৫ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৯:৩২

এবসলিউট পাওয়ার কারাপটস এবসলিউটলি

-প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম

একদিকে মোদী সর্বাস্বতা অপরদিকে সকল বিরোধীদলের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইন্ডিয়া’ জোট ভারতের জাতীয় নির্বাচনের নির্ধারক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ধর্মকে রাজনৈতিক বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিরোধী জোট কর্মের ভিত্তিতে নির্বাচনকে বিবেচনা করছেন। সেখানে গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এতদিন ধরে অন্তত ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থাটি টিকেছিল। মানুষ ভোট দিতে পারতো। প্রাশ্চাত্যের কথিত ‘ওয়ানডে ডেমোক্রেসি’ সেখানে ছিলো। ভোটে শক্তি প্রয়োগ, জালিয়াতি ও কারচুপির মতো বিষয়াদি ঘটলেও ভোট দেওয়ার অধিকারটুকু অবশিষ্ট ছিলো। এখন সমাগত নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা-রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল তা নিয়ে সন্দিহান। বিশ্বের কথিত বৃহত্তম গণতন্ত্র তথা নির্বাচন ব্যবস্থায় ‘বাংলাদেশ সিন্ড্রম’ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ভারতের সংবিধানের ৮৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছরে একবার লোকসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। ৫৪৩ জন নির্বাচিত সাংসদই প্রথম-সরাসরি ভোটিং ব্যবহার করে একক সদস্যের নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হবে। সংবিধানের ১০৪তম সংশোধনী অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত দুটি আসন বাতিল করে দেয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য ভারতের ভোটার সংখ্যা ৯৬ কোটি ৮০ লাখ। এই সংখ্যা ২০১৯ সালের নির্বাচন থেকে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ বেশি। ভারতের নির্বাচন কমিশন ১৬ মার্চ ২০২৪-এ ১৮ তম লোকসভার নির্বাচনের সময়সূচী ঘোষণা করে। এর সাথে তারা একটি আদর্শ আচরণবিধি ঘোষণা করে। বর্তমান লোকসভার মেয়াদ ১৬ জুন ২০২৪ তারিখে শেষ হওয়ার কথা।

বহুধাবিভক্ত ভারতের রাজনীতি ২০২৪ সালে দ্বিপাক্ষিক জোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়ে উঠছে। এই দুটি জোট হচ্ছে, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স-এনডিএ এবং বিরোধী ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স-ইন্ডিয়া। ২০২৪ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে ছয়টি জাতীয় দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে: ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি , ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-আইএনসি,ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-সিপিআইএম , বহুজন সমাজ পার্টি-বিএসপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি এবং আম আদমি পার্টি-এএপি। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স-এনডিএ হচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতৃত্বে গঠিত জোট। ধর্মভিত্তিক তথা হিন্দুত্ববাদী দক্ষিণপন্থী দলগুলো এখানে সম্মিলিত। অপর জোটটি হচ্ছে-ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স-ইন্ডিয়া । এজোটের নেতৃত্বে রয়েছে ভারতের সনচেয়ে পুরাতন রাজনৈতিক দল-কংগ্রেস। আরও রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম ধারার রাজনৈতিক দলসমূহ। ভারতের রাজনীতিতে এই ইন্ডিয়া জোটের আবির্ভাব সাম্প্রতিক। গত কয়েক বছরে অনেক আলাপ-আলোচনা ও জটিলতা-কূটিলতা অতিক্রম করে এই জোট গঠন করা হয়। এতে রয়েছে ২৪ টি রাজনৈতিক দল। তাদের ঘোষণায় বলা হয়েছে, স্বৈরাচারকে পরাজিত করে হৃত গণতন্ত্র উদ্ধারই তাদের লক্ষ্য।

