২৪ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ১১:৫৬

মাথাপিছু ৫ টাকা, চাল ১,১২৫ গ্রাম!

চলতি বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট জেলায় বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। জেলার সব কটি উপজেলাসহ সিলেট শহরও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সিলেট শহরে বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার, আর সদর উপজেলায় ৭০ হাজারের বেশি। সবচেয়ে বেশি এক লাখ ৮৫ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ওসমানীনগর উপজেলায়।

বন্যায় আক্রান্ত এসব মানুষের জন্য সরকারিভাবে যে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা অপ্রতুল।
গত ২৯ মে থেকে গত ২১ জুন পর্যন্ত সরকারের পক্ষে সিলেট জেলায় বন্যা আক্রান্ত মানুষের জন্য নগদ ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ১১৭৫.৫০ মেট্রিক টন বা ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

হিসাব করে দেখা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ মাথাপিছু ত্রাণ পেয়েছে পাঁচ টাকা ১৫ পয়সা এবং এক কেজি ১২৫ গ্রাম চাল। শুকনা খাবারের প্যাকেট পেয়েছে বন্যা আক্রান্ত ২১৭ জন মানুষের বিপরীতে একজন।

বন্যাসংক্রান্ত সিলেট জেলা প্রশাসনের দেওয়া হিসাব বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসন থেকে গত শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী ওই দিন পর্যন্ত সিলেট জেলায় বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৪৩ হাজার ১৬১। একই দিন রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো আরেক বিজ্ঞপ্তিতে ওই দিন পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণের তথ্য তুলে ধরা হয়।

ওই তথ্য থেকে উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু ১৩.৯১ টাকা করে ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জের বন্যাক্রান্তরা, সবচেয়ে কম ত্রাণ পেয়েছে ওসমানীনগরে মাথাপিছু এক টাকা ৩৫ পয়সা।

মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি চালের বরাদ্দ তিন কেজি ৩৩০ গ্রাম করে পেয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জে, সবচেয়ে কম মাথাপিছু ৪০০ গ্রাম করে ওসমানীনগর উপজেলায়। শুকনা খাবারের প্যাকেটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রতি ৮১ জনে একজন পেয়েছে বিশ্বনাথে, আর সবচেয়ে কম প্রতি ৫২৯ জনে একজন পেয়েছে ওসমানীনগর উপজেলায়।

উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণ বরাদ্দ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় বন্যাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৮৫ হাজার। এ উপজেলায় ৬৯ মেট্রিক টন চাল, জিআর নগদ দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৩৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করেছে প্রশাসন। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪০০ গ্রামের কম, নগদ অর্থ এক টাকা ৩৫ পয়সার কিছু বেশি।
উপজেলায় প্রতি ৫২৯ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট।

গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত এক লাখ ৪৫ হাজার ২০০ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে চার লাখ টাকা, ৬৯ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৫৪৫ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৭৫ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ দুই টাকা ৭৫ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ৩১৯ জনে একজন পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট।

জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যাকবলিত এক লাখ ২১ হাজার ৮২৫ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৯৫ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৪৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৭৯ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ এক টাকা ০২ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ২৭০ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যাকবলিত ৯৫ হাজার ৫০০ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নগদ চার লাখ টাকা, ৭৩ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৬০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৬৪ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ চার টাকা ১৮ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ১৫৯ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট।

জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যাকবলিত ৯০ হাজার ১৬০ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন লাখ টাকা, ৭৩ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক কেজির কম (৮০৯ গ্রাম), নগদ অর্থ তিন টাকা ৩২ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ১৮০ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট।

বালাগঞ্জ উপজেলায় বন্যাকবলিত ৭১ হাজার ৮০৭ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৫৮ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮০০ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ তিন টাকা ৪৮ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ৩৫৯ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট।

সিলেট সদর উপজেলার বন্যাকবলিত ৭০ হাজার ৪৬৫ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা, ৬৩.৫০ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৩২৫ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯০১ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ চার টাকা ২৫ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ২১৬ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট।

বিয়ানীবাজার উপজেলায় বন্যাকবলিত ৫৪ হাজার ৪৫০ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৮৫.৫০ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক কেজি ৫৭০ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ পাঁচ টাকা ৯৬ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ১৮১ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট।

কানাইঘাট উপজেলায় বন্যাকবলিত ৪২ হাজার ৩৫১ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে চার লাখ টাকা, ৯৫ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কেজি ২৪৩ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ পাঁচ টাকা ৯৬ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ৮৫ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবারের প্যাকেট।

বিশ্বনাথ উপজেলায় বন্যাকবলিত ৩০ হাজার ৪২৪ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭৪.৫০ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৩৭৫ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কেজি ৪৪৮ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ আট টাকা ২১ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ৮১ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবার।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় বন্যাকবলিত ২৯ হাজার ৮৫০ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৬৯ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কেজি ৩১১ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ আট টাকা ৩৭ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ১৪৯ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবার।

গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বন্যাকবলিত ২৮ হাজার ১৬৬ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৯১ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন কেজি ৩৩০ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ ১১ টাকা ৫৩ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ৯৪ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবার।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যাকবলিত ১৭ হাজার ৯৬৩ জন মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৫২.৫০ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ১৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার। সে হিসাবে মাথাপিছু চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কেজি ৯২২ গ্রামের কিছু বেশি, নগদ অর্থ ১৩ টাকা ৯১ পয়সার কিছু বেশি। উপজেলায় প্রতি ১২০ জনের মধ্যে একজন পেয়েছে শুকনা খাবার।

সিলেট শহরে বন্যাকবলিত ৬০ হাজার মানুষের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ টাকা ও ১৬৫ মেট্রিক টন চাল। সে হিসাবে জনপ্রতি মাথাপিছু চালের বরাদ্দ দুই কেজি ৭৫০ গ্রাম এবং নগদ অর্থ বরাদ্দ মাথাপিছু ২১ টাকা ৬৬ পয়সা।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/06/24/1399893