১২ জুন ২০২৪, বুধবার, ৬:১০

গরু নেই লাখ টাকার কমে

ঈদ ঘনিয়ে আসায় ব্যস্ত হয়ে উঠছে রাজধানীর পশুর হাট। নানান জাতের পশুতে সরব এখন রাজধানীর প্রতিটি হাট। সকাল থেকে রাত একটু পরপর আসছে গাড়িভর্তি কোরবানির পশু। গাড়ি থেকে নামিয়ে সেগুলোকে লাইনে সাজাতে ব্যস্ত বিক্রেতারা। এরই মধ্যে কেউ কেউ এসে দাম জানতে চাইছেন। তবে দাম শুনে দরদাম না করেই ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতা। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে কোরবানির হাটে মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। আর দামের দিক দিয়ে লাখ টাকার কমে কোনো গরু নেই।
সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, এ বছর রাজধানীতে কোরবানির পশুর মোট ২০টি হাট বসবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১১টি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাটসহ ১০টি অস্থায়ী হাট হলো, শ্যামপুর কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ডের পাশে, রহমতগঞ্জ ক্লাবের পাশে, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাবের পাশে, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ এলাকা, মেরাদিয়া বাজারের পাশে, আমুলিয়া মডেল টাউনের পাশে, দনিয়া কলেজের কাছের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালের আশপাশে এবং কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোড ও লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবের আশপাশে।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাটগুলো হলো, উত্তরা দিয়াবাড়ী বউবাজার এলাকা, মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিং, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, কাওলার শিয়ালডাঙ্গার এলাকা, ভাটারার সুতিভোলা খালের পাশের জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলা ৪০ ফুট রাস্তার পাশে, খিলক্ষেতের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমপাড়ার খালি জায়গা এবং ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাচকুড়া ব্যাপারীপাড়ার রহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা।

কর্তৃপক্ষ জানান, কোরবানির পশু বেচাকেনা ও হাটগুলোর নিরাপত্তা জোরদারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্যসহ বিশেষ নিরাপত্তারব্যবস্থা থাকছে। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ছয় আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা পশুর হাটগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষা এবং যেখানে-সেখানে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধে কাজ করবেন।

গতকাল রাজধানীর মেরাদিয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে পুরো এলাকাজুড়ে সারিবদ্ধভাবে পশু রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন আকৃতির গরু, ছাগল ও ভেড়া। তবে ছোট ও মাঝারি গরুর সংখ্যা ছিল বেশি। হাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের এখনো পাঁচ দিন বাকি। তাই বাজারে এখনো সব পশু তোলা হয়নি। দিন যত যাবে প্রতিদিন পশুর সংখ্যা বাড়বে। মূল বাজার শুরু হবে ঈদের দুই দিন আগে। তখন হাটের আসল রূপ বুঝা যাবে।

বিক্রেতারা জানান, এবার পশু লালন পালন এবং বাজারে আনতে খরচ বেশি পড়েছে। তাই দামও গতবারের চেয়ে একটু বেড়েছে। তাদের ভাষ্য, বর্তমানে ছাগল, ভেড়ার সর্বনিম্ন দাম ১৫ হাজার টাকা। আর খাসি ২৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে গাবতলী হাটসহ কিছু হাটে কিছু উট তোলা হয়েছে তার দাম ২০ লাখের কম নয়। আর কিছু দুম্বাও রয়েছে। যেগুলোর প্রতিটির দাম তিন লাখের কম নয়।

রাজশাহী থেকে আসা গরু পাইকার সবুজ জানান, তিনি ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন। এগুলো আনতে খরচ পড়েছে প্রায় এক লাখ। গরুগুলো সাইজে বড়। প্রতিটির দাম পাঁচ লাখ। তাই চাহিদা অনুযায়ী দামে বিক্রি করতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। কারণ বাজারে আসার পর এখন পর্যন্ত যা মনে হচ্ছে তা হলো ক্রেতার কাছে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর দাম কেউ জিজ্ঞেস করতে আসে না। যারা আসছেন তারা দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা লোকমান জানান, তিনি ছয়টি গরু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বাজার এখনো শুরু হয়নি। তাই গরু কিভাবে সুস্থ রাখবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ অতিরিক্ত গরম। তাই পরিচর্যায় খরচ বেড়েছে। বিক্রি না করতে পারলে বড় অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হবে।

বনশ্রী থেকে গরু কিনতে আসা রুকন জানান, তিনি গত দুই দিন বাজারে এসেছেন। তার পছন্দ ছোট গরু। কিন্তু বাজার এখনো পুরোপুরি শুরু না হওয়াতে নিজের বাজেট অনুযায়ী পছন্দের গরু মিলছে না। তার ভাষ্য গত দুই দিনে যে পরিমাণ গরু দেখেছেন তাতে লাখ টাকার কম কোনো গরু পাননি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/842203