সাতটি ফ্লাইওভার ওভারপাস চালু হওয়ায় রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত কোনো মোড়ে আর গাড়ি থামতে হয় না। ফলে এই পথে সিগন্যালে না আটকে যানবাহন চলার কথা। কিন্তু বিশৃঙ্খলার কারণে ফ্লাইওভার ওভারপাসে ওঠা এবং নামার পথে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ হলেও ওভারপাস থেকে নামার পথ আটকে থাকে অটোরিকশা, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ বারোয়ারি যানবাহনে। পথে পথে বসে বাজার। তাই উড়াল পথ চালু হলেও বিমানবন্দর থেকে চৌরাস্তা মাত্র ১৬ কিলোমিটার যেতে গত বৃহস্পতিবার সময় লাগল ঘণ্টাখানেক।
শুধু ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এ অংশ নয়, দেশের অন্যান্য মহাসড়কে উন্নয়নের সুফলও মিলছে না বিশৃঙ্খলায়। মহাসড়ক আগের তুলনায় ভালো থাকলেও এবারের ঈদযাত্রাতে ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে। সরকারি ছুটিতে পরিবর্তন ভোগান্তির শঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। ভয় রয়েছে সেতু, সড়ক এবং ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা নিয়ে। টোল আদায়ের গতি ধীর হলে দীর্ঘ যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
এবারই প্রথম ২৯ রমজান পর্যন্ত অফিস খোলা থাকতে পারে। এতে শেষ সময়ে মহাসড়কে একসঙ্গে সব যাত্রীর ঢল নেমে যানজট হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এ ছাড়া সড়কে চলমান উন্নয়নকাজ, গণপরিবহন সংকট ভোগান্তিকে নিতে পারে চরমে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সারাদেশে মহাসড়কের ১৫৫টি স্থানকে যানজটপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতি নামে বেসরকারি সংস্থার ভাষ্য, যানজট হতে পারে ৭১৪ স্পটে। সওজ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সড়কের পাশে কলকারখানা, বাজার, যত্রতত্র ইউটার্ন, যাত্রী ওঠানামা, সরু ও ভাঙাচোরা সড়কের কারণে যানজট হতে পারে এসব স্থানে।
তবে সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী দাবি করেছেন, ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে। তিনি সমকালকে বলেছেন, মহাসড়কে যেসব সমস্যা রয়েছে, তা চিহ্নিত করে সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
স্বল্প ছুটি আর বৃষ্টিতে ভয়
গত দুই বছর দীর্ঘ ছুটির কারণে ঈদুল ফিতরে তুলনামূলক নির্বিঘ্ন ছিল মহাসড়ক। গত বছর ২৩ এপ্রিল ঈদ উদযাপিত হয়। এর আগের দুই দিন ছিল ছুটি। ১৯ এপ্রিল ছিল শবেকদরের ছুটি। মাঝে এক দিন ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ছিল কর্মদিবস। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাহী আদেশে ২০ এপ্রিলকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন।
ঈদের আগের ৪ দিন ছুটি থাকায় ধাপে ধাপে যাত্রীরা শহর ছাড়ে। এতে ভোগান্তি কম হয়। কিন্তু ২৮ রমজান বিকেলে কলকারখানা ছুটির পর মহাসড়কে যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। ফলে ওই দিন সন্ধ্যা থেকে পরের দিন বিকেল পর্যন্ত যানজট হয়েছিল ঢাকা-উত্তরবঙ্গের গাবতলী থেকে এলেঙ্গা অংশে। ভোগান্তি ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশেও। দুর্ভোগ ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। প্রতিবছর ২৮ রমজান অফিস শেষে ঈদের ছুটি শুরু হয়। সে হিসাবে এবার ৮ এপ্রিল অফিস শেষে ছুটি শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী এ বছর ২৯ রমজান তথা ৯ এপ্রিল অফিস-আদালত খোলা। ১০ এপ্রিল থেকে ছুটি। পরের দিন ঈদ।
আগামী ৫ এবং ৬ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি। ৭ এপ্রিল শবেকদরের ছুটি। কিন্তু মাঝে ৮ ও ৯ এপ্রিল খোলা। দুই দিন কর্মদিবস থাকায় যাত্রীর বড় অংশ আগেভাগে শহর ছাড়তে পারবে না। ৯ এপ্রিল বিকেল থেকে চাপ বাড়বে সড়কে। ছুটি কমে যাওয়ায় একসঙ্গে যাত্রীর চাপ সড়কে পড়লে যানজটের ভোগান্তি অবধারিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, ছুটি না বাড়লে যানজট বাড়বে।
