২৪ মার্চ ২০২৪, রবিবার, ৩:৪৯

দর্জিপাড়ায় আগের আমেজ নেই

একসময় ছিল যখন ঈদ মানেই নতুন কাপড়। আর তার জন্য নির্ভরতার সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিলেন দর্জি। যেখানে মানুষ নিজের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় তৈরিতে করাতেন। কিন্তু সময়ের সাথে মানুষের রুচি বদলেছে। তাই ঈদ ঘিরে এখন দর্জিপাড়ায় ব্যস্ততা থাকলেও সেই আগের আমেজ নেই। যুগের সাথে মানুষের রুচির পরিবর্তনে তাল মেলাতে না পারায় টেইলার্সে মানুষের নির্ভরতা কমেছে। ফলে দিন দিন এখন বানানো পোশাকের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর পাঞ্চাবি তৈরির সবচেয়ে বড় মার্কেট মালিবাগ হোসাফ টাওয়ার। আগে সেখানে প্রতিটি থান কাপড়ের দোকানে ও টেইলার্সগুলোতে থাকতো ব্যাপক ব্যস্ততা। একই অবস্থা ছিল দর্জিপাড়া হিসেবে খ্যাত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের রমনা ভবন, মৌচাক মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, রাজধানী সুপার মার্কেট, ফার্মগেট, নীলক্ষেত ও গাউসিয়া মার্কেটের প্রতিটি দোকান ও টেইলার্স।

টেইলার্সে কর্মরতরা জানান, একসময় ছিল যখন রমজানের আগে থেকেই মানুষ ঈদ পোশাক তৈরিতে দর্জি দোকানের দ্বারস্থ হতেন। তাতে করে গোটা রমজান মাস দর্জি দোকানিদের সীমাহীন ব্যস্থতায় কাটাতে হতো। আর মধ্য রমজান থেকেই রাতদিন বিরতিহীনভাবে পোশাক সেলাইর কাজ চলত; কিন্তু সময়ের সাথে সেই ঐতিহ্য এখন মানুষ ভুলতে বসেছে। ফলে এখন ঈদ ঘিরে সব ব্যস্থতা মার্কেট-বিপণি বিতানকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আর এতে করে কাজের অভাবে অনেক টেইলার্স দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

টেইলার্স মালিকদের ভাষ্য, যুগের পরিবর্তনে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। ফলে প্রতি বছরই রেডিমেট পোশাকে নতুন নতুন ডিজাইন আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো। তারা সারা বছরই সবধরনের পোশাকে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করছে। যা কোনো টেইলার্সের পক্ষে সম্ভব নয়। এতে করে মানুষ ধীরে ধীরে তৈরী পোশাকে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে দিন দিন দর্জি দোকানের চাহিদা কমছে। গতকাল রাজধানীর একাধিক দর্জি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোনো দোকানে অর্ডার নেয়ার কাজ চলছে। কেউবা বানানো পোশাকে বোতাম বসাচ্ছেন। অনেকে আবার ব্যস্ত কাপড় সেলাইতে। এভাবে করেই প্রতিটি দোকানে নতুন জামা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দর্জিরা। তবে বর্তমান সময়ে এ ব্যস্ততা অতীতের সময়ের তুলনায় খুবই সামান্য বলে জানালেন একটি টেইলার্সের মাস্টার সুমন। তিনি জানান, আগে রাতদিন কাজ করেও ফুসরত মিলত না। আর এখন তার বিপরীত। ঈদ আছে, মানুষও আছে; কিন্তু টেইলার্সে অর্ডর নেই।

টেইলার্স মালিক ইমন জানান, এখন যারা আমাদের কাছে আসেন, তারা মনের দিক থেকে একেবারে ভিন্ন। রেডিমেট কাপড়ে তারা স্বস্তি পান না বলেই নিজের মতো করে তৈরিতে এখানে আসেন, যার সংখ্যা খুবই অল্প।

তিনি জানান, আগে নামমাত্র টাকায় সেলাই হতো। আর এখন সেলাইয়ের পারিশ্রমিকও বেড়েছে। এখন বলা যায় যে, সেলাই করতে যে পারিশ্রমিক দেবেন তাতে হয়তো আপনি একটা রেডিমেট জামা কিনতে পারবেন। এসব কারণেও কাস্টমার কমেছে।

তিনি বলেন, সেলাইয়ের দাম আগের চেয়ে একটু বেড়েছে। ডিজাইন ও কাপড়ের মান ভেদে দাম আলাদা হয়ে থাকে। বর্তমানে মেয়েদের জামা ৪০০ থেকে ৭০০। গাউন এক হাজার থেকে এক হাজার ৬০০। সুতি থ্রিপিস কাপড় ভেদে সাড়ে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা। অন্য দিকে ছেলেদের শার্ট ৪০০ টাকা থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। প্যান্ট ৬০০ টাকা মজুরি নেয়া হচ্ছে। আর পাঞ্জাবির মজুরি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। পায়জামা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/823742