৯ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৪:৫৯

টিনেই শেষ ঈদ আনন্দ

কে জানতো হঠাৎ নেমে আসবে এমন দুর্যোগ। আকাশ থেকে পড়া ভারী শিলায় ঈদের আনন্দ নেই সিলেটের কয়েক হাজার পরিবারে। ঈদের জন্য জমানো টাকা দিয়েই কেনা হয়েছে চালের টিন। এতে করে এসব পরিবারের ঈদের আনন্দ টিনেই শেষ হয়ে গেছে। পরিবারে থাকা শিশুদের জন্য ঈদের জামা- কাপড় কিনতে পারছেন না অনেকেই। গত ৩১শে মার্চ সিলেটের আকাশ থেকে পতিত হওয়া শিলাবৃষ্টির কারণে এই দশা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। সিলেট ও সুনামগঞ্জে কয়েক হাজার পরিবারের মধ্যে। এক সপ্তাহ আগের ঝড়ো শিলাবৃষ্টির পর সিলেটে আরও কয়েক দফা কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা আরও বেশি দুর্ভোগে পড়েন। তারা জানিয়েছেন, শিলাবৃষ্টিতে ঘরের চালা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর আরও কয়েক দফা শিলাবৃষ্টির কারণে ভোগান্তি চরমে পৌঁছে।
এ ছাড়া সিলেটের ব্যবসায়ীরা টিনের দাম দ্বিগুণ করে ফেলেন। তবে এ খবর প্রশাসনের কাছে পৌঁছামাত্র তাৎক্ষণিক অভিযান শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। এরপরও বাড়তি দামে এখনো টিন বিক্রি হচ্ছে। গোলাপগঞ্জের দিঘীরপাড় এলাকার বাসিন্দা মশাই আলী। শিলাবৃষ্টিতে তার টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরে ঢুকে পানি। ঝড়ের প্রথম ঝাপটায় চালের উপরে থাকা কয়েকটি টিন উড়ে যায়। সেগুলো ভেঙে গেছে। পরদিন সকালে উড়ে যাওয়া টিনগুলো খুঁজে পেলেও সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। এরপর আপাতত বৃষ্টির পানি সামাল দিতে ওই চালগুলো এনে রাখেন মাথার উপর। প্রতিদিন ঝড়ে টিনগুলো উড়ে যায়। আবার এনে রাখেন। গতকাল বিকালে মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় মশাই আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের। তারা জানিয়েছেন, টিন কেনার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। প্রথম ঝড়ের দিন তাদের ঘরের টিনের চাল ফুটো হয়ে যায়। ঘুমের মধ্যে শিলাবৃষ্টি তাদের উপর পড়ে। কোনো মতো ঘরের থালা, বাসন মাথায় দিয়ে শিলাবৃষ্টি সামাল দেন। এরপর আরও তিন দিন শিলাবৃষ্টি হয়েছে। আকাশে মেঘ দেখলে তাদের আতঙ্ক বাড়ে। মশাই মিয়া জানিয়েছেন, তাদের ঈদ এবার শিলাবৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। কবে নাগাদ টিন পাবেন, ঘর ঠিক করবেন- এ অপেক্ষায় আছেন তিনি। শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রণকেলী গ্রামের ফলিক উদ্দিনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানিয়েছেন-ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তারা টিনের পরিবর্তে পলিথিন দিয়ে রেখেছেন। এখন বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকেন। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে ঘর ভিজে যায় বলে জানান তিনি। এদিকে- ঝড়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, সদর উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির কারণে ঈদ আনন্দ নেই বহু পরিবারে। গোলাপগঞ্জের পৌর মেয়র রাবেল আহমদ জানিয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পৌরসভার পক্ষ থেকে ৩০০ পরিবারকে ৩ হাজার টাকা করে ও ১৬০ পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে সাধ্যমতো ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফী এলিম ইতিমধ্যে তার তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ঢেউটিন বিতরণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন- শিলাবৃষ্টিতে বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের সহযোগিতার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। নগরীর সুবহানীঘাটের আল ছালিম ম্যানশনে টিন কিনতে আসা লোকজন জানিয়েছেন- শিলাবৃষ্টির পর প্রথম কয়েক দিন তারা দামের কারণে টিন কিনতে পারেননি। এখন দাম স্থিতিশীল হওয়ার কারণে টিন কিনছেন। নগরের কালিঘাট, সুবহানীঘাটে টিন কিনতে আসা লোকজন অভিযোগ করেছেন- আগে ছিল ৬ হাজার টাকা, তা এখন ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮ হাজার টাকার টিনের বান ১২ হাজার টাকা হয়ে গেছে। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে বেশি দামে টিন বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিন বিক্রেতারা। লালদিঘির পাড়ের টিনের দোকান কাজী অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী কাজী আব্দুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, হঠাৎ করে ব্যাপক হারে টিনের চাহিদা বেড়ে গেছে। সিলেটের কোনো দোকানই চাহিদা অনুযায়ী টিন সরবরাহ দিতে পারছে না। আচমকা চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখন বাড়তি বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দিতে হয়েছে। এতে করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হারে দাম বেড়েছে। অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- বজ্রসহ ঝড়ে প্রায় সাত হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন- বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ উপজেলায় ৩০ বান্ডিল করে ঢেউটিন, নগদ এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা ও চাল দেয়া হয়েছে। এদিকে- গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে দুর্যোগ এলাকা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, সরকারি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়াও তিনি এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সমাজের বিত্তবান ও প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

https://mzamin.com/news.php?news=105300