২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি জোট ক্ষমতাসীন রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন জোটের মতোই তারা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন। আওয়ামী লীগের মতোই তারা প্রাথমিক সময়গুলোতে সতর্কতার সাথে সময় অতিক্রম করে। কিন্তু যতই সময় অতিক্রান্ত হতে থাকে, ততই নরেন্দ্র মোদী ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেন। কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে যেসব কৌশল ও কারসাজি ব্যবহার করে এখানে ক্ষমতাসীনরা তাদের শাসন-ত্রাসন দীর্ঘায়িত করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার, অবশেষে সেই একই পথে হেঁটে চলেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে বৃহৎ গণতন্ত্র থেকে যেখানে বাংলাদেশের শিক্ষা গ্রহণ করার কথা সেখানে উল্টো বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের রণকৌশল এবং কারসাজি থেকে তারা শিখেছেন। মোদী সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপগুলো এর প্রমাণ দেয়।
১. নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ: বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন গঠন করে ক্ষমতাসীন সরকার। অনেক দূর থেকে কৌশল আর কারসাজি করে নিজেদের লোকদের তারা নির্বাচিত করে। সেখানে আইনের লেবাসও থাকে। এই প্রথমবারের মতো ভারতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আদলে দু’জন নির্বাচন কমিশনারকে নির্বাচনের আগে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের দ্বায়িত্বে ছিলেন চারজন। প্রথমত ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী, দ্বিতীয়ত প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। তৃতীয়ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। চতুর্থত লোকসভার একজন প্রবীণ সদস্য। বিগত ৭৭ বছর ধরে এই নীতিই চলে আসছিলো। এবারে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তাদের অনুগত না হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভার প্রবীণতম সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে দু’জন বিচারপতি নিয়োগ করেন। বিরোধীদলীয় নেতা অধীর চৌধুরীর আপত্তিকে আগ্রাহ্য করে নিজেদের দু’জনকে নিয়োগ দেয় মোদী সরকার। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এই নিয়োগ বিরোধী জোটে তোলপাড় তোলে। গত সপ্তাহে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই নিয়োগকে ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ এর সাথে তুলনা করেন। রাহুল বলেন, ক্রিকেটে ম্যাচের ফল নিজেদের পছন্দসই করার জন্য আম্পায়ারকে চাপ দেওয়া হয়। একে ম্যাচ ফিক্সিং বলে। এবারের নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটছে। নরেন্দ্র মোদী ম্যাচ ফিক্স করার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে তিনি দু’জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দিয়েছেন। আবার বড় দু’জন খেলোয়াড়কে বন্দী করেছেন। অতিসম্প্রতি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ও ঝাড়খান্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাহুল গান্ধী এদুজনের কথাই বুঝিয়েছেন।

২. রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দের গ্রেফতার: এর আগের দুটো নির্বাচনে রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ থাকলেও শীর্ষ নেতৃত্বের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এবার বিরোধী দু’জন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ও ঝারখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন। উভয়ের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুগত তদন্ত সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট-ইডি এ মামলা দায়ের করে। এর আগেও কেজরিওয়ালের উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া এবং তার দলের রাজ্যসভা সদস্য সঞ্জয় সিংকে গ্রেফতার করা হয়। কেজরিওয়ালের গ্রফতারের পর আরেক প্রভাবশালী নেতা কৈলাশ গেহলটকে গ্রেফতারের পাঁয়তারা চলছে।

৩. নির্বাচনী বন্ড: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচন হতে পারে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থসহায়তা ঢালাও করার জন্য মোদী সরকার ২০১৮ সালের অর্থবিলের মাধ্যমে নির্বাচনী বন্ড চালু করে। এর ফলে কোন ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে চাইলে বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দিতে পারবে। ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লাখ, ১০ লাখ এবং ১ কোটি টাকা মূল্যের বন্ড কিনে দেওয়া যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্দিষ্ট একাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু কে কত টাকা দিচ্ছেন, তা বুঝা যাবে না। এই বন্ডের ফলে বিদেশীরাও টাকা দিতে পারেন রাজনৈতিক দলগুলোকে। উলেখ্য যে, এর বিনিময়ে ব্যক্তি বা সংস্থা শতভাগ কর ছাড় পেত। অতিসম্প্রতি এই বন্ড ব্যবস্থা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ইতিমধ্যেই ক্ষমতাসীন দল এর মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০১৮ সাল থেকে ভারতীয় কোম্পানিগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে ২শ’ কোটি ডলার চাঁদা দিয়েছে। আর এই অর্থের অর্ধেকই গেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির থলিতে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার সরাসরি বন্ডের মাধ্যমে টাকা না নিলেও বড় বড় ব্যবসায়ী এবং গ্রুপগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিনিময়ে তাদের ব্যাংক লুটের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মেগা প্রোজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতির ঘটোনা ঘটেছে। শতভাগ বিদ্যুতের নামে শতভাগ সরকারি টাকা বেহাত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

৪. নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন: আগেই বলা হয়েছে সমাগত নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতার জিকির তুলে পার পেতে চায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। তারা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একটি আইন পাস করে। শুরু থেকেই এ আইনটি ‘অনুপ্রবেশকারী মুসলমান বিতাড়ন’ প্রক্রিয়া বলে অভিহিত হয়ে আসছে। এ আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। বিরোধিতাকারীদের অভিযোগ, আইনটি ভারতের সংবিধানের পরিপন্থী। কেননা এ আইনে ধর্মীয় কারণে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে। স্পষ্টত আইনটি মুসলিম বিতাড়নের হীন উদ্দেশ্যেই প্রণয়ন করা হয়েছে। বিতর্কিত এ আইন ভারতে তো বটেই, বিদেশেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সিএএ’র ঠিক আগে ভারতের আসাম রাজ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, অবৈধভাবে ভারতে ঢোকা বিদেশিদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো। কিন্তু প্রতিবেদন পেশের পর দেখা যায়, রাজ্যে মুসলমানের চেয়ে হিন্দু অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বেশি। তখন আসামে এনআরসির রূপায়ণ বাতিল হয়ে যায়। দৃশ্যত আগামী জাতীয় নির্বাচনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুবিদ্বেষকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেওয়ার প্রয়াস এটি। সেই উদ্দেশ্যেই লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে-ভাগে আইনটি সারা দেশে চালু করা হয় । বাংলাদেশে ধর্মীয়, নৃগোষ্ঠী বা ভাষাভিত্তিক কোন বিভাজন না থাকলেও স্বাধীনতার চেতনার নামে আওয়ামী লীগ কৃত্রিম বিভাজন তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর মতো আইন না করলেও প্রায়শই তারা তালিকার কথা বলে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হলেও স্বাধীনতা বিরোধীদের দুঃস্বপ্ন দেখে।

