১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৫:১৮

ফিরতি পথেও দুর্ভোগ, বাড়তি ভাড়া আদায়

ঈদ শেষে গ্রামের বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। তবে ঈদযাত্রার মতো ফিরতি পথেও নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। পরিবহন সংকটে ঈদের আগে বহু মানুষ পণ্যবাহী যানবাহনে উঠতে বাধ্য হয়েছিলেন। ফেরার সময়ও একই সমস্যায় পড়েছেন তারা। অনেককে ফিরতে হচ্ছে ট্রাক ও পিকআপে। সঙ্গে বাস-লঞ্চে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তো রয়েছেই।

রাজধানীতে ফিরতে প্রবেশপথে পড়তে হচ্ছে যানজটে। গতকাল সোমবার ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে সরেজমিন এই চিত্র দেখা গেছে। রাজধানী এবং উপকণ্ঠের কলকারখানা খুলবে আগামী বুধবার। তাই চলতি সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত শহরমুখী যাত্রীর ঢল চলবে।

গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় হাজারো যাত্রী বাসের অপেক্ষায়। সকালে যেসব বাস ময়মনসিংহ থেকে যাত্রা করেছিল, সেগুলো না ফেরায় পরিবহন সংকট তখন চরমে। এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে কয়েকশ যাত্রীর দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এই সুযোগে সৌখিনসহ অন্যান্য লোকাল বাসে ৪০০ টাকা ভাড়া হাঁকিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছিল। যদিও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৩১০ টাকা। এনা পরিবহন ছাড়া সব বাসেই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ময়মনসিংহ বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে বাইপাস মোড়ে এসে বাস যানজটে আটকা পড়ে। নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুরের বাসগুলো মোড় আটকে যাত্রী তোলায় যানজট লেগে ছিল দিনভর। বাইপাস মোড়ে দেখা যায় জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় পিকআপে ঢাকার যাত্রী তোলা হচ্ছে। একই চিত্র দেখা যায় ত্রিশালে। সড়কে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলায় গাজীপুরের মাওনা ও চান্দনা চৌরাস্তায় আধাঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়।

ফ্লাইওভার চালুর পর ঢাকার প্রবেশমুখ আবদুল্লাহপুরে এবার যানজট কম। কিন্তু গাবতলী এবং সায়েদাবাদের যাত্রীদের গতকাল যানজটে পড়তে হয়। গত দু’দিনে ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা জানান– চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে এসে কাঁচপুর, সায়েদাবাদে যানজটে পড়তে হচ্ছে। পদ্মা সেতু হয়ে আসা যাত্রীরা শ্যামপুরে যানজটে পড়ছেন। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠা গাড়ি আটকে যাচ্ছে সায়েদাবাদে। ফলে তীব্র গরমে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঝিনাইদহ থেকে গতকাল ঢাকায় আসা তাবিবুর রহমান জানান, তিনি পূর্বাশা পরিবহনের এসি বাসে ফিরেছেন। অন্য সময় সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা ভাড়ায় আসেন। এবার নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
রংপুর

বাসের টিকিট সংকটে ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বগুড়া-ঢাকা রুটে সরকার নির্ধারতি ভাড়া ৮৭০ টাকা হলেও ফিরতি যাত্রায় দেড় হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসি বাসের ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকার জায়গায় ২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।

রংপুর নগরীর কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় যাত্রীর দীর্ঘ সারি। অফিস খুলে যাওয়ায় দুর্ভোগ সয়েই তারা ফিরছেন। বাসের অপেক্ষায় থাকা বেসরকারি চাকরিজীবী আলী হোসেন বলেন, ঈদে বাড়িতে এসে বিপাকে পড়েছি। চাকরি বাঁচাতে দ্বিগুণ দামে টিকিট কিনেছি। বিকেল ৪টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল। পরে কাউন্টার থেকে জানায়, রাত ৮টায় ছাড়বে বাস। এসআর পরিবহনের ম্যানেজার মো. মিঠু জানান, নির্দিষ্ট সময়ে বাস ঢাকা থেকে ফিরছে না। তাই রংপুর থেকে ছাড়তে দেরি হচ্ছে।

ঢাকাগামী এসআর ট্রাভেলস, শাহ আলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, আগমনী এক্সপ্রেস, নাবিল পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনসহ কোনো গাড়ির কাউন্টারে টিকিট মিলছে না বলে জানান যাত্রীরা। এসআর ট্রাভেলসের সুপারভাইজার স্বাধীন জানান, প্রতি ঈদে এমনিতে যাত্রী পরিবহনে হিমশিম খেতে হয়। টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ আসা যাত্রীরা বিপাকে পড়ছেন।

খুলনা
গতকাল দুপুরে হানিফ, সোহাগ, এনা, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, ফাল্গুনী ও গ্রিন লাইনসহ কয়েকটি পরিবহন কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে অনেকেই বাড়তি ভাড়ায় লোকাল বাস ধরেন। এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপক সাহাবুদ্দিন বাবু জানান, ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকাগামী সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে আগেই।

অন্য পরিবহনেও ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাসের টিকিট নেই। নন-এসি বাসের শেষের সারির দু-একটি করে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। হানিফ পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. হাসান জানান, ঢাকা থেকেই ৫০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বিক্রয় কর্মী রাহাত জানান, শুধু নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০ টাকা বেড়েছে। এসি, বিজনেস ক্লাস টিকিটের দাম বাড়ানো হয়নি।

বগুড়া
পরিবহন সংকট ও বাড়তি ভাড়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ ট্রাকে ও পিকআপে চড়ে ঢাকায় ফিরছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকায় ফিরতে নন-এসি বাসে ৫৫০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে হাজার টাকা। এসি বাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভাড়া ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল এলাকার মোতালেব হোসেন-সাগরিকা দম্পতি জানান, বাসে জনপ্রতি হাজার টাকা চাওয়ায় শিশু সন্তানকে নিয়ে পিকআপে তিনজন ৮০০ টাকায় যাচ্ছেন।

শহরের নামাজগড় এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন জানান, শ্যামলী পরিবহনের ৫৫০ টাকার নন-এসি বাসের টিকিট কিনেছেন ৮০০ টাকায়। উপশহর এলাকার সমিক হাসান জানান, এসআর ট্রাভেলসের ১ হাজার ২০০ টাকার এসি বাসের টিকিট কিনেছেন ১ হাজার ৭০০ টাকায়। ১৭ এপ্রিল তাঁর যাত্রার তারিখ।

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করেন বাস সংশ্লিষ্টরা। এসআর ট্রাভেলসের ম্যানেজার পলাশ হাসান বলেন, ঈদে একটু ভাড়া বেশি নেওয়া হয় শ্রমিকদের উৎসব ভাতা দিতে। হাসান এক্সপ্রেস বাসের সহকারী রুবেল হাসান বলেন, ঈদে বাস সংকট রয়েছে। যানজটের কারণে গাড়ির পরিচালনা খরচও বেশি। সেটা পোষাতেই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

শহরের ছিলিমপুর এলাকার সুমন শেখ বলেন, ১৭ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি। লোকাল বাসে এক-দেড় হাজার টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। তাই ৪০০ টাকায় ট্রাকে যাচ্ছি।

ট্রাকচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বড় ট্রাকে ৪০ থেকে ৪৫ জন যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। পিকআপে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ জন। গাবতলীতে নামিয়ে দেওয়া হবে।

শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আবুল ফয়সাল বলেন, ট্রাকে ও পিকআপে যাত্রী ওঠালে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল চারটি ট্রাক ও পিকআপের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

 

https://samakal.com/capital/article/232547