৩১ মার্চ ২০২৪, রবিবার, ১:৫৪

ঈদকে ঘিরে বেপরোয়া অপরাধীরা, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে সক্রিয় মৌসুমি অপরাধীরা। বাণিজ্যিক কিংবা শপিংমল এলাকায় এসব অপরাধী থাকে ওত পেতে। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, সালাম পার্টি, বমি পার্টিসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত এসব চক্র। সুযোগ পেলেই তারা ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব। এছাড়াও ঘটছে চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতির ঘটনা। রয়েছে জাল নোট ছড়ানোর তৎপরতা। ব্যস্ত সময়ে কেনাকাটার ভিড়ে কাজ সারে জাল নোটের কারবারিরা। তাছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটায় রয়েছে প্রতারণা। রাস্তাঘাট, যানবাহন, বিপণিবিতানে বিভিন্ন প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় হয়ে উঠছে এসব অপরাধী।

ডিএমপি বলছে, রাজধানীতে সব এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে মাঠে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। বড় বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র, শপিংমলে নেয়া হয়েছে তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নানাবিধ অপরাধ ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে মনিটরিং টিম। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। আরিফ ব্যাপারী। ফটোকপির দোকানের কর্মচারী। নিজের আয়ের অর্থে কেনেন জাল টাকা তৈরির মেশিন।

এরপর রাজমিস্ত্রি অনিক ও পদ্মা নদীর জেলে জাহিদকে নিয়ে শুরু করেন জাল টাকা তৈরি। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় জাল টাকা তৈরি করতে সক্ষমও হন। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে শুরু করেন এসব টাকা বিক্রি। এভাবে এক বছরে অনলাইনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা বিক্রি করেন তারা। জালনোট তৈরি চক্রটির হোতা মো. আরিফ ব্যাপারী (২০) ও তার অন্যতম প্রধান সহযোগী মো. জাহিদ (২৩) এবং অনিক (১৯)। বুধবার রাতে শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার দুর্গম চরমোহনসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় ২০ লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল নোট ও টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব বলছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। তারা পাঁচ লাখ টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সম্প্রতি প্রায় ১৩ লাখ জাল টাকার অর্ডার সরবরাহের সূত্র ধরে এই চক্রটিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে ২৫শে মার্চ সকালে সাবেক সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি চক্র ঈদকে টার্গেট করে অপহরণের মিশনে নামে। মাওয়া থেকে ডিবি পরিচয়ে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ নিয়ে নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় ফেলে দেন তারা। এরপর পুরান ঢাকা হয়ে মুন্সীগঞ্জে ফেরার পথে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, চাপাতি, দা, ডিবি পুলিশ লেখা স্টিকার, সাংবাদিকের পরিচয়পত্র, দড়ি, গামছা, মোবাইল সেট, সুইচ গিয়ার, খেলনা পিস্তল এবং হ্যান্ডকাফ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, মিজান ও তার সহকারীরা মূলত ঈদকে টার্গেট করে অপহরণের মিশনে নামেন।
অপহরণ করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় তারা। তারা এখন পর্যন্ত কতজনকে অপহরণ করেছে সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। একই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা হতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ ডাকাত দলের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১০)। র‍্যাব জানায়, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সক্রিয় সদস্য। বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চুরি ও ডাকাতি করে আসছিল। ৬ই মার্চ সকালে মতিঝিল এলাকায় শাহাদাত হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে ডিবি পরিচয়ে আটকায় ডাকাত চক্রের সদস্যরা। ফাইন্যান্স টাওয়ারের অবস্থিত ল’ ফার্ম এবং মাল্টি এসোসিয়েশনের জেনারেল ম্যানেজার শাহাদাত তার ক্লায়েন্টের ৭১ লাখ টাকা জমা দেয়ার জন্য ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। ক্যাফে সুগন্ধা হোটেলের সামনে পৌঁছলে তাকে আটকে গাড়িতে তুলে নিয়ে ৭১ লাখ টাকা, মোবাইল, মানিব্যাগসহ সব নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় ডিবি’র হাতে গ্রেপ্তার হয় চক্রের পাঁচ সদস্য।

১৯শে মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, সাধারণ মানুষ যাতে ঈদের সময় তাদের গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছাতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে ১১ই মার্চ ঢাকা মহানগর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশেষ সমন্বয় সভা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এ সভায় পবিত্র রমজানজুড়ে রাজধানীতে তিনস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। আসন্ন ঈদুল ফিতরে নিরাপত্তায় ২৯শে মার্চ রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে র‌্যাব-৩। চালু করা হয়েছে হটলাইন নম্বর। কন্ট্রোল রুম থেকে যাত্রীরা যেকোনো আইনগত সহায়তার পাশাপাশি জাল টাকা শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন সেবা নিতে পারবেন। র‌্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে বরাবরই আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। যেহেতু ঈদকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় লোকজনের চলাচল বেড়ে যায়।

অনেকে আগেভাগেই তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়। এ সবকিছু মাথায় রেখে র‍্যাব নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। ঈদকে ঘিরে যারা জাল নোটের কারবার করে তাদের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখছে র‍্যাব। র‌্যাব’র সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক অনলাইনে নজরদারি করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, রমজানের আগে থেকে আমরা সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেই রমজান মাসের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি। আমাদের মার্কেট-কেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নানাবিধ অপরাধ ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে মনিটরিং টিম। বড় বড় শপিংমল, জুয়েলারি দোকান, ফুটপাথ, রাস্তা-ঘাট সব জায়গায় নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে আরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হবে। এবং ঈদের পরবর্তী সময়েও স্পেশাল সিকিউরিটিসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও কঠোর সতর্ক অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

https://mzamin.com/news.php?news=103967