২৪ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ১১:৫১

৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন খালি, বাজার বসে সড়কে

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার কাঁচাবাজারের পাশের সড়কে বসেছে বাজার। গত শনিবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার কাঁচাবাজারের তিনতলা ভবন নির্মাণে খরচ হয় ৬ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়। নিচতলায় দোকান বসলেও দোতলা ও তিনতলা খালি পড়ে আছে সাড়ে চার বছর ধরে। তবে মূল বাজারের এই অংশ খালি থাকলেও পাশের সড়ক ও ফুটপাতের ভাসমান বাজার জমজমাট। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলেন সিটি করপোরেশনের ইজারাদার।

অবৈধভাবে দোকান বসার কারণে এই চকবাজারের কে বি আমান আলী সড়কের ধুনিরপুল ও ফুলতলা এলাকায় প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে। আবার এসব ভাসমান দোকানের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় চাক্তাই খালে। এতে অল্প সময়ে ভরাট হয়ে যায় খাল। ফলে বর্ষার সময় অল্প বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানিতে আশপাশ এলাকা তলিয়ে যায়।

মূল বাজারের এই অংশ খালি থাকলেও পাশের সড়ক ও ফুটপাতের ভাসমান বাজার জমজমাট। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলেন সিটি করপোরেশনের ইজারাদার।

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার কাঁচাবাজারের জন্য তিনতলা ভবনের দুটি তলা খালি পড়ে আছে। শনিবার নগরের ধুনিরপুল এলাকায়ছবি: সৌরভ দাশ

চকবাজার কাঁচাবাজারে দোকান বরাদ্দ পাওয়া দোকানিদের অভিযোগ, ফুটপাতের ভাসমান দোকানের কারণে তাঁরা দোকান চালু করতে পারছেন না। কেননা, দোকান চালু করলেও তাতে বিক্রি হবে না। মানুষ নিচ থেকে বাজার করে নিয়ে যেতে পারলে দোতলায় কেন উঠবেন? বাজারের দোতলা ও তিনতলা অংশ চালু করতে হলে সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে দায়িত্ব নিতে হবে।
অবশ্য সিটি করপোরেশনের চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা এবং রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন দোকান বরাদ্দ দিয়েছে। এখন বরাদ্দ পাওয়ার পর যদি কেউ দোকান চালু না করে, তাহলে তাঁদের কিছু করার নেই। তারপরও বরাদ্দ পাওয়া দোকানিদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তাঁদের দোকান চালুর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁরা দোকান চালু করছেন না।

এই ভবনে মোট ১৫০টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুরোনো দোকান ছিল ১১২টি এবং নতুন দোকান ৩৮টি। পুরোনো দোকানগুলো বিক্রি হয় প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার টাকা করে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে নগরের চকবাজার কাঁচাবাজারের সাততলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ১০ বছর আগে। প্রাথমিকভাবে তিনতলার নির্মাণকাজ শেষ হয়। এই অংশের নির্মাণে ব্যয় হয় ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর কাঁচাবাজারের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে উদ্বোধনের পর নিচতলা চালু হলেও দোতলা ও তিনতলা খালি পড়ে থাকে।

এতে দোকানপ্রতি খরচ হয় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১৫০টি দোকান বিক্রি করে সিটি করপোরেশনের আয় হয় ৬ কোটি টাকা।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন করে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাই দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে পুরোনো দোকানিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এই ভবনে মোট ১৫০টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুরোনো দোকান ছিল ১১২টি এবং নতুন দোকান ৩৮টি। পুরোনো দোকানগুলো বিক্রি হয় প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার টাকা করে। ৩৬ বর্গফুটের দোকান কিনতে দোকানিদের খরচ হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নতুন দোকানগুলো বিক্রি করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৫ হাজার টাকা। এতে দোকানপ্রতি খরচ হয় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১৫০টি দোকান বিক্রি করে সিটি করপোরেশনের আয় হয় ৬ কোটি টাকা।

ভবন খালি, ফুটপাত-সড়কে বাজার
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কাঁচাবাজারের দোতলার বড় একটা অংশ খালি পড়ে আছে। আরেকটি অংশে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের জন্য নতুন কেনা ভ্যানগাড়ি রাখা হয়েছে। আর তিনতলার এক পাশে কাউন্সিলর কার্যালয়। এই দুটি তলায় নিচতলার দোকানের কর্মীরা বিশ্রাম নেন। আর মূল ভবনের বাইরে সড়ক ও ফুটপাতে সবজি, মাছসহ নানা ধরনের দোকান বসেছে। ভ্যানগাড়ি ও টেবিলের ওপর এসব দোকান বসানো হয়েছে।

দোকান বিক্রি করে সিটি করপোরেশন বিপুল টাকা আয় করলেও বিনিয়োগ করে দোকানিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বরাদ্দ পাওয়া চারজন দোকানির সঙ্গে কথা হয়। তবে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, অনেক আশা নিয়ে দোকানগুলো কিনেছিলেন। মনে করেছিলেন বিনিয়োগ করে লাভবান হবেন। দোকান থেকে একটি ভালো আয় হবে। কিন্তু বাজারের বাইরে ফুটপাত ও সড়কে দোকান বসার কারণে আর দোকান চালু করেননি।

চকবাজার কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দায়িত্বে থাকার সময় দোতলা ও তিনতলা চালুর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ফুটপাত ও সড়কের দোকানগুলো তুলতে পারেননি। এভাবে বাজারের সামনে দোকান থাকলে মূল বাজারে তো ব্যবসা হবে না। তাই দোকানিরা দোকান কিনেও তা চালু করেননি। এখন যদি চালু করতে হয়, তাহলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রাজস্ব বিভাগকে দায়িত্ব নিতে হবে।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/1ezefv44y7