এবার চৈত্র মাসে নিয়মিত বিরতিতে বৃষ্টি হচ্ছে। এতেও ভয় আছে। বৃষ্টি বাড়লে মহাসড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। ঈদযাত্রায় বৃষ্টি হলে যানবাহনের গতি কমে যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা-উত্তরবঙ্গ পথে এবারও ভয়
ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি যাত্রীর ঢল নামে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে। রাজধানীর গাবতলী থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ককে আরও প্রশস্ত করা হয়েছে। ব্যস্ত এলাকায় ধীরগতির গাড়ির প্রবেশ ঠেকাতে দেওয়া হয়েছে ব্যারিয়ার। গাজীপুরের ভোগড়া থেকে চন্দ্রা হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক গত ঈদেই দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে রংপুর পর্যন্ত অনুরূপ মহাসড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।
সওজ জানিয়েছে, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ৫২টি স্থান যানজটপ্রবণ। তার পরও ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে বলে সরেজমিন ঘুরে জানিয়েছেন সমকালের প্রতিনিধিরা।
সিরাজগঞ্জ থেকে আমিনুল ইসলাম খান রানা জানান, প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এলেঙ্গা-রংপুর মহাসড়কে (সাসেক-২) সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড়ে ৭৬১ কোটি টাকায় ‘ক্লৌভারলিফ ইন্টারচেঞ্জ ফ্লাইওভার’ নির্মাণ এখনও চলছে। ওই এলাকায় খানাখন্দ রয়েছে সড়কে। নির্মাণসামগ্রী সড়কে স্তূপ করে রাখায় চলার পথ সংকুচিত হয়েছে।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দিয়ে সিরাজগঞ্জ হয়ে উত্তর-দক্ষিণের ২২ জেলার যান চলাচল করায় সারা বছরই চাপ থাকে। বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষণাবেক্ষণ দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার যানবাহন সেতু পারপার হয়। ঈদের সময় তা বেড়ে ৫০ হাজারে দাঁড়ায়।
গত বছর ঈদুল আজহার আগের চার দিনে সেতুতে ৫৭ বার টোল আদায় বন্ধ হয়েছিল। অর্থাৎ, সেতুতে গাড়ি প্রবেশ বন্ধ ছিল। তখন ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা ১৬ মিনিট টোল আদায় বন্ধ ছিল, যা মোট সময়ে ১৮ শতাংশ। এতে দীর্ঘ যানজট হয়েছিল উত্তরবঙ্গের পথে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার অংশের এক কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়নি। এতে যানজট হতে পারে। হাটিকুমরুল মোড় থেকে জেলার চান্দাইকোনা বাজার পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার অংশেও কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। হাটিকুমরুল, ঘুড়কা, ভুঁইয়াগাঁতী ও চান্দাইকোনা অংশে দুটি লেন পুরোপুরি চালু থাকলেও বাকি দুই অংশ অসম্পূর্ণ। সওজের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, এসব কারণে যানজট হতে পারে।
সৈয়দপুর থেকে সিরাজগঞ্জগামী সোনার মদিনা বাসের চালক বাবু মিয়া জানান, হাটিকুমরুল মোড় থেকে চান্দাইকোনা, গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী এলাকায় চার লেন রাস্তার কাজে ধীরগতি রয়েছে।
রংপুর-সিরাজগঞ্জগামী জেনিন বাস সার্ভিসের সুপারভাইজার সেলিম আহম্মেদ বলেন, নির্মাণকাজ ছাড়াও পলাশবাড়ীতে মহাসড়কের পাশে প্রতি সপ্তাহের দু’দিন কলারহাট বসায় যানজট হয়।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি আবদুর রহিম জানান, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। বাকি পথ চার লেনের হলেও সড়কে এই অংশটি দুই লেনের। আবদুল মোনেম লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই অংশ চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ করছে। চার বছর আগে কাজ পেলেও এখনও ২০ ভাগও শেষ হয়নি।
এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নূর এ আলম সিদ্দিকী বলেন, এবার কিছুটা যানজটের শঙ্কা রয়েছে। বাসস্ট্যান্ডের ফুট ওভারব্রিজটি ভেঙে ফেলার কারণে মানুষের পারাপারে সময় লাগবে। ফলে যানজট ও ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি হতে পারে।
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টাঙ্গাইল উত্তর) রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের সুবিধা থাকায় গাড়িগুলো দ্রুতগতিতে আসে। কিন্তু এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেন থাকায় ধীরগতিতে চলে। পাশাপাশি থাকে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ। এ ছাড়া সড়কে যানবাহন বিকল হওয়ার কারণে রেকার ঢুকতেও সমস্যা হয়। ফলে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে নির্বিঘ্নে যাতে যানবাহন চলাচল করতে পারে তার সব ব্যবস্থাই পুলিশ করবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, গত ঈদে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী যানবাহন সেতু পার হয়ে ভূঞাপুর লিংক রোড ব্যবহার করে এলেঙ্গা হয়ে ঢাকা যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ কমে অনেকটা সুফল মিলেছিল। এবারও মহাসড়কের ওই অংশটুকু যানবাহনের জন্য একমুখী করা হবে। মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি এম তুষারী জানান, এবারও উত্তরাঞ্চলের প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানজট হতে পারে। গাজীপুর থেকে যানবাহন চন্দ্রা ফ্লাইওভার দিয়ে পশ্চিমপাশে গিয়ে উত্তরাঞ্চলগামী লেনে যায়। আবার ঢাকা-সাভার মহাসড়কের গাড়ি একই লেনে যায়। এর সমাধান না হওয়ায় এবারও ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য, ঈদের এক দিন আগে গাজীপুর, কোনাবাড়ী, সফিপুর শিল্পাঞ্চল ও সাভার, আশুলিয়া এলাকার শত শত তৈরি পোশাক কারখানা একসঙ্গে ছুটি হলে কয়েক লাখ শ্রমিক সড়কে নামবেন। এতে যানজট নিশ্চিত।
বিনিময় পরিবহনের চালক রাজু মিয়া বলেছেন, প্রতিবার চন্দ্রায় ভুগতে হয়। চন্দ্রা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী লেনে নতুন সড়ক বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে যানজট বেড়েছে।
নাওজোর হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শাহাদাত হোসেন বলেন, পুলিশ সড়কে থাকবে, কিন্তু হাজার হাজার শ্রমিক একবারে সড়কে নামলে তো যানজট হওয়ার আশঙ্কা থাকবেই।
ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে ভোগাতে পারে টোল
কুমিল্লা প্রতিনিধি মো. কামাল উদ্দিন জানান, মহাসড়কের অবস্থা ভালো হলেও চট্টগ্রামের পথে ভয় টোল প্লাজার ধীরগতি নিয়ে। প্রতি ঈদযাত্রায় গোমতী ও মেঘনা টোল প্লাজায় আটকে পড়ে যানবাহন। এ ছাড়া ঈদের সময় তল্লাশির নামে গাড়ি থামিয়ে হয়রানি ও টাকা আদায় করায় যানজট বাড়ে।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ঈদে মহাসড়কে যাত্রীবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও গাড়ি পার্কিংয়েও ভোগান্তি বাড়ে। কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজা, গৌরীপুর বাজার, চান্দিনার মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, বুড়িচংয়ে নিমসার বাজার, ক্যান্টনমেন্ট মোড়, সদর দক্ষিণ থানার সামনের ইউটার্ন, পদুয়ারবাজার বিশ্ব রোড ও চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় এ কারণে যানজট হতে পারে বলে সওজের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের কার্যকরী সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, গোমতী ও মেঘনার টোল প্লাজাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের অন্যতম পয়েন্ট।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, যানজট নিরসনে নানা উদ্যোগ রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্য যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সওজের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, সড়কে মেরামতযোগ্য বড় সমস্যা নেই।