৫. রাম জন্মভূমি: মাত্র দু’একমাস আগে নতুন করে পুরনো ঘা তেতিয়ে তোলা হয়েছে। অযোধ্যার বাবরী মসজিদ ধ্বংস করে সেখানে মন্দির নির্মিত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মন্দির উদ্বোধন করেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে এই মন্দির নির্মাণে। মন্দিরের উদ্বোধন প্রাক্কালে সারা ভারতে উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে লাখ লাখ মানুষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনও ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কী পরিবির্তন হয়েছে তা দেখাতে। তারা ফিরে এসে সমাজকে বলবেন, অযোধ্যায় দ্রুত পরিবির্তন হয়েছে। সেই পরিবর্তন আনতে হবে ভারতের সর্বত্র। এরকম দীক্ষা দিচ্ছে ক্ষমতাসীনদের ধর্মীয় শাখা রাষ্ট্রীয় সেবক সঙ্ঘ আরএস এস। বাংলাদেশে স্পষ্টত ভারতীয় শাসক দলের মুসলিম বিদ্বেষ নীতিকে গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ আলেম ওলামাদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালায়। সুপরিকল্পিতভাবে বি-ইসলামীকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।

এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সমাগত নির্বাচনে ভারতের জনগণের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তা হলো, ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে কি না। আশার কথা এই যে নির্বাচনে খুব কাছাকাছি এসে গণঐক্যের মাধ্যমে শক্ত ভিত্তি অর্জনের চেষ্টা করছে ইন্ডিয়া জোট। মোদীকে স্বৈরতন্ত্র আখ্যা দিয়ে তাকে ভোটে হারানোর ডাক দিয়েছেন বিরোধী জোট নেতারা। গত ৩১ মার্চ দিল্লির রাম লীলা ময়দানে আয়োজিত বিশাল জনসভায় বিরোধী নেতারা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হাতিয়ার করে দেশকে বিরোধীদল শূন্য করার খেলায় মেতেছে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি। একজোট হয়ে মোকাবেলা করাই এখন সময়ের দাবি। বিরোধী দলগুলোর এই সমাবেশ থেকে ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ক. নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। খ. বিরোধীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আয়কর, সিবিআই ও ইডির পদক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। গ. অবিলম্বে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও হেমন্ত সরেনকে মুক্তি দিতে হবে। ঘ. বিরোধী দলগুলোকে আর্থিকভাবে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। ঙ. নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে লুটপাট তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি গঠন করতে হবে।

এসব দাবি বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলোর উত্থিত নির্বাচন পূর্ব দাবিসমূহের অনুরূপ। ক্ষমতাসীন আওয়ামি লীগ যেমন নির্বাচনকালীন সময়ে নিপীড়ন ও নির্যাতনের নীতি গ্রহণ করে, তারাও তাই করছে। বিরোধীদের নানা অজুহাতে গ্রেফতার ও বিচার করেছে তাদের প্রক্রিয়াও সেরকম । বিরোধী দল যাতে কোন আর্থিক সাহায্য সহায়তা না পায়, সেজন্য ক্ষমতাসীন সরকার খড়গ হস্ত থেকেছে। মোদী সরকারের সাথে এতেও মিল আছে। রাজনীতিকদের বন্দী করার প্রশ্নেও বাংলাদেশের অবস্থার সাথে অপূর্ব মিল রয়েছে তাদের। তবে, মোদী এখনও নেতিবাচক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ নেতৃত্বকে হারিয়ে যেতে পারেননি। ২০১৪ থেকে ২০২৪ এই দশকে ক্রমে ক্রমে দিল্লির বিজেপি সরকার এই সরকারের মতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন হলে নরেন্দ্র মোদী ও তার বিজেপি আরও কর্তৃত্ববাদী প্রকারন্তরে সর্বাত্মকবাদী হয়ে উঠবে। কারণ, ‘এবসলিউট পাওয়ার কারাপটস এবসলিউটলি’। সার্বিক ক্ষমতা কাউকে সার্বিকভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে। ক্ষমতার অপব্যবহারে সে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

https://www.dailysangram.info/post/553174