানবাড়ি, রাসনগর, রতনপুর সহ নোয়ারাই, ছাতক সদর, কালারুকা, উত্তর খুরমা, চরমহল্লা, জাউয়া, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ, দক্ষিন খুরমা, ভাতগাঁও, দোলারবাজার ও সিংচাপইড় ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে গতকাল (৬ জুলাই) ৫২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রাহিত হয়েছে। আজ (০৭ জুলাই) ৪২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে চলতি মাসের দু-দফা বন্যার কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় গ্রামীণ সড়কের প্রায় ২২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের বন্যায় উপজেলার গ্রামীণ অঞ্চলের কয়েক শতাধিক কাঁচা বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। যে কারণে বানভাসি মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক ও সেতু-কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এসব রাস্তায় বন্যার পানি কমে যাওয়ায় এখন ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান। পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানির প্রবল ¯্রােতে ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া দোয়ালিয়া-সুনামগঞ্জ সড়কের আন্ধারীগাঁও এলাকায় পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। একই সড়কে ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার একটি অংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন কৈতক-সিরাজগঞ্জ, কালিপুর-হায়দরপুর-সাতগাঁও, মঈনপুর-সিরাজগঞ্জ, জালালপুর-রসুলগঞ্জ, দোলারবাজার-জাগিদপুর জাউয়া-লক্ষমসোম, ভাতগাঁও-ভমভমী বাজার, ধারণবাজার-আমেরতল, নোয়ারাই-মৌলা- চৌমহনী বাজার, ছাতক সদর-আমেরতল, কালারুকা ইউপির তাজপুর ও কাজিহাটা এবং রামপুর সড়কে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ফকিরটিলা-সোনালীচেলা, নোয়ারাই-নরসিংপুর, জোড়াপানি-চৌমহনী বাজার, গোবিন্দগঞ্জ- লাকেশ্বর, বড়কাপন-পান্ডারগাঁও, জাউয়া-ঝামক ও কচুরগাঁও সড়কসহ উপজেলার অন্তত ১৫টি সড়ক ভেঙে গেছে। এদিকে এবারের বন্যায় সুরমা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন ও ফাটল ধরেছে। সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় সড়কের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় যান চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) লাল পতাকা টানিয়ে রেখেছে। একই সঙ্গে এই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জরুরি মেরামত কাজও চলছে। নোয়ারাই ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা ও ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেল জানান, বন্যায় তাদের ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, সবজি বাগান, কৃষি ও মৎস্য খামারিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কেএম মাহবুব রহমান জানান, উপজেলার মধ্যে অনেক কাঁচা সড়ক বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে অবহিত করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদ জানান, বন্যায় বিভিন্ন এলাকার পাকা সড়ক ভেঙে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক জানান, বন্যার্তদের জন্য এখানে ১৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না জানান, বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যায় উপজেলার বেপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম থেকে মোস্তাফিজুর রহমান : চলতি বন্যায় হু-হু করে নেমে আসা ভারতীয় পানিতে কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র পয়েন্টে পানি বাড়ছেই, যা আরও বেড়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। অনেক পরিবার খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগছে। পশুপাখি নিয়ে চরম বেকায়দায় আছেন বানভাসি মানুষজন।

ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্ট ৬৭ সেন্টিমিটার, দুধকুমার পাটেশ্বরি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৫১, ধরলা পয়েন্টে ৩১ সেমি, ব্রহ্মপুত্র নুন খাওয়া কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৫৩, ব্রহ্মপুত্র হাতিয়া পয়েন্ট ৫৬ সেন্টিমিটার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করছে।

চলনবিলে পানিবন্দী মানুষের ত্রাণের জন্য হাহাকার
শাহজাহান, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) : ভারত থেকে উজানের ঢলে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলেরমত চলনবিলে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের কষ্ট। ডুবছে নতুন নতুন এলাকা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত চলনবিলের সিরাজগঞ্জ নাটোর পাবনার তাড়াশ চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া,গুরুদাসপুর, ফরিদপুর, সলঙ্গা, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর আত্রাই সিংড়া নিম্মাঞ্চল বন্যার পানি তলিয়ে গেছে। যমুনা করতোয়া বড়াল আত্রাই, কাটাখাল,ভদ্রাবতীসহ অনেক নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই। কিছু নদীর পানি বিপৎসীমার বেশ উপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ভাঙ্গন ও দুর্ভোগ লেগেই আছে।। এতে ৩ জেলার ৯ উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি। বাড়িঘর ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু এলাকায়। দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। প্লাবিত নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। চলনবিলের সবচেয়ে বেশি বন্যা কবলিত এলাকা তাড়াশের হামকুড়িয়া, দক্ষিন শ্যামপুর, আমবাড়িয়া সগুনা ইউনিয়নের কামাসন ,মাকড়সন,কুন্দইল,বিন্নাবাড়ি, নাদো সৈয়দপুর এলাকায় আকস্মিক বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ তৎপরতাসহ সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ।

যমুনা ও আদ্রাই নদী বিধৌত চলনবিল এলাকার মধ্যে ১৬ টি নদী আছে ,তাড়াশের বুকচিরে দুই পাশে বয়ে গেছে দুইটি নদী। ফলে বন্যা মৌসুম এলেই অবর্ণীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয় এই অঞ্চলের মানুষের। যমুনার পানিতে ডুবছে সিরাজগঞ্জ-নাটোর ও পাবনার নতুন নতুন এলাকা। বাড়িঘরে পানি, জ্বলছে না চুলা। খেয়ে না খেয়ে কাটছে অনেকের দিন।

https://www.dailysangram.info/post/560640