৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:১৫

তীব্র গরমে অর্ধেক শিক্ষার্থীও স্কুলে যায়নি

‘স্কুলে তো ফ্যান চলে, কিন্তু গরম বাতাস বের হয়। ক্লাস করতে অস্থির লাগে।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওয়াসিফ রহমান। সে বলে, স্কুল বন্ধ থাকলেই ভালো হতো। দীর্ঘদিন ধরেই হিট এলার্ট দিয়ে যাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর রোববার খোলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গতকাল মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ পাঁচ জেলায় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও চালু ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে এসব বিদ্যালয়ে মর্নিং শিফ্‌ট চালু করা হয়েছে।

কিন্তু সকালে ক্লাস চললেও তীব্র তাপে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। সেইসঙ্গে শিশুদের নিয়ে আসা অভিভাবকরাও হচ্ছেন নাজেহাল।
গতকাল সরজমিন রাজধানীর সরকারি পাইকপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গরমের মাঝেই ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। মাথার উপরে ফ্যান চললেও মিলছে না স্বস্তি। স্কুলের শিক্ষিকা সাথী আক্তার বলেন, স্কুলে বাচ্চাদের উপস্থিতি কম।

অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। আমরা বাচ্চাদের জোর দিয়ে কিছু বলতেই পারি না।
স্কুলের বাইরে অপেক্ষায় থাকা আশা খাতুন নামে একজন অভিভাবক বলেন, বাচ্চারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। স্কুল থেকে বাসায় যাওয়ার পরই শুয়ে পড়ছে। স্কুলে ফ্যান আছে আবার বাড়িতেও আছে। কিন্তু স্কুলে যাতায়াতের সময়টাতেই নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাল থেকে কয়েকদিন আর স্কুলে নিয়ে আসবো না। কয়েকটা দিন ক্লাস না করলে কিছুই হবে না। বাচ্চাকে অসুস্থ করানো যাবে না।
পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্রটাও প্রায় একই। সেখানেও উপস্থিতি একেবারেই কম। স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. আল আমিন বলেন, স্কুলের স্বাভাবিক সময়ের থেকে উপস্থিতি কম। আবার গরমের কারণে শিক্ষার্র্থীরাও খুব একটা মনোযোগ দিতে পারছে না। সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টানা ক্লাস। বিরতি না থাকায় মনোযোগটাও কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

পীরের বাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দেখা যায় বাইরে পসরা সাজিয়ে বসেছে শরবত, আখের জুস। দেদারছে বিক্রিও হচ্ছে এসব পানীয়। সামিউল নামে এক শিক্ষার্থী বলে, এই যে রোদ মনে হয় ছাতা ফুটা হয়ে রোদ লাগতেছে। আমার বাড়ি থেকে স্কুল তিন কিলোমিটার। লেগুনায় যাতায়াত করি। ঘামে পুরা শরীর ভিজে গেছে। এই শিক্ষার্থীর মা বলেন, আমরা আগে স্কুলের পাশে থাকতাম। এরপর বাসা পরিবর্তন করেছি। ছেলেকে একা ছাড়তে পারি না। আবার ওর ছোট বোনের বয়স এক বছর। একা বাড়িতে রেখেও আসতে পারি না। এই গরমে এক বছরের মেয়েটাও কষ্ট পাচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ পর্যায়ে গতকাল চালু ছিল ক্লাস। ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আক্তারুজ্জামান বলেন, আমাদের ডে শিফটের ক্লাস। ক্লাসে এসি চললেও আসা যাওয়াতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। সাড়ে ১২টায় আমাদের ক্লাস শুরু হয়। কলেজে আসার সময় সর্বোচ্চ তাপ থাকে। আবার ক্লাস ছুটি হয় চারটায়। যাওয়ার সময়েও তীব্র গরমের মাঝে যেতে হয়েছে। কলেজে আরামে থাকলেও আসা- যাওয়ার সময় দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।

এই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী সাইফ হাসান বলেন, আমি মোহাম্মদপুর থেকে সাইকেলে আসি। আমার মতো অনেকেই সাইকেলে আসে। এই গরমে আমাদের যাতায়াত করাটাই প্রধান সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।

https://mzamin.com/news.php?news=107733