২২ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ৪:৩২

যানজটে স্থবির রাজধানী

পবিত্র রমজান মাসে সড়কে তীব্র যানজট। দুপুর থেকেই রাজধানীতে যানবাহনের জটলা তৈরি হয়। বিকাল গড়াতেই বাড়ে এর মাত্রা। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। একদিকে গরম আর অন্যদিকে যানজটের কারণে রোজা রেখে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। রোজায় যানজটের তীব্রতা ঠেকাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগও কাজে আসছে না। বিকাল ৩টার পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত স্থবির হয়ে পড়ছে ঢাকার সড়ক। দুপুর থেকে শুরু হওয়া যানজট সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। ইফতারের আগ পর্যন্ত যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। রাজধানীর আজিমপুর, কামরাঙ্গীরচর, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, মগবাজার, বাংলামোটর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, মিরপুর, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার, তেজগাঁও, মহাখালী, আমতলী এলাকাসহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সড়কে আটকে থাকে হাজার হাজার গাড়ি।
যানজটের মাত্রা এতই অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গন্তব্যে পৌঁছাতে কয়েক কিলোমিটার পথও মানুষ হেঁটে যাচ্ছে।

বুধবার বিকালে মৌচাক থেকে ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে এম এম লাভলী পরিবহনে উঠেন মামুনুর রহমান। যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে বাংলামোটরেই নেমে পড়েন তিনি। যানজটের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, মৌচাকের পর থেকেই যানজটে আটকে আছি। এখানে সিগন্যাল সহজে ছাড়ে না। বাংলামোটরেও একই অবস্থা। দেড় ঘণ্টা তো এখানেই শেষ। তাই এখন নেমে হেঁটে যাচ্ছি। ফার্মগেট হেঁটে যেতে ১৫-২০ মিনিটের বেশি লাগবে না। কিন্তু বাসে ঘণ্টাও পার হয়ে যেতে পারে। বাংলামোটরের আগে মগবাজার ফ্লাইওভারে নিজ বাইকে যানজটে আটকে ছিলেন শিশির হোসেন। বলেন, বিকালে ফ্লাইওভারের ওপর থেকেই এখানে যানজট হয়। বাইক নিয়ে বাংলামোটর সিগন্যাল পার হতেই তিন-চার বার সিগন্যালে পড়তে হয়।

মেট্রোরেলের যাত্রীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও নিচের সড়কে রোজার মাসে যানজট দেখা যাচ্ছে। বিকালের সময় গাড়ির দীর্ঘ সারি থাকে মেট্রোরেলের রুটেও। এ ছাড়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যেতে পারলেও ডাউন র‌্যাম্পগুলোর মুখে যানজট বাড়ে। ফার্মগেট, মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় বিকালে যানজট সৃষ্টি হয়। এদিকে গতকাল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওরান বাজার অংশের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) সংলগ্ন র‌্যাম্প (নামার রাস্তা) খুলে দেয়া হয়। উদ্বোধনের আগে রোজার মাসে সড়কের যানজট প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রমজানে যানজট একটু থাকবেই। তবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত তো যানজট হচ্ছে না। মানুষ কম সময়ে যাচ্ছে। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আছে। আস্তে আস্তে ঠিক হবে।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী ইমরান হোসেন। কাওরান বাজার থেকে মিরপুর-১০ যাওয়ার জন্য বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে গাড়ির জন্য সড়কে অপেক্ষা করেন। পরে আয়াত পরিবহনে ৫টার দিকে উঠেছেন। যানজট ঠেলে তার বাসায় পৌঁছাতে ৬টা বেজে যায়। ইমরান বলেন, ইফতারে দাওয়াত ছিল তাই একটু আগেই অফিস থেকে রওনা দিয়েছিলাম। কিন্তু ৩০ মিনিটের চেষ্টায়ও গাড়িতে উঠতে পারি নাই। পরে একটা গাড়িতে উঠেছি। ৩০ মিনিটের রাস্তা দুই ঘণ্টার বেশি লেগেছে বাসায় পৌঁছাতে। পরে আর দাওয়াতে যাওয়া হয়নি। রমজানে সরকারি অফিসের সঙ্গে স্কুল-কলেজও ছুটি হয় বিকাল সাড়ে ৩টায়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছুটি হয় বিকাল ৪টায়। সবাই ইফতারের আগে ঘরে ফেরার তাড়ায় থাকেন। এতে বিকালের এই সময়ে সব জায়গাতেই পরিবহনের চাপ থাকে। যার কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক বিভাগকে। রমজানে যানজট ঠেকাতে বিকাল ৩টা থেকে ৪ ঘণ্টা সড়কে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ডিএমপি। তবে তাতে খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না পরিস্থিতির। ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, দুই দিন ফার্মগেটে আর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকেন্দ্রিক প্রোগ্রাম ছিল; তাই যানজটটা বেশি ছিল। মঙ্গলবার হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে বিকল অবস্থায় ছিল। তাছাড়া রোজার সময় অফিসের সময় শেষ হচ্ছে সাড়ে ৩টায়। তখন একসঙ্গে সব মানুষকে গন্তব্যে যেতে হয়। এরমধ্যে কোনো প্রোগ্রাম থাকলে চাপ বেড়ে যায়। ঢাকায় তো বিকল্প রাস্তা নেই। তাই সীমিত রাস্তা দিয়েই সবগুলো গাড়ি আসে- যায়। তিনি বলেন, মানুষকে গন্তব্যে যেতে যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে বের হওয়া উচিত। যাতে রেশনিং করে আমরা বিভিন্ন ডাইরেকশনে প্রায়োরিটি ভিত্তিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।

https://mzamin.com/news.php?news=102723