১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৫:১৭

গরমে হাঁপাচ্ছে মানুষ

সূর্যের কড়া গনগনে রোদের তেজ! টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথারিয়া দেশজুড়ে তীব্র খরতাপের দহনে চৈত্রের শেষ কয়েকদিন থেকে শুরু করে বৈশাখ মাসের শুরুটা দিয়েই ‘গ্রীষ্মকালে’র আগমন জানান দিয়েছে প্রকটভাবে। উচ্চ তাপদাহে সর্বত্র দিনে ও রাতে জনজীবনে হাঁসফাঁস। প্রচণ্ড গরমে-ঘামে হাঁপাচ্ছে মানুষ। দিনরাতে অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে পানি বের হয়ে শরীর দ্রুত পানিশূন্যতায় কাহিল এবং বিভিন্ন রোগব্যাধিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকেই। তাপদাহে ত্রাহিদশা প্রাণিকুলেরও। চারদিকে পুড়ছে ফল-ফসল প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ। গতকাল সোমবার তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। দেশের এই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দক্ষিণের পটুয়াখালী উপজেলার খেপুপাড়ায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের এ যাবত সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে গেল তিন দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙ্গামাটিতে ৪০ ডিগ্রি সে.।

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাসহ পূর্ববর্তী এক সপ্তাহে দেশের কোথাও ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টি হয়নি। অনাবৃষ্টিতে দিনভর রোদের অসহ্য তেজে রাস্তাঘাট সড়ক মাঠে-ঘাটে বাতাসে যেন মরুর আগুনের হল্কা। সড়ক রাস্তাঘাটে গরমে পিচ গলছে। শীতল পরশ পেতে অনেকে রাস্তাঘাটে দূষিত পানি, রঙ ও বরফ মেশানো পানি পান করছে। এর ফলে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

গতকাল সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার সর্বশেষ আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে আগামী দুই দিনে দিন-রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী সপ্তাহে তাপপ্রবাহ আরো তীব্রতর হতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া বিভাগের জারি করা তাপপ্রবাহের সতর্কতা বা হিট এলার্ট অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের (বিএমডি) হিট এলার্টে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগসমূহের উপর দিয়ে মৃদু (তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সে.) তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। হিট এলার্ট বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক আরো জানান, গত শনিবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে।

গতকাল খেপুপাড়ায় ৪০.২ ডিগ্রি সে. সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়াও দেশের অন্যত্র উল্লেখযোগ্য দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলÑ রাঙ্গামাটিতে ৩৯.৬, পাবনায় ৩৯.৫, রাজশাহী, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও বান্দরবানে ৩৯.৪, কুষ্টিয়া, মোংলা ও পটুয়াখালীতে ৩৯, ফরিদপুরে ৩৮.৭, খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৩৮.৬, গোপালগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে ৩৮ ডিগ্রি সে.।

রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.৮ এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সে.। চট্টগ্রাম যথাক্রমে ৩৬.৮ এবং ২৬.২ ডিগ্রি সে.। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২.৮ ডিগ্রি সে. বেশি।

সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে. ছাড়িয়ে গেছে। ৩৬ ডিগ্রি সে. বা ততোধিক দিনের তাপমাত্রা উঠে গেলে তা তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত। এর প্রেক্ষিতে সমগ্র দেশে এখন বইছে বৈশাখের মাঝারি-তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ। দিনের তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাতের ‘সর্বনিম্ন’ তাপমাত্রাও স্থানভেদে এখন ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রির ঘরে উঠে গেছে। এর ফলে গরমের তীব্রতা অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

প্রচণ্ড গরম ও অনাবৃষ্টিতে দেশের প্রায় সর্বত্র দিনে-রাতে স্বস্তি নেই কোথাও। বৃষ্টির আশায় মানুষ চাতক পাখির মতো আকাশপানে চেয়ে আছে। কিন্তু স্বস্তি প্রশান্তির বৃষ্টির দেখা নেই। সারা দেশে উচ্চ তাপদাহের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট এবং বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি সীমাহীন। শহর-বন্দর-নগর-শিল্পাঞ্চল সবখানে বিদ্যুতের একই নাজুকদশা। এই আসে এই যায়। ঈদে নাড়ির টানে শহর-নগর ছেড়ে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে যাওয়া মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ অসহ্য। টানা অনাবৃষ্টি, খরতাপে পুড়ছে শহর-বন্দর-নগর, গ্রাম-গঞ্জ-জনপদ। রোদের আগুনে পুড়ে খাক হচ্ছে ফলমূল, ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত, মাঠ-ঘাট-প্রান্তর।

সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্তসহ আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগে বিরাজমান তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে। তবে দেশের অন্যত্র বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। দেশে বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এর পরের ৫ দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।

আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে পাবনা, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ ও ফরিদপুর অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহের জন্য কোনো সঙ্কেত নেই।

https://dailyinqilab.com/national/article/651343