২১ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:২১

যাত্রীকল্যাণ সমিতি

এবার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২৪% বেড়েছে

গত বছরের ঈদুল ফিতরের তুলনায় চলতি বছর ঈদুল ফিতরের যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে ২৪.০৮ শতাংশ। গত বছর ঈদে যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে চলতি বছর ঈদে সড়কে প্রাণ হারিয়েছে, ৪০৭ জন। একই সঙ্গে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৩১.২৫ শতাংশ। এবারের ঈদ যাত্রায় সারা দেশে ৩৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরো অন্তত এক হাজার ৩৯৮ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রকাশিত ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
ঈদের আগে ৪ এপ্রিল থেকে ঈদের পর ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনকে ঈদ যাত্রা হিসেবে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একই সময়ে রেলপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছে। নৌপথে দুটি দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছে। সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৯টি দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত এবং এক হাজার ৪২৪ জন আহত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশের বেশি মানুষ যাতায়াত করেছে।’

প্রতিবেদনে দেখা যায়, দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৯৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৫ জন নিহত, ২৪০ জন আহত হয়েছে; যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৯.৬২ শতাংশ, নিহতের ৪০.৫৪ শতাংশ এবং আহতের ৩০.৩৭ শতাংশ প্রায়।
এসব দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট যানের ১৪.২৮ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান ও লরি; ৬.৫০ শতাংশ কার, মাইক্রোবাস ও জিপ; ৫.৯৬ শতাংশ নছিমন-করিমন, ট্রাক্টর, লেগুনা ও মাহিন্দ্রা, ৬.১৪ শতাংশ অটোরিকশা, ১২.১১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজি বাইক, ভ্যান ও সাইকেল এবং ১৪.৪৬ শতাংশ বাস দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।

সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৬.৩১ শতাংশ মুখোমুখি, ৪৭.১১ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়া, ২২.৫৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ঘটেছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট দুর্ঘটনার ৩২.৫৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১০.০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৫০.৬২ শতাংশ সংযোগ সড়কে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে মোট দুর্ঘটনার ৬.০১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল; জাতীয়, আঞ্চলিক ও সংযোগ সড়কে টার্নিং চিহ্ন না থাকার কারণে নতুন চালকরা এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছেন। এ ছাড়া মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালকের অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সমিতির পক্ষে ১০ দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজি বাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা; ধীরগতির ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা; মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা; মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন এবং দীর্ঘদিন ধরে ফিটনেসহীন যান স্ক্র্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া অন্যতম।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2024/04/21/1380922