২৩ মার্চ ২০২৪, শনিবার, ৯:৪৯

পুঁজিবাজার থেকে চলে গেল ৩৬ হাজার ৭১১ কোটি টাকা

দরপতন খাদ্য খাতের ২.৫৮ শতাংশ ও লেনদেন ৩৮.৪৪ শতাংশ

সপ্তাহ শেষে কিছুটা ইতিবাচক পথে বা স্বস্তিতে ফিরলেও পুঁজিবাজার থেকে চলে গেলো আরো ৩৬ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা স্টকে তারল্য কমেছে ৩৪ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার বেশি। লেনদেনও অনেক কমেছে। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টকের ২০ খাতের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫ খাতের এবং দাম কমেছে ১৫ খাতের। তবে সবচেয়ে বেশি দরপতন খাদ্য খাতের শেয়ারের। যে কারণে এ খাতের বিনিয়োগকারীরা সাপ্তাহিক রিটার্নে সবচেয়ে বেশি লোকসানে রয়েছে। এ খাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমেছে ২.৫৮ শতাংশ। আর এই ইতিবাচক পথে কতটা দিন থাকবে সেটাই বড় প্রশ্ন। আবারও যদি পতনের পতেই চলা শুরু করে তাহলে এই স্বস্তির ভেতরেই অস্বস্তি।
পুরো সপ্তাহের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইতে এসএমই সূচক ও ডিএসই-৩০ সূচক বাড়লেও প্রধান সূচক সিএসইএক্স এবং শরিয়াহ সূচক আরো কমেছে। ডিএসইএক্স কমেছে ২৬.৩৮ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ৬.৭৭ পয়েন্ট। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৬.১৪ পয়েন্ট এবং এসএমই সূচক ১০.৫৪ পয়েন্ট বেড়েছে। গড়ে প্রতিদিন টাকায় লেনদেন কমেছে ১১.১৮ শতাংশ। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে এক হাজার ৯৮৫ কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল লেনদেনে হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে বেচাকেনা হয়েছিল দুই হাজার ৭৯৩ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার টাকার। শেয়ার লেনদেনের পরিমাণও আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ২১ কোটি কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৫টি কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের শিকার ২২৯টি। আর দর বৃদ্ধিতে ছিল ১৩৩টি। তবে দর অপরিবর্তিত ৩৩টির এবং লেনদেনে অংশ নেয়নি ১৭টি কোম্পানির শেয়ার। তবে ব্লক মার্কেটে গেলো সপ্তাহে ১৩০ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার এবং এসএমই মার্কেটে ৫৬ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে বলে ডিএসইর দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে।

খাতভিত্তিক দরপতনের শিকার হয়েছে, টেলিযোগাযোগ খাতের শেয়ারদর কমেছে ২.০৪ শতাংশ, জীবন বীমা খাতে ১.৯৮ শতাংশ, আর্থিক খাতে ১.৪০ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১.০২ শতাংশ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ০.৮৬ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ০.৮৪ শতাংশ, পাট খাতে ০.৮১ শতাংশ, চামড়া খাতে ০.৬৪ শতাংশ, ফার্মা ও রসায়ন খাতে ০.৬৩ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে ০.৪৫ শতাংশ, সাধারণ বীমায় ০.৪৪ শতাংশ, বস্ত্র খাতে ০.২৭ শতাংশ এবং বিবিধ খাতে ০.১৪ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে।

বাজার নিয়ে এক পর্যালোচনায় রয়েল ক্যাপিটাল পোর্টাল বলছে, সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে সামান্য ক্রয় চাপ লক্ষ্য করা গেলেও পুরো সপ্তাহে প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ০.৪ শতাংশ কমেছে। সুদ হারের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি এবং তারল্য সঙ্কট বিনিয়োগকারীদের তাদের বিনিয়োগ কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে প্ররোচিত করেছে। বেশির ভাগ সেক্টরই নিম্নমুখী অবস্থানে শেষ হয়েছে। অন্য দিকে, গড় টার্নওভার ১১.১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে ৭টি সেক্টর এই সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে টপ গেইনার ছিল সিমেন্ট, ভ্রমণ ও সিরামিকস। ১১টি সেক্টর এই সপ্তাহে হ্রাস পেয়েছে, যার মধ্যে টপ লুজার ছিল খাদ্য, পাট এবং জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ খাত। মূল্য ও লেনদেনের দিক থেকে সার্বিকভাবে গোল্ডেন সন সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। সপ্তাহের শেষে এসপি সিরামিকসের দর সর্বাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ইসলামী ব্যাংক বন্ড বা আইবিবিএলের দর সর্বাধিক হ্রাস পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে বাজারের সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পাশাপাশি কম পরিমাণে লেনদেন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টকে সবগুলো সূচকই পয়েন্ট হারিয়েছে গেলো সপ্তাহে। সিএএসপিআই ১৫৩.১৮ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৪২.৯৫ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স ৯৩.৭৮ পয়েন্ট হারিয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩১২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১০৪টির, দরপতনে ১৮৮টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২২টির। দুই কোটি সাত হাজার ৮০৭টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে ৬৬ কোটি এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৮ টাকা বাজারমূল্যে। লেনদেনে বাজার অংশীদারিত্বে ছিল এ শ্রেণীর কোম্পানির ৪৮.১২ শতাংশ, বি শ্রেণীর ২৪.০৬ শতাংশ, এন শ্রেণীর ২৫.৪৭ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর কোম্পানির ২.৩২ শতাংশ। গত সপ্তাহের নেতিবাচক পরিস্থিতিতে বাজারমূলধন করেছে এক হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/823457