৯ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৪:৫৪

মেয়াদি ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার মেয়াদ কমল

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুটি ধাপে এটি বাস্তবায়িত হবে। বর্তমানে কোনো মেয়াদি ঋণের কিস্তি বা এর অংশবিশেষ পরিশোধের নির্ধারিত তারিখের পর থেকে ছয় মাস পর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এসব ঋণের কিস্তি বা কিস্তির অংশবিশেষ পরিশোধের নির্ধারিত দিন থেকে পরবর্তী ৩ মাস পর মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। এক্ষেত্রে সময় কমানো হয়েছে ৩ মাস। আগামী বছরের ৩১ মার্চ থেকে তা পরিশোধের নির্ধারিত দিনের পরদিন থেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। এক্ষেত্রে কোনো সময় দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন শিথিল করে। প্রতি ধাপে ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সময় বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ খেলাপি হওয়ার সময়ও তিন মাস থেকে ছয় মাস বাড়ানো হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ঋণ বা এর কিস্তি পরিশোধের নির্ধারিত দিনের পরদিন থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। একই সঙ্গে এর ৩ থেকে ৬ মাস পর খেলাপি হয়। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা শিথিল করে বিশেষ করে মেয়াদি ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত দিনের পর থেকে ৬ মাস পর মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিধান করা হয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ তিন থেকে নয় মাস পর খেলাপি হওয়ার বিধান করা হয়। আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সময় এ বিষয়ে আপত্তি তোলে। তারা খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের করার শর্ত আরোপ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্তও নেয়। এর আলোকে এ দফায় শুধু মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে। কিন্তু খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা এখনো আন্তর্জাতিক মানের করা হয়নি। আগের শিথিল সংজ্ঞাই এখনো বলবৎ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদি ঋণের কোনো কিস্তি বা কিস্তির অংশবিশেষ নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে ওই অপরিশোধিত কিস্তি বা কিস্তির অংশবিশেষ যে তারিখে পরিশোধের জন্য নির্ধারিত থাকে, সেই তারিখ থেকে পরবর্তী ৬ মাস পর মেয়াদোত্তীর্ণ বা ওভার ডিউ হিসাবে গণ্য করা হতো।

নতুন বিধান অনুযায়ী, মেয়াদি ঋণ বা বিনিয়োগের কোনো কিস্তি বা কিস্তির অংশবিশেষ নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে ওই অপরিশোধিত কিস্তি বা কিস্তির অংশবিশেষ যে তারিখে পরিশোধের জন্য নির্ধারিত থাকবে, সেই তারিখ থেকে পরবর্তী ৩ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাবে গণ্য হবে। এ নির্দেশনা ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। দ্বিতীয় ধাপে আগামী বছরের ৩১ মার্চ থেকে বা এর পরবর্তী সময়ে মেয়াদি ঋণ বা বিনিয়োগের কোনো কিস্তি বা কিস্তির অংশবিশেষ নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে যে তারিখে পরিশোধের জন্য নির্ধারিত ছিল, সেই তারিখের পরের দিন থেকে তা মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কোনো সময় দেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, এ দফায় শুধু মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্য ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়নি। এগুলো পর্যায়ক্রমে করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞাও আন্তর্জাতিক মানের করা হবে।
এদিকে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের করলে এর পরিমাণ বেড়ে যাবে। যে কারণে এটি পরিবর্তন করতে সময় নেওয়া হচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/793829