২১ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:০৫

কুষ্টিয়ায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না

মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা : কুষ্টিয়া জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা ও গড়াই নদী আজ প্রায় মৃত। প্রয়োজনী পানি নেই নদীতে। ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে প্রমত্তা গড়াই এখন পরিণত হয়েছে ছোট খালে। সেই সাথে নেমে গেছে পানির স্তর। পৌর এলাকাসহ কুষ্টিয়া জেলার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ নলকূপে উঠছে না পানি। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এখানকার মানুষের পাশাপাশি জীব-বৈচিত্র, চাষাবাদ, স্বাভাবিক জীবন যাপন পড়েছে হুমকির মুখে। এদিকে তাপমাত্রা প্রতিদিন বাড়ছে। খুলনা বিভাগে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২.৬ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৩ ডিগ্রি, খুলনা ৪১.২ ডিগ্রি, সাতক্ষীরা ৪০.৭ ডিগ্রি মোংলা ৪১.৭ ডিগ্রি, কুষ্টিয়া ৪১.২ ডিগ্রি এবং ইশ্বরদীতে ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে পানির জন্য চলছে হাহাকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে প্রাকৃতিক এই সমস্যা সমাধানে তাদের কিছুই করার নাই। তবে বৃষ্টি হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে। পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে এলাকার প্রায় সব নলকূপই হয়ে গেছে অকেজো। যেগুলো কাজ করছে সেগুলোতে পানি উঠছে অতি সামান্য। এক বালতি পানি তুলতে আধাঘন্টারও বেশি সময় লাগছে।

কুষ্টিয়া পৌর এলাকা, কুমারখালী ও খোকসা উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী জেলা ও উপজেলাগুলোতেও চলছে পানি সংকট। তবে গড়াই নদীর তীরবর্তী বসবাস কর মানুষের অবস্থা সব চাইতে বেশি খারাপ। পানির সংকট এতটাই প্রকট যে খাবার পানির পাশাপাশি গোসল এবং গবাদি পশুর জন্য পানির ব্যাবস্থা করতে হিমশিম খাওয়া লাগছে। এমন সংকটে এর আগে কখনো পরেন নি তারা।

গড়াই নদীর উপর অবস্থিত সৈয়দ মাছ উদ রুমী সেতু এবং যদুবয়রা গড়াই ব্রিজের নিচে ড্রেজিং করার ফলে কিছুটা পানি প্রবাহ থাকলেও অধিকাংশ পিলার ধুধু বালির উপর রয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন গড়াই নদীর অনেক স্থান দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছে। পানি শূন্য গড়াই নদী শুধুই এখন স্মৃতি। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবেই এই গড়াই নদীর করুণ দশা বলে অনেকেই মন্তব্য করছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ ফিট পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপে উঠছে না পানি। পানি সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা সক্রিয় না থাকায় বিপাকে পরেছে জনজীবন। পৌরসভার পক্ষ থেকে যে সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা করা আছে তার উৎপাদন ও অনেক কম।

পানির স্তর এভাবে কমে যাওয়ার পেছনে যত্রতত্র গভীর নলকূপ ব্যবহারকে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৗশল অধিদপ্তর। তারা বলছেন, শুস্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নামার সাথে সাথে নদীর পানিও শুকিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে যেসব নলকূপের লেয়ার কম দেয়া সে সব নলকূপে পানি না ওঠারই কথা। তারা নতুন নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মাফিক আরো গভিরে লেয়ার দেওয়ার পরামর্শ দেন।
কুমারখালী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান খোকন বলেন, পানির সংকট এতটাই প্রকট যে খাবার পানির ব্যবস্থা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। গোসল এবং গবাদিপশুর জন্য পানি সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুকুমার সাহা বলেন, পানির জন্য নদীর চরে অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন এমন সংকটে আগে কখনো দেখেন নি। যদুবয়রা গ্রামের গৃহিণী মারুফা বেগম বলেন, কল থাকলেও তাতে পানি নেই। অধিকাংশ বাড়িতেই পানির সংকট চলছে। যার কলে পানি উঠছে, সেখানে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আনতে হচ্ছে।

কুমারখালী উপজেলা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মনে করছেন, যত্রতত্র সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন ও ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণেই পানির এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নামার সাথে সাথে নদীর পানিও শুকিয়ে যায়। এ কারণে যেসব নলকূপে গভীরতা কম সেগুলোতে পানি ওঠে না। তাই নতুন নলকূপ আরো গভীর করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এছাড়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

https://www.dailysangram.info/post/554096