ঢাকা-সিলেট রুটেও ভোগান্তি
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জিয়াউর রাশেদ জানান, রূপগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১৪ কিলোমিটারে ভোগান্তি হতে পারে ঈদযাত্রায়। গতকাল শুক্রবারও রূপগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কে যানজট হয়। ঈদযাত্রায়ও এ দুই মহাসড়কের ১৫টি স্পটে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। ঈদের আগেই রূপসী, বরাব, বরপা, ভুলতা, যাত্রামুড়া, বিশ্বরোড, তারাবসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যানজট লেগেই থাকছে।
ভৈরবগামী বাসের যাত্রী ইমরান হোসেন বলেন, তীব্র যানজটে পড়ে বিশ্বরোড থেকে ভুলতা যেতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা।
ঢাকা-ময়মনসিংহেও দুর্ভোগের শঙ্কা
গাজীপুর প্রতিনিধি ইজাজ আহ্মেদ মিলন জানান, ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হতে পারে গাজীপুরের শিল্পঘন এবং বাজার এলাকায়। সওজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজীপুর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ছয়টি স্পটে যানজট হতে পারে।
বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত নির্মাণাধীন বাসের জন্য বিশেষায়িত লেনের (বিআরটি) ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় যানজট হতে পারে। বিআরটি প্রকল্পে নকশায় ত্রুটির কথা বলেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর অভিযোগ, বিআরটির বাস নির্বিঘ্নে চললেও নিচে যানজট বাড়বে।
বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহগামী হাজার হাজার গাড়ি আটকে আছে। ঢাকাগামী ফ্লাইওভারের ওপরে শত শত গাড়ি। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য বলেন, ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত অংশে কাজ চলছিল।
দেশের ৭৫ শতাংশ শিল্পকারখানা গাজীপুরে। ঈদের সময় এই এলাকায় স্বাভাবিক সময়ের ১০ গুণ যানবাহন সড়কে নামে। টঙ্গী বাজার, সেনাকল্যাণের সামনে, স্টেশন রোড, থানা গেট, হোসেন মার্কেট, বোর্ডবাজার, ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে মহাসড়কে রয়েছে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার। এসব কাউন্টারে বাস যাত্রীদের ওঠানামা করানো হয় মহাসড়কেই।
বিআরটি প্রকল্পের কারণে মহাসড়কের কোথাও তিন লেন, আবার কোথাও দুই লেনে পরিণত হয়েছে। এতে ওই পথে যানবাহন খুবই ধীর গতিতে চলছে। গাছা রোড, মালেকের বাড়ি, বোর্ড বাজার, কুনিয়া বড়বাড়ি এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের স্টেশন তৈরির কাজ অব্যাহত থাকায় সেখানে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এসব চিহ্নিত কয়েকটি কারণেই মহাসড়কে গাজীপুর অংশে যানজটের শঙ্কা থেকেই যায়।
চৌরাস্তার পর মহাসড়কে বাকি পথে সালনা, এমসি বাজার, নয়নপুর, বাগেরবাজার, জৈনা এলাকায় সড়কের পাশে বাজার বসে। এতে মহাসড়কের গাড়ি আটকে যায়। রমজানের শুরুতে শ্রীপুরে উচ্ছেদ অভিযান চললেও, ফল হয়নি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীর হোসেন বলেন, আর্মড পুলিশও থাকছে যানজট মোকাবিলায়। মহাসড়কে পানি জমে গেলেও ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হবে না। সড়কের দু’পাশের ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা হবে।