২৪ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ১১:৫৪

চামড়ার দাম নেই, পণ্যের দাম চড়া

দেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহৎ উৎস চামড়াজাত পণ্য। দেশের বাজারেও রয়েছে জুতা, ব্যাগ ও বেল্টের মতো পণ্যের প্রচুর চাহিদা। চামড়াজাত পণ্যের দাম প্রতিবছর বাড়লেও কাঁচা চামড়ার দাম যেন থমকে আছে।
সারা বছরের মধ্যে বেশির ভাগ চামড়া পাওয়া যায় কোরবানির ঈদে।

কোরবানিদাতা ও কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা মাদরাসা-এতিমখানাগুলো খুব বেশি দাম পায় না। কিন্তু চামড়াজাত পণ্যগুলোর দাম যেন আকাশছোঁয়া। এই দৃশ্য গত প্রায় এক দশকের।

স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক জোড়া জুতার দাম দেশের বাজারে দুই হাজার থেকে শুরু করে ৮-৯ হাজার টাকা।
বেল্টের দাম ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা। মানিব্যাগ ৮০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা। মেয়েদের ব্যাগের দাম এক হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর ওদিকে একটি কাঁচা চামড়ার দাম ২০০ থেকে ৯০০ টাকা।

রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগে অবস্থিত খানকা-ই-মাশুরিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা। বর্তমানে এখানে এতিম, গরিব-অসহায় ছাত্র রয়েছে ১২৫ জন, যাদের প্রায় ১০০ জনই আবাসিক। এসব ছাত্রের খাবার ও পোশাকের বেশির ভাগই দানের টাকা থেকে আসে। এবার তারা কোরবানির ঈদের দিন ৫৮৩টি চামড়া পায়। লবণ না দেওয়া এসব চামড়া ব্যাপারীদের কাছে পাইকারি ৮১২ টাকা করে বিক্রি করা হয়।

এই প্রতিষ্ঠানের কালেক্টর হাফেজ আবু সাইদ কালের কণ্ঠকে জানান, এই দামও নাকি অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি পেয়েছেন তাঁরা।

গুলশানের ভাটারা এলাকায় অবস্থিত আব্দুল মজিদ খন্দকার দারুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর চামড়া সংগ্রহ করে একজন ব্যাপারীকে দিয়ে দেয়। তিনি সরাসরি ট্যানারিতে সরবরাহ করেন। চামড়ার মূল্য দেন দুই-তিন মাস পর। তখন বাজারের সর্বোচ্চ মূল্য দেওয়া হয়। এই মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মুফতি আলী আহমাদ বলেন, ‘আমরা ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চামড়ার অনেক ভালো দাম পেয়েছি। তখন একটি চামড়া প্রায় তিন হাজার টাকাও বিক্রি করেছি। আর এখন যে চামড়া আমরা দিয়েছি তার দাম হয়তো ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা পাব।’

মাদরাসাটির প্রিন্সিপাল আরো বলেন, ‘আশ্চর্য লাগে, যখন সব জিনিসের দাম বাড়ছে, তখন চামড়ার দাম কমেছে। অথচ এই চামড়ার মূল্য কিন্তু অসহায়, গরিব ও এতিমদের জন্য খরচ করা হবে। আমাদের এখানে মোট ১০০ জন ছাত্র, যার মধ্যে ৭০ জনই আবাসিক। চামড়ার কম দামের ফলে বঞ্চিত হচ্ছে মাদরাসা ও এতিমখানার এই ছাত্ররা।’

সব কিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু চামড়ার দাম কেন কমছে? জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার পর ইউরোপ-আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি হয়েছে। চামড়াজাত পণ্যের মূল ব্যবহারকারী ওরাই। ওখানে ব্যবহার কমে গেছে। আর এর মধ্যে আর্টিফিশিয়াল লেদারের ব্যবহার বেড়ে গেছে, যার কারণে চামড়ার দাম কমে গেছে। আবার আমাদের এখানে কমপ্লায়েন্সের কারণে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে পারছি না। সব কিছু মিলিয়েই এই অবস্থা। চামড়াজাত পণ্য কেনার সক্ষমতা কমে গেছে মানুষের। ফলে তারা কম দামের আর্টিফিশিয়াল লেদারের দিকে ঝুঁকছে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/06/24/1399889