৩০ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:০৬

মন্দা নামছে ব্যাংকিং খাতে

এক মাসে আন্তঃব্যাংকে লেনদেন কমেছে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংকিং খাতে লেনদেনে ছন্দপতন দেখা দিয়েছে। সাধারণত এক মাসের তুলনায় আরেক মাসে বাড়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে বরং এক মাসে বাড়ছে আবার পরের মাসে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন কমেছে এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে বেড়েছিল ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছন্দ পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা মনে করছেন, সাম্প্রতিক দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সাথে মিলিয়ে দেয়ার তথ্য বের হওয়ায় মানুষ যেমন দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে, অপর দিকে ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যেও লেনদেন কম হচ্ছে। সবমিলেই এ অবস্থা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে সব ব্যাংকগুলোর আন্তঃব্যাংকে লেনদেন করেছিল ৭ লাখ ১৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে তা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১ লাখ ১১ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সব ধরনের ব্যাংকেই আন্তঃব্যাংক লেনদেন কমেছে। তবে গ্রাহকরা আন্তঃব্যাংকে লেনদেন কমিয়ে এটিএম বুথের মাধ্যমে বেশি সেবা নিচ্ছেন। যে কারণে এটিএম বুথের মাধ্যমে লেনদেন বেড়ে যাচ্ছে। তবে যে হারে আন্তঃব্যাংকিংখাতে লেনদেন কমেছে সেহারে এটিএম বুথের মাধ্যমে লেনদেন বাড়েনি। এ দিকে বিভিন্ন ধরনের কার্ডের মাধ্যমেও লেনদেন কমে গেছে।

প্রচলিত ব্যাংকগুলোর জানুয়ারিতে আন্তঃব্যাংকে লেনদেন করেছিল ৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে লেনদেন কমেছে ৯৯ হাজার ৯২০ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে লেনদেন কমে গেছে। এর অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতি। বাধ্যতামূলকভাবে দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত করার ঘোষণা আসে। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকের তালিকাও গণমাধ্যমে চলে আসে। এতে আতঙ্কিত হয়ে যায় মানুষ। তারা দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে থাকে তুলনামূলকভাবে বেশি। শুধু তা-ই নয়, সরকারি দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত তোলার চাপ বাড়ে। বাধ্য হয়ে বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করে। সবমিলেই আন্তঃব্যাংকে লেনদেন কমে যাওয়ার প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতের বড় ধরনের লেনদেন হতো আগে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে। কিন্তু বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষ করে আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ভাটা পড়েছে এসব ব্যাংকগুলোতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা।

ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ৯ হাজার ৮৭১ কোটি টাকার। এক মাসের ব্যবধানে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে ১ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। যদিও সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। একটি ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ দিতে পারছে না বলে সামগ্রিকভাবে ইসলাম ব্যাংকিংয়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আবার ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে রফতানি আয়েও ভাটা পড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে জানুয়ারিতে রফতানি আয় এসেছিল ৭ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ৬ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রফতানি আয় কমেছে ৬৩৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সামগ্রিকভাবে রফতানি আয়ও সামান্য কমেছে। জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকগুলো আমদানি বাণিজ্যে অর্থায়ন করেছিল ১২ হাজার ২০২ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে অর্থায়ন দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকায়। আলোচ্য এ মাসে এ খাতে অর্থায়ন কমেছে ২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। ওই সময়ে সামগ্রিকভাবে আমদানিও কমেছে। ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত ও সম্পদের পরিমাণ কমলেও জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে আমানত বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতেও আমানত বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে সম্পদের পরিমাণ।

সামগ্রিকভাবে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে লেনদেন কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংকে লেনদেন করেছিল ৯০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে লেনদেন হয়েছে ৭৮ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে লেনদেন কমেছে ১১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে লেনদেন বেড়েছিল ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগে নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে লেনদেন কমেছিল ৮০ হাজার কোটি টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/838889