১২ মে ২০২৪, রবিবার, ৬:০৪

সারা দেশেই বজ্রপাত কালবৈশাখী ও বৃষ্টি

৫ জেলায় ৭ জন নিহত

সারা দেশেই বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়। একই সাথে বজ্রপাত ও বৃষ্টিতো ছিলই। ব্রজপাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আজ রোববারও সারা দেশেই কম-বেশি একই রকমের বজ্রপাত, কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। কালবৈশাখী ঝড় ও ব্রজপাতের কারণে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৃষ্টি বেশ উপকারী হয়েছে ফসলের জন্য। আবহাওয়া ঠাণ্ডা হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন মানুষ। গত এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে তরমুজের আকার বড় হয়েছে, কিছু কিছু সবজিও বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে এবং যে আমগুলো তাপপ্রবাহে ঝড়ে না গিয়ে গাছে রয়ে গেছে সেগুলোর জন্য বেশ উপকারী হবে বলে আমচাষিরা বলছেন। তা ছাড়া দীর্ঘ অনাবৃষ্টির ফলে শীতের শেষ থেকে প্রকৃতিতে রুক্ষতার সৃষ্টি হয়েছিল। কয়েক দিনের প্রতিদিনের বৃষ্টিতে সেই রুক্ষতা দূর হয়েছে, প্রকৃতি সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠেছে। গাছে গাছে সবুজ পাতার সমারোহ লক্ষ করা যাচ্ছে।

তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাদের কাছে যে পূর্বাভাস রয়েছে তাতে আগামী মঙ্গলবার থেকেই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু যে তাপ বাড়বে তাই নয়, বৃষ্টিও কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে গতকালের মতো এতো বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা। মঙ্গলবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সে দিন কেবল রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে কিন্তু এই তিন বিভাগের সর্বত্র নয়। অন্য দিকে বাকি যে ৫ বিভাগ রয়েছে সে বিভাগের জেলাগুলোতে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। অন্য দিকে আগামী ১৬ মে থেকে বৃষ্টি কমে গিয়ে দেশের সার্বিক তাপমাত্রা উপরে উঠতে থাকবে। আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, পূর্বাভাস অনুসারে সামনের সপ্তাহ থেকে দেশের সার্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ দিকে কানাডা প্রবাসী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, আজ রোববার সকালে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যেতে পারে। গতকাল শনিবার রাতে পদ্মা নদীর পশ্চিম পাশের সব জেলার উপর দিয়ে তীব্র বজ্রপাতসহ মাঝারি থেকে ভারী মানের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার রাত থেকে আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় স্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

গতকাল দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ঢাকা ও টাঙ্গাইলে ৮৭ মিলিমিটার। ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলার মধ্যে গোপালগঞ্জে ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়ে গেল। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের বাকি জেলায় খুব সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের বগুড়ায় ৪৫ মিলিমিটার, সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে ৫৩ম মিলিমিটার, সিলেটে ২১ মিলিমিটার, চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনীতে ৪৬ মিলিমিটার, মাঈজদীকোর্টে ২৪ মিলিমিটার, খুলনা বিভাগের মংলায় ৬১ মিলিমিটার, সাতক্ষীরায় ১৯ মিলিমিটার, খুলনা ও যশোরে ১৫ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলায় সামান্যই বৃষ্টি হয়ে গেছে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুসারে বরিশাল বিভাগের ভোলায় ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও বাকি এলাকাগুলোর মধ্যে পটুয়াখালীতে ১০ মিলিমিটার, খেপুপাড়ায় ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ৩৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজধানীতে ২১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় ৭ জনের প্রাণহানি
৫ জেলায় বজ্রপাতে ৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় দুইজন, বাগেরহাটের শরণখোলায় দুুইজন, কুমিল্লার মুরাদনগরে এক কিশোর, পিরোজপুরে মঠবাড়িয়ায় এক ব্যবসায়ী ও দিনাজপুরের পার্বতীপুরে এক গৃহবধূ রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদায় বজ্রপাতে কৃষক আহাম্মদ ম্লক (৬৫) ও রুবেল (২৮) নামে দুইজন নিহত ও টুনু খাতুন (৩০) নাামে এক গৃহবধূ আহত হয়েছেন। নিহত কৃষক আহাম্মদ মøক উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের মরহুম খেদের মøকের ছেলে এবং রুবেল দর্শনা থানাধীন বেগমপুর ইউনিয়নের ঝাজরি গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে পৃথক তিনটি স্থানে পাটাচোরা মাঠে ও দর্শনা থানার বেগমপুর ঝাজরি ও গোন্দহুদা গ্রামের বসতবাড়িতে বজ্রপাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দামুড়হুদা সদর ইউনের সাবেক মেম্বার পাটাচোরা গ্রামের কুতুব উদ্দীন জানান, শসকাল ৯টার দিকে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা এলাকায়। এ সময় মাঠে কাজ করলেন আহাম্মদ মøক। বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। আহাম্মদ মøক মাঠ থেকে ফেরার জন্য রওনা দিলে মাঠের রাস্তায় সে বজ্রপাতে মানাত্মকভাবে আহত হন। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপর দিকে দর্শনা থানা পুলিশ বজ্রপাতে যুবক রুবেল নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকাল ৯টার দিকে দর্শনা থানাধীন বেগমপুর ইউনিয়নের ঝাজড়ি গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে রুবেল বস্তির পাশে একটি দোকানে বসেছিল এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই যুবক রুবেল নিহত হয়।

শরণখোলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, শরণখোলায় শনিবার সকালে বজ্রপাতে দুইজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে উপজেলার চাল-রায়েন্দা গ্রামের স্লুুইস গেট এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হলেন মিলন শেখ (৩৫) ও মোস্তফা শেখ (৫০)। তাদের বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া গ্রামে। আহতরা হচ্ছেন খোকন কাজী, রাসেল ফরাজী, বাবুল, জলিল ও সোহেল। আহতদের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল, এ সময় একটা ফাঁকা ঘরে বজ্রপাত হলে ঘরের মধ্যে থাকা মিলন শেখ ও মোস্তফা শেখ নিহত হন। বাকি ছয়জন আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। নিহতরা বালিপাড়া থেকে ট্রলারে করে ইট নিয়ে এসেছিল।
মুরাদনগর (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় বাড়ীর পাশের মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে সিয়াম (১৩) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর ত্রিশ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোর উত্তর ত্রিশ গ্রামের মো: হুমায়ুন মিয়ার ছেলে।

জানা যায়, শনিবার সকালে বাড়ির পাশের মাঠে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে যায় সিয়াম। খেলা চলাকালে সাড়ে ৯টার দিকে আচমকা ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে কিশোর সিয়াম গুরুতর আহত হয়। এ সময় সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে কুমিল্লা মেডিক্যালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল বেলা ১টার দিকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াতে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রাঘাতে মো: জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০) নামে এক চা ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর সোনাখালি গ্রামের মৃত নাদের আলীর ছেলে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গত শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ঘরের বারান্দায় চেয়ারে বসে বৃষ্টি উপভোগ করার সময় বজ্রপাতে বিউটি বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামের আবদুস সাত্তারের স্ত্রী। আমবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) সাব ইন্সপেক্টর নুর আলম সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/834336