২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ১২:২৮

বঙ্গবাজার

আগুনের ক্ষত নিয়ে ধুঁকছে

ঢাকার বঙ্গবাজার। পাইকারি পোশাকের বড় মার্কেট। দিনে কোটি টাকার ব্যবসা হতো। ঈদের আগে ব্যবসা বাড়তো কয়েকগুণ। তবে সেই জমজমাট বঙ্গবাজার এখন আর নেই। আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছিল গত বছর। তার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বঙ্গবাজারে বাঁশের খুঁটি, শামিয়ানা টানিয়ে চৌকি পেতে দোকান করছেন তারা। তবে সেখানে ক্রেতার দেখা নেই। পাইকারি বিক্রি তো হয়ই না, খুচরা ক্রেতারাও আসছেন না তেমন।

ব্যবসার পুঁজি হারানো বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা এখন ধুঁকছেন। রোববার বঙ্গবাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
আঙ্গুলের কর গুনে বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডের সময়ের হিসাব কষছিলেন কাউসার আহমেদ। রোববার ১৩ রোজা শেষ হলো। ২০২৩ সালে ১২তম রোজার দিনে আগুন লাগে বঙ্গবাজারে। সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানান তিনি। আর টি ফ্যাশন নামে দুইটা দোকান ছিল তার। দোকানে ৩৫ লাখ টাকার পণ্য ছিল। মেয়েদের পোশাক বিক্রি করতেন। অথচ এই বছর চিত্রটা পুরোপুরি ভিন্ন। শামিয়ানার নিচে চৌকিতে কিছু পণ্য সাজিয়েছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই। কাউসার বলেন, বেচাকেনা নাই বললেই চলে। এই সিজনে অনেক বিক্রি হতো। এই জায়গায় দাঁড়ানোর সুযোগ থাকতো না। কিন্তু এখন বেচাই হয় না। আগের বিক্রির ১০ শতাংশও বিক্রি নাই। অনেক টাকা ঋণ ছিল। তা এখনো টানছি।

তিনি বলেন, এখন দুই দোকানে ১৫-১৬ লাখ টাকার পণ্য তুলেছি। কিন্তু বিক্রি নাই। খুচরা বিক্রেতারা কম আসে। যাদের কাছে টাকা পেতাম তারা মার্কেটে আসে না। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। পাইকারি মার্কেটে অনেকে বাকি নেয়। সেই টাকাও তুলতে পারছি না। চাঁদ রাতে মার্কেটের মালামাল সরাতে বলা হয়েছে। আমরা কোথায় যাবো নিজেরাও জানি না। মার্কেট কবে হবে তা তো জানি না। এতদিনে কী হয় কে জানে। নিশাত ফ্যাশনের শরীফ খান বলেন, আগুনে মার্কেট পোড়ার পর আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখন বিক্রি করে যে ক্ষতি পোষাবো সেই সুযোগও নাই। মার্কেটে ক্রেতা নাই।

বঙ্গবাজারের আরেক ব্যবসায়ী মোর্শেদ আলমও একই কথা জানালেন। তারও গত বছর ৩০ লাখ টাকার পণ্য পুড়েছে আগুনে। মোর্শেদ বলেন, আগে প্রতিদিন ২-৩ লাখ টাকা বিক্রি হইতো। এখন ইফতারির টাকাও হয় না। যা ক্ষতি হইছে তা পোষাতে পারছি না। বঙ্গবাজারে কেনাবেচা কম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের এখানে এখন সব পণ্য পাওয়াও যায় না। সব পণ্য আমরা রাখতে পারছি না। আমাদের সেই চালানও নাই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফুলবাড়িয়ার বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের স্থানে ১০ তলা বিপণিবিতান নির্মাণ করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর জন্য ব্যয় হবে ৩৬৫ কোটি টাকা। আগামী মাসে এই বিপণিবিতানের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে যা শেষ হতে পারে ২০২৮ সালে। নির্মাণশেষে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা নতুন বিপনিবিতান মার্কেটে উঠতে পারবে। এর নির্মাণ ব্যয়ের পুরো টাকা দোকান মালিকদের কাছ থেকে নেয়া হবে। ডিএসসিসি’র তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের তথ্যে, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়েছেন। আগুনে ৩০৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, চলতি ঈদের আগের দিন তাদের দোকানের মালামাল সরাতে বলা হয়েছে। এরপর থেকে এখানে কাজ ধরা হবে। তবে বঙ্গবাজার নির্মাণকালীন সময়ে ব্যবসায়ীরা কী করবেন সেটা চিন্তা করছেন। একইসঙ্গে ঈদের আগে এবার বেচাকেনা না হওয়ায় তাদের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ পড়েছে। বঙ্গবাজারে ৯ বছর চাকরি করেছিলেন আকবর হোসেন সাজন। এরপর ঋণ নিয়ে নিজে দোকান দিয়েছেন ৩ বছর হলো। তিনি বলেন, গত বছর আগুনে পুড়ে আমার চালান সব গেছে। সেগুলোর ধার শোধ করতে পারছি না। বাসা থেকে চালান আনতে পারছি না। সুদে যা ধার করেছি তাই দিতে পারছি না। আর এখন তো বিক্রি নেই। ‘বনি-বাট্টাও’ করা কঠিন হয়ে যায়। সারাদিন দোকানে বসে থাকি।

পূর্ণিমা গার্মেন্টসের কর্মচারী জুয়েল বলেন, এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। ইফতারের টাকাও হয় না। আগে আমাদের দুইটা দোকানে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দৈনিক বিক্রি হতো। এখন ২-৩ হাজার টাকাও হয় না। তিনি বলেন, নতুন মার্কেট করলে কে থাকে না থাকে জানি না। এমন হতে পারে রাস্তায় অটো চালাচ্ছি। এ ছাড়া আর কী করার আছে। ফারজানা ফ্যাশনের রাজন বলেন, খুচরা বিক্রেতারা আসছে না। তারা না আসলে তো আমাদের বিক্রি হবে না। মার্কেটেও ভেঙে দেবে। শুক্রবার ২০০ টাকা বিক্রি করছি। শনিবার ১ হাজার টাকার মতো বিক্রি করছি। কাস্টমার তো নাই। দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি মানুষ খাইবে না কি পোশাক কিনবে। আড়ং ট্রেডিংয়ের মনোয়ার হোসেন নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগে ২০-৩০ হাজারের মতো বিক্রি করতাম। এখন তো কিছুই হয় না। খুচরা বিক্রেতারা মনে করে মার্কেট পুড়ে গেছে, আমরা আছি না নাই। সব ক্রেতা অন্য মার্কেটে চলে গেছে।

https://mzamin.com/news.php?news